অমৃতা রায়। —ফাইল চিত্র।
ভোটের রাজনীতির সঙ্গে এ বার কি সরাসরি মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নাম যুক্ত হতে চলেছে? আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্লগ্নে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র জুড়ে এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।
উত্তর নদিয়ার এই কেন্দ্রে তৃণমূলের মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের বর্তমান কুলবধূ অমৃতা রায়ের নাম ঘোরাফেরা করতে শুরু করেছিল রবিবার রাত থেকেই। সোমবার তিনি কলকাতা থেকে কৃষ্ণনগরে চলে আসায় সেই জল্পনা আরও গতি পেয়েছে।
বিজেপি সূত্রের দাবি, অমৃতা রায়কে প্রার্থী করার বিষয়ে জেলা নেতৃত্বই প্রথম আগ্রহ প্রকাশ করেন। সেই মতো দলের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু হয়। বেশ কয়েক দফা কথাবার্তার পর প্রার্থী হতে রাজি হয়েছেন রাজবধূ অমৃতা। বিজেপি প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনার কথা তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকারও করেছেন বলে সূত্রের দাবি।
সংসদে ‘ঘুষের বিরুদ্ধে প্রশ্ন’ তোলার অভিযোগে বহিষ্কৃত সাংসদ মহুয়া মৈত্রকেই ফের কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। সিপিএমও প্রাক্তন বিধায়ক এস এম সাদিকে প্রার্থী করে প্রচারে নেমে গিয়েছে। বহু আগে রানাঘাটে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু এখনও কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম ঘোষণা না হওয়ায় বিজেপি কর্মীরা কিঞ্চিৎ হতোদ্যম। তৃণমূল ও সিপিএমকে প্রচার করতে দেখে অনেকেই অস্থির হয়ে উঠেছেন।
তবে এত দিন এমনিই বসে ছিলেন না বিজেপি নেতৃত্ব। কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন সাংসদ, প্রয়াত সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় ওরফে জলুবাবুর ছেলে সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে প্রার্থী করার জন্য একাংশ চেষ্টা চালিয়েছিলেন। বিজেপি সূত্রের দাবি, তিনি রাজি হননি। সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় ঝুলন গোস্বামী, সোমা বিশ্বাসের মতো জাতীয় স্তরের ক্রীড়াবিদের নাম নিয়েও পর্যালোচনা চলছিল। এক জন চলচ্চিত্র অভিনেতাও এই কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। এ ছাড়া তালিকায় বিজেপির কিসান মোর্চার রাজ্য সভাপতি মহাদেব সরকার থেকে শুরু করে আরএসএস নেতা রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও ছিল বলে বিজেপির অন্দরের খবর। প্রার্থী হওয়ার জন্য ৩০টিরও বেশি ‘বায়োডেটা’ জমা পড়েছিল।
কিন্তু হয় প্রস্তাবিত প্রার্থীর নাম রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তেমন পছন্দ হচ্ছিল না বা তাঁদের পছন্দের ব্যক্তিত্ব প্রার্থী হতে রাজি হচ্ছিলেন না। তাঁরা এই কেন্দ্রে জন্য এক জন ‘নামী’ প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। জেলা বিজেপিও এমন এক জনকে প্রার্থী হিসাবে চাইছিল যাঁকে ভোটারদের কাছে নতুন করে পরিচয় করাতে হবে না। এক ডাকে সবাই চিনবেন। সেই হিসাবেই অমৃতা রায় এবং ইদানীং মুম্বই-নিবাসী এক জনপ্রিয় গায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। গায়ক রাজি হননি।
বিজেপি সূত্রের দাবি, রবিবার রাতেই অমৃতা রায়ের সঙ্গে দলের রাজ্য নেতৃত্বের কথাবার্তা অনেকটাই এগিয়ে যায়। সোমবার দলের নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অর্জুন বিশ্বাস বলেন, “অমৃতা রায়ের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে ঠিকই তবে শেষ সিদ্ধান্ত দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব নেবেন। আমরাও চূড়ান্ত নাম জানার জন্য প্রতীক্ষায় আছি।” আর অমৃতা রায়ের বক্তব্য, “বিজেপির সঙ্গে প্রার্থী হওয়া নিয়ে কথাবার্তা চলছে। তবে শেষ পর্যন্ত কী হবে সেটা আগামী
দিন বলবে।”