সরকার হচ্ছে, বিশ্বাস এখন জোটের মেজাজে

মাথায় রুমালের মতো করে জড়ানো লাল পতাকা। হাতে তেরঙা! কোদালিয়া থেকে আসা সিপিএম কর্মী বলছিলেন, ‘‘এখন আর কিচ্ছু ভাবছি না! যে সব আসনে ভোট বাকি, তৃণমূলকে লুঠতে দেওয়া যাবে না। তা হলেই এ বার জোটের সরকার!’’

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৫
Share:

কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী এবং অধীর চৌধুরীর সঙ্গে সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার বসিরহাটের সভায়। ছবি: নির্মল বসু।

মাথায় রুমালের মতো করে জড়ানো লাল পতাকা। হাতে তেরঙা! কোদালিয়া থেকে আসা সিপিএম কর্মী বলছিলেন, ‘‘এখন আর কিচ্ছু ভাবছি না! যে সব আসনে ভোট বাকি, তৃণমূলকে লুঠতে দেওয়া যাবে না। তা হলেই এ বার জোটের সরকার!’’

Advertisement

ইটিন্ডা থেকে আসা ট্রেকার থেকে নেমে লাল ছাতা হাতে যে কংগ্রেস কর্মী ভ্যাবলা হাইস্কুলের মাঠে ঢুকলেন, তাঁর সাফ কথা, ‘‘বিপদ বুঝে ওরা এখন মারদাঙ্গা শুরু করেছে। একজোট হয়ে আমাদের এ সব রুখতে হবে। কাগজে পড়লাম। মার খেয়েও সাধারণ মহিলা যদি নিজের ভোট নিজে দিয়ে আসতে পারেন, আমাদেরও পারতে হবে!’’

ঠা ঠা রোদে যে প্রত্যয়ে শনিবার বসিরহাটে রাহুল গাঁধীর জন্য অপেক্ষা করল জোট-জনতা, সেই আগ্রাসন ছড়াতে দেখা গেল মঞ্চে নেতাদের মধ্যেও! তৃণমূলকে রুখতে পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেসের সমঝোতা এমনিতেই অভিনব। নিজেদের তাগিদে নিচু তলা যে জোট বেঁধেছে, তাকেই মর্যাদা দিতে চাইছে দু’দলের নেতৃত্ব। রাজ্যে ভোট-পর্বের মাঝে এসে দেখা যাচ্ছে, কর্মী এবং নেতাদের পরস্পরকে আত্মবিশ্বাস জোগানোর প্রক্রিয়া আরও মসৃণ হয়েছে! নেতারা বলছেন, ১৯ মে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইস্তফা দিতে রাজভবন যেতে হবে! কর্মীরা সেই সুরেই তাল ঠুকে বলছেন, শাসকের আক্রমণ তাঁরা বুঝে নেবেন! নেতা ও নিচু তলার একে অপরকে ভরসা দেওয়ার ছবিরই সাক্ষী থাকল বসিরহাট। সেই সঙ্গে কিছুটা হাওড়ার শ্যামপুকুর ও গুলমোহর ময়দানও।

Advertisement

মোবাইলের অ্যাপ দেখাচ্ছে, তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। রোদ থেকে বাঁচতে ভ্যাবলার মাঠে ছাউনির ব্যবস্থা নেই। দু’দিন আগে ওই মাঠেই নরেন্দ্র মোদীর সমাবেশে যেমন ছিল। প্রখর সূর্যের নীচে চেয়ারে বসা আর শাস্তি ভোগ একই জিনিস! ঘোষণা ছিল, রাহুল আসবেন সকাল ১১টায়। সাড়ে ১০টা থেকেই পৌঁছতে থাকেন বাম-কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা। বেলা ১টার পরে এক বার রাহুলের কপ্টার ঘুরে গেল হেলিপ্যাড ঠাওর করতে না পেরে! বেলা ১টা ৫০ মিনিটে যখন মঞ্চে মাইক ধরলেন রাহুল, তখনও মাঠভর্তি জনতা ঠায় দাঁড়িয়ে! বাম-কংগ্রেসের জোট সরকার এসে কী কী কাজকে অগ্রাধিকার দেবে বলে রাহুল যখন জানাচ্ছেন, এই জনতাই হর্ষধ্বনি করেছে! জেলা কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘জিততে পারি, এই বিশ্বাস না থাকলে এমন অসহনীয় প্রাকৃতিক অবস্থায় তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে আবার চিৎকার করা যায় না!’’

কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের ঠিক কী ধরনের সমঝোতা হয়েছে, কে কোন শর্তে কার হাত ধরেছে—সে সব চর্চাকে মাঠের বাইরে ফেলেছেন রাহুল! কংগ্রেস সহ-সভাপতির মুখে শোনা গিয়েছে ‘জোট’ শব্দটাই! এবং যদি আমরা জিতি, তা হলে এই করব— এই যদি-কিন্তুর বালাই না রেখে রাহুল বলেছেন, রাজ্যে জোট সরকার আসছে! তাঁর কথায়, ‘‘এখানে বাম ও কংগ্রেসের জোট সরকার হবে। তারা এসে প্রথম কাজ করবে মানুষের রোজগারের সুযোগ বাড়ানো।’’ দুর্নীতির অভিযোগে মমতার সরকারকে তুলোধোনা করে তিনি বলেন, ‘‘মমতাজি এখন বলছেন, ক্ষমতায় ফিরলে উড়ালপুল-সিন্ডিকেটের তদন্ত করবেন। পাঁচ বছরে কোন ঘটনায় কটা ব্যবস্থা নিয়েছেন? আমরা বলছি, তদন্ত নিয়ে আপনাকে আর ভাবতে হবে না! তদন্তটা জোট সরকার এসেই করবে!’’ তাপ-সন্ত্রাস খানখান করে তখন মাঠ জুড়ে শুধু উচ্ছ্বাস! বসিরহাট দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘রাহুলের সভায় বসিরহাট শহরের লোক বেশি ছিল না। মোদীর সমাবেশ কিন্তু উৎসবের চেহারায় হয়েছিল!’’

সরকার থেকে বিদায়ের ভয়েই শাসক দল খুন-জখমের রাজনীতিতে নেমেছে বলে সিপিএমের সুরেই অভিযোগ করেন রাহুল। বসিরহাটের সভায় ছিলেন সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, বর্ষীয়ান নেতা সোমেন মিত্রও। ঋতব্রতকে মঞ্চের এক কোনায় বসতে দেখে সি পি জোশীকে সরিয়ে তাঁকে পাশের চেয়ারে ডেকে নেন রাহুল। বাংলায় ভোট-সন্ত্রাসের খবর ঋতব্রতর থেকে বিশদে নেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। বলেন, ‘‘আপনাদের মার খেতে হচ্ছে। আর কয়েকটা দিন। বুথে থাকুন, রাস্তায় লড়ুন। তার পরেই তৃণমূলের সরকারের পতন!’’ আর ঋতব্রতের মন্তব্য, ‘‘বোমা মেরে, খুন করে লাল পতাকা হাত থেকে ফেলানো যাবে না। ম্যাডাম মমতা মনে রাখবেন, লাল পতাকা আপনার পায়ে দেওয়ার জন্য নয়!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement