নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিল নির্বাচন কমিশন। আর সেই সিদ্ধান্তের কথা জানা মাত্রই কমিশনকে হুঁশিয়ারি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! তাঁর মন্তব্য, ‘‘বেশ করেছি, বলেছি! আবার বলব। হাজার, লক্ষ, কোটি বার বলব। যা ক্ষমতা থাকে, করো!’’
কমিশনের সিদ্ধান্ত এবং মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা হুঁশিয়ারির জেরে তৃতীয় দফার ভোটের আগে বহু গুণ উত্তাপ বেড়ে গেল রাজ্য রাজনীতির! মমতার পাল্টা মন্তব্য শুনে বিরোধীরা আরও জোর গলায় দাবি করেছে, কমিশনকে এ বার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আরও কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। বিরোধীরা মনে করছে, সারদা, নারদ, উড়ালপুল বিপর্যয়-সহ দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার মমতা নজর ঘোরাতেই কমিশনের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধে নামলেন। ঠিক যেমন তিনি করেছিলেন গত লোকসভা নির্বাচনের আগে। তবে এ বার বিরোধীদের অভিমত, অভিযোগ যা-ই হোক, একে তো এ রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে কমিশনের নোটিস দেওয়া যথেষ্ট নজিরবিহীন। তার পরে আবার মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে হুমকি দিয়েছেন, তাতে পরবর্তী ভোট-পর্বে শাসক দলের বাহিনী আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে বলে বিরোধী নেতাদের আশঙ্কা।
কমিশনের ফুল বেঞ্চ নিয়ে বৃহস্পতিবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী কলকাতাতেই ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানোর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আসানসোলের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসানসোলকে আলাদা জেলা করা হবে বলেছিলেন। এর সঙ্গে আরও কয়েকটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যা নির্বাচনী বিধিভঙ্গের সামিল।’’ তৃণমূলের তরফে অবশ্য পাল্টা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, আসানসোল, কালিম্পং, বসিরহাট, সুন্দরবন ও ঝাড়গ্রামকে পৃথক জেলা করার সিদ্ধান্ত গত বছর ডিসেম্বরেই রাজ্য মন্ত্রিসভায় পাশ হয়েছিল। তাই এটা নতুন ঘোষণা নয় এবং তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে নোটিসও যুক্তিহীন।
কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, মমতার বিরুদ্ধে অনেক বেশি গুরুতর অভিযোগ কমিশনে এনেছিল বিরোধীরা। কেন্দ্রীয় বাহিনী ফিরে যাওয়ার পরে রাজ্য সরকারকেই যে দেখতে হবে, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে যে বুঝে নেবেন তিনি, নারায়ণগড় জিততে যে কোনও কিছুই তিনি করে দিতে পারেন— এ সবই বিধিলঙ্ঘন বলে অভিযোগ ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে কমিশন নোটিস দিয়েছে নতুন জেলার ঘোষণার মতো তুলনায় নিরীহ বিষয়ে! আর মমতা ধরে নিয়েছেন, তাঁর আগের হুঁশিয়ারির জন্যই কমিশন রুষ্ট! তাই সিউড়ির সভায় নিজেই বলেছেন, ‘‘আমাকে নাকি শো-কজ করছে কমিশন। আমি নাকি বলেছি, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বদলা চাই। বেশ করেছি, বলেছি! আবার বলব! যা ক্ষমতা থাকে, করো! আমাকে কেউ চোর বলবে, তার উত্তর চাইব না? কুৎসা করলে উত্তর চাইব না? এটা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার।’’ নরেন্দ্র মোদী, সনিয়া গাঁধী বা অহমেদ পটেলের কথায় কমিশন চিঠি পাঠাচ্ছে বলে অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রীর আরও চ্যালেঞ্জ, ‘‘আমার পুলিশ অফিসারদের বদলি করেছো। আমাকেও করো! আমাকে এখানে পুঁতলে আমি দিল্লিতে গিয়ে জন্মাব!’’
ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রী যখন কমিশনকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন, তখনও রাজারহাটের একটি হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলন করছেন জৈদী। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে জৈদী বলেন, ‘‘ওঁর কাছে আমরা একটা জবাব চেয়েছি। উনি কী জবাব দেন, আগে দেখি।’’ সিপিএম অবশ্য মমতার এ দিনের মন্তব্যের ফুটেজ কমিশনে পাঠাচ্ছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ঔদ্ধত্য সীমা ছাড়াচ্ছে! মানুষকে ভয় দেখানোর পরে এ বার কমিশনকে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন! কমিশনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা ব্যবস্থা না নিলেও মানুষ ব্যবস্থা নেবেন।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘দুর্নীতি, কেলেঙ্কারিতে এমন অবস্থা, এখন পায়ে পা লাগিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কমিশনের সঙ্গে ঝগড়া করছেন! মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে বিকারগ্রস্ত আচরণ করছেন!’’