(বাঁ দিকে) বিমান বসু। নওশাদ সিদ্দিকি (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছিল। আসন নিয়ে দর কষাকষিও কম হয়নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাম-কংগ্রেসের জোটে থাকেনি আইএসএফ। নওশাদ সিদ্দিকির দল একক ভাবে প্রার্থী দিয়েছে ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই’য়ে। কিন্তু কেন ভাঙল জোট? আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’তে নওশাদ জানিয়ে দিলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের আগেই ‘ডিভোর্স’ হয়েছিল। বামেদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। তবে ভোটে বোঝাপড়া হয়নি। কিন্তু জোট ভেঙে গেলেও রাজ্য বামফ্রন্টকে তিনি ‘শত্রু’ হিসেবে মনে করেন না।
২০২১ সালের বিধানসভায় বাম, কংগ্রেস এবং আইএসএফের জোট হয়েছিল। তার পোশাকি নাম ছিল সংযুক্ত মোর্চা। নাম থাকলেও ফলিত স্তরে ভিন্ন ছবি দেখা গিয়েছিল। বাম-কংগ্রেসের বোঝাপড়া হয়েছিল। আবার বামেদের সঙ্গে আইএসএফের বোঝাপড়া হয়েছিল। সার্বিক ত্রিপাক্ষিক বোঝাপড়া ছিল না তিন বছর আগে হয়ে যাওয়া বিধানসভা ভোটে। সেই মোর্চা মুখ থুবড় পড়েছিল। দেখা গিয়েছিল, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় থেকে একাই জিতেছেন নওশাদ। স্বাধীনতার পর প্রথম বারের জন্য বাংলার বিধানসভায় বাম-কংগ্রেস শূন্য হয়ে গিয়েছে। সেই সময় থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে নওশাদদের দূরত্ব ছিল। ঘনিষ্ঠতা ছিল কেবল আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের সঙ্গে। কিন্তু এ বার সেটাও নেই।
নওশাদের কথায়, ‘‘আমরা চেষ্টা করেছিলাম বামেদের সঙ্গে বোঝাপড়া করার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি।’’ পাশাপাশি, সিপিএমকে ভাঙড়ের বিধায়ক মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন, ‘‘২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর আমরা বলিনি ভোট শেষ, জোট শেষ। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছিলেন।’’ পাশাপাশিই, নওশাদ বলেছেন, ‘‘সীতারাম ইয়েচুরির ওই কথার পর আমরা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে চিঠি দিয়ে বলেছিলাম, আপনাদের অবস্থান জানান। কিন্তু ওঁরা কিছু জানাননি।’’ নওশাদের দাবি, বামেদের সঙ্গে জোটের বিষয়ে তিনি ‘আন্তরিক’ ছিলেন।
নওশাদ কয়েক মাস আগেই হুঙ্কার দিয়েছিলেন, তাঁর দল চাইলে তিনি ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে পারেন। সাক্ষাৎকারেও দাবি করেছেন, তাঁর ‘ব্যক্তিগত ইচ্ছা’ ছিল ডায়মন্ডে লড়ার। কিন্তু দল অনুমতি দেয়নি। যাকে অনেকেই পলায়নী মনোবৃত্তি বলে অভিহিত করেছেন। নওশাদও মানছেন, ভোটে না দাঁড়ানো তাঁর ‘রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা’য় আঘাত হেনেছে। এটা তাঁর কাছে একটা ধাক্কার মতো তো বটেই। তবে দলের সাহায্যে ওই ‘ক্ষত’ তা তিনি মেরামত করতে পারবেন বলেও দাবি করেছেন নওশাদ। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, সিপিএমের একটি অংশের ভূমিকার জন্য তাঁকে ঘিরে জনমানসে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। যা তাঁর কাছে ‘অনভিপ্রেত’ বলে দাবি হুগলির ফুরফুরা শরিফের এই পিরজাদার।