জনতা নেপালের, দেখলেন অধীর

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর জনসভায় এ দিন ঝালদার হাটতলা ময়দান কার্যত কানায় কানায় ভরে গিয়েছিল। বিকেলে বাঘমুণ্ডি কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতোর সমর্থনে ওই জনসভার আয়োজন করা হলেও, দুপুর থেকেই শহরের পথ কংগ্রেস কর্মীদের দখলে চলে গিয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝালদা ও বলরামপুর শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৬ ০২:১১
Share:

ঝালদার হাটতলায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।

এলাকা যে কংগ্রেসেরই গড়, বুধবার ফের তা দেখিয়ে দিল ঝালদা।

Advertisement

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর জনসভায় এ দিন ঝালদার হাটতলা ময়দান কার্যত কানায় কানায় ভরে গিয়েছিল। বিকেলে বাঘমুণ্ডি কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতোর সমর্থনে ওই জনসভার আয়োজন করা হলেও, দুপুর থেকেই শহরের পথ কংগ্রেস কর্মীদের দখলে চলে গিয়েছিল। ঝালদা ১ ব্লকের বিভিন্ন এলাকা থেকে কাতারে কাতারে মানুষ শহরে ঢুকতে থাকেন। সভার আগে শহরের রাস্তায় কর্মী-সমর্থকদের বিশাল ঢল নিয়ে মিছিল করেন নেপালবাবু। দিনের শেষে যা দেখে পুলিশের গোয়েন্দা দফতরকে স্বীকার করতে হয়, কংগ্রেসের সভায় ভিড় হয়েছিল ১৭-১৮ হাজার। যদিও কংগ্রেস কর্মীদের দাবি প্রায় দ্বিগুণ।

তবে অযোধ্যা পাহাড়ের অন্য প্রান্ত বলরামপুরে অধীরের সভা করতে গিয়ে ঠিক উল্টো অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেখানে কংগ্রেসের সভায় ভিড় ছিল মেরেকেটে হাজার ছয়েক। কারণ এলাকাটা তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর। তিনিই ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। তবে ওই ভিড়ই খাটো করে দেখতে নারাজ তৃণমূল বিরোধী জোটের কর্মীরা। তাঁদের দাবি, এলাকায় তৃণমূলের চোরাগোপ্তা হুমকি সরিয়েও যে এত মানুষ গ্রাম ছেড়ে মিছিল করে সভায় এসেছেন, তা মোটেই সহজ নয়।

Advertisement

একসময়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের শক্ত ঘাঁটি ছিল ঝালদা কেন্দ্র (অধুনা বাঘমুণ্ডি কেন্দ্র)। এখন জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপালবাবুর নেতৃত্বে কংগ্রেসও এখানে ভাল জনসমর্থন গড়ে তুলেছে। বিধানসভা ভোটের আগে এ দিনের জনসভা তারই প্রমাণ দিল। কাঠফাটা রোদকে কার্যত উপেক্ষা করেই ঝাঁকে ঝাঁকে কংগ্রেস কর্মীরা ঝালদায় আসেন। দেখা যায় বাঘের সাজে ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মী-সমর্থকদের উল্লাসও। নানা রকমে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মিছিল করেন মানুষজন। হাত চিহ্নের পতাকার সঙ্গেই বাঘ আঁকা পতাকা দখল নেয় মিছিলের আকাশ।

মাঠেও কংগ্রেস ও বামেদের পতাকা পাশাপাশি উড়তে দেখা যায়। মঞ্চেও দেখা যায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে ফব-র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন সাংসদ বীরসিংহ মাহাতোকে। ছিলেন কংগ্রেসের সাংসদ-অভিনেতা রাজ বব্বর। তিনি তো উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে ওঠেন— ‘‘এত মানুষের ভিড়! আর বলে দিতে হয় না এই কেন্দ্র থেকে কে জিতবেন। আমি নিশ্চিত নেপালবাবুই জিতছেন।’’

বলরামপুরে রাজ বব্বরের পাশে প্রার্থী জগদীশ মাহাতো। ছবি: প্রদীপ মাহাতো ও সুজিত মাহাতো

ঘটনাচক্রে এই মাঠেই শনিবার সভা করে গিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভার সঙ্গে এ দিনের সভার তুলনা বারবার কংগ্রেস কর্মীদের কথাবার্তায় উঠে এসেছে। তাঁদের কটাক্ষ, ‘‘অভিযেকের সভায় তো মাঠের একাংশ ভরে ছিল। উনি কোন মুখে নেপালদাকে ৩০ হাজার ভোটে হারানোর কথা বলেন?’’

এই কেন্দ্রের বাঘমুণ্ডির কালীমাটিতে রবিবার সভা করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশই হিসেব দিয়েছিল, সেই সভার ভিড় ছিল ১৫-১৬ হাজার। তাই এ দিন অধীরের সভা দেখে বেজায় খুশি জোটের কর্মীরা।

মঞ্চে অধীর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় তৃণমূল সরকারের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করেন। তিনি দাবি করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প থেকে চাল নিয়ে মমতা ২ টাকা কিলো চাল বিলির দাবি তৃণমূল সরকারের বলে মিথ্যা প্রচার করছে। বিঁধেছেন শিল্পের প্রসঙ্গ তুলেও।

বীরসিংহবাবুও বলেন, ‘‘নেপালকে জেতাতেই হবে। দীর্ঘদিনের বামপন্থী কর্মীদের মধ্যে যদি কোনও দ্বিধা থাকে, তাহলে বলব বাঁ হাতে হলেও হাত চিহ্নে ভোট দিন।’’ বলরামপুরের সভায় অধীরবাবুর পাশে দেখা যায় সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণীন্দ্র গোপ, ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক নরহরি মাহাতোদের। তাতে জোটের বার্তা জোট কর্মীদের মধ্যে আরও বেশি ছড়িয়েছে বলে রাজনৈতির মহলের মত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement