এত দিন বাম ও কংগ্রেসের যা স্কোর ছিল, তা এক করলে দাঁড়ায় ৯-এ ৫। তৃণমূলের স্কোর ৪। তবে রবিবার নির্বাচনপর্ব শেষ হওয়ার পর ঘরে-বাইরে এমনটাই দাবি করতে শুরু করেছেন উত্তর দিনাজপুর জেলার কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের নেতারা। এখন তাঁদের স্লোগান ‘জেলায় এ বার মানুষের জোট ৯-এ ৯।’
কিন্তু তৃণমূলের পাল্টা দাবি, স্কোর বাড়তে চলেছে। শাসক দলের পাল্টা স্লোগান, ‘তৃণমূলই ৯-এ ৯’।
তবে জোটের নেতাদের দাবির মুখে এই পাল্টা দাবি করা হলেও, সত্যিই তাঁরা ক’টা আসন পাবেন, তা নিয়ে শাসক দলের অন্দরে মতপার্থক্য রয়েছে। বরং এ দিন দিনভর কংগ্রেস-বাম নেতাদের এক সঙ্গে আত্মবিশ্বাস ও স্বস্তি নিয়ে নির্বাচন করাতে দেখা গিয়েছে। রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ ও ইটাহার বিধানসভার বিভিন্ন বুথের বাইরে নির্বাচনী কার্যালয়গুলিতে বাম ও কংগ্রেস কর্মীদের ভিড় উপচে পড়েছিল। তাঁদের উত্সাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড়ে কংগ্রেস সমর্থককে মারধরের অভিযোগ থেকে সেবকপল্লি এলাকায় কংগ্রেসের এক সমর্থকের বাড়ির টিনের বেড়া ভাঙচুরের অভিযোগ কিংবা ইটাহারের একাধিক বুথের সামনে ভোটারদের ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ—সব ক্ষেত্রেই বাম ও কংগ্রেসের কর্মীদের এক সঙ্গে রাস্তায় নেমে শাসক দলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেখা গিয়েছে।
সেই তুলনায় বাম কংগ্রেস জোটের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার সে রকম কোনও সুযোগই পায়নি তৃণমূল। এমনকী, জেলা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান অপূর্ব পাল কিংবা জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত যেভাবে এ দিন রায়গঞ্জের এক বুথ থেকে অন্য বুথে চষে বেড়িয়ে জোটের সমর্থকদের সাহস জুগিয়েছেন, শাসক শিবিরে সেই দৃশ্য দেখা যায়নি। ইটাহারের তৃণমূল প্রার্থী তথা দলের জেলা সভাপতি অমল আচার্য অবশ্য গোটা ইটাহার চষে বেড়িয়ে দলের কর্মীদের মনোবল চাঙা রাখার চেষ্টা করেছেন। এ দিন সকালে অমলবাবু নিজের ভোট দিয়েই দিনভর কাপাসিয়া, রাধানগর, জামালপুর, টিটিহা, গৌরীপুরে ঘুরেছেন।
শাসক দলের পাল্টা দাবি, কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের ‘নীতিহীন জোট’কে সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারেননি। ফলে তৃণমূলের দখলে থাকা বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে জয় নিয়ে কোনও সংশয় নেই। চোপড়া ও করণদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিএম ও কংগ্রেসের নির্দল প্রার্থীরা নিজেদের দখলে একটি বড় অংশের ভোট টেনে তৃণমূল প্রার্থীদের জয় পাইয়ে দিতে সাহায্য করবেন। হেমতাবাদে সিপিএম বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ শাসক দলের প্রার্থীকে এগিয়ে রেখেছে। রায়গঞ্জে সমাজবাদী পার্টি ও বিজেপি বিপুল ভোট টেনে জোটপ্রার্থীকে বেকাদায় ফেলবে। কালিয়াগঞ্জে কংগ্রেসের প্রার্থী নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরেই ক্ষোভ রয়েছে। তাই সেখানেও তৃণমূল প্রার্থী ভাল ফল করবে বলে দাবি শাসক দলের।
জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ ও জেলা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান অপূর্ব পালের দাবি, জেলায় বাম কংগ্রেসের জোট প্রতিরোধে তৃণমূল সেভাবে সন্ত্রাস করে নির্বাচন করাতে ব্যর্থ হয়েছে। মানুষ এদিন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ইভিএম মেশিনে জোটপ্রার্থীদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘জেলায় তৃণমূল আর নয়, মানুষের জোট ৯য়ে ৯।’’ তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের পাল্টা দাবি, ‘‘বাম কংগ্রেস আর নয়, তৃণমূলই ৯য়ে ৯।’’