—প্রতীকী চিত্র।
বর্জ্য সংগ্রহের উপবিধি তৈরি করে বাড়ি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে অতিরিক্ত কর আদায়ের জন্য প্রতিটি পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রের বন, জলবায়ু ও পরিবেশ মন্ত্রক। রাজ্য সরকারও সেই নির্দেশ পালন করে বর্জ্য-ব্যবস্থাপনায় ‘স্বনির্ভর’ হতে বলে পুরসভাগুলিকে। কাটোয়া পুরসভা উপবিধি তৈরি করে বাড়ি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে কত টাকা অতিরিক্ত কর আদায় করা হবে, তার প্রচারপত্র বিলি করেছে। বর্ধমান পুরসভা গত জুলাইয়ে উপবিধি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে নাগরিকদের মতামত জানতে চেয়েছিল। ডিসেম্বরে খসড়া উপবিধি চূড়ান্ত করে জানুয়ারি থেকেই কর-আদায় চালু করবে বলে জানানো হয়েছিল।আপাতত ওই দু’টি পুরসভা উপবিধি কার্যকর করতে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছে।
বিভিন্ন মহলের ধারণা, লোকসভা ভোটের আগে হঠাৎ করে আবর্জনা-কর নেওয়া হলে ভোট-বাক্সে তার প্রভাব পড়তে পারে আশঙ্কা করে ওই প্রক্রিয়া আপাতত পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। মাস তিনেক আগে কালনা পুরসভাও দোকান ও হোটেল থেকে কর আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়। তারাও সিদ্ধান্ত কার্যকর করেনি।
এক মাত্র মেমারি পুরসভা কয়েকটি ওয়ার্ড থেকে বাড়ি পিছু আবর্জনা সংগ্রহের জন্য ২০ টাকা করে সংগ্রহ করে। তবে তা শুরু হয়েছিল কেন্দ্রের নির্দেশ আসার আগেই। মেমারি পুরসভা এখনও উপবিধি তৈরি করেনি। তারাও লোকসভা ভোটের জন্যে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছে বলে খবর পুরসভার সূত্রে। পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ী বলেন, “শহরবাসীর সহযোগিতায় ২০১১ থেকেই বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহের জন্যে ২০ টাকা করে নেওয়া হয়। কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে এখনও উপবিধি তৈরি হয়নি। শীঘ্রই সেটি তৈরি করে দোকান, হোটেল-সহ অন্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে কর আদায় শুরু হবে।”
গত জুলাইয়ে বর্ধমান পুরসভা খসড়া উপবিধি প্রকাশ করে জানিয়েছিল, ৫০০-৩০০০ বর্গফুট বাড়ির জন্য ৫০-২০০ টাকা, শপিং মলের ক্ষেত্রে ৫০,১৮৭ টাকা, অতিথিশালার (২০০-২৫০০ বর্গফুট) ক্ষেত্রে ৭৫-১০৮০ টাকা, হোটেল/রেস্তেরাঁ/পানশালার (৫০০-৩০০০ বর্গফুট) ক্ষেত্রে ১৮০-১৬৪০ টাকা, ২০০০–১০,৫০০ বর্গফুট ‘স্টার’ হোটেলের জন্য ১৮০০-৬০,৫০০ টাকা পর্যন্ত কর নেবে পুরসভা। নার্সিংহোম, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য-পরিষেবায় যুক্ত অন্য সংস্থা ও দোকানের জন্য পৃথক করকাঠামো তৈরি হয়েছে। পুরপ্রধান পরেশ সরকার বলেন, “সব কিছুই চূড়ান্ত। কর আদায়ে দল গড়া হয়েছে। তবে ভোটের আগে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাবে না।”
ভোটের জন্যই যে অতিরিক্ত কর আদায়ের প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা সরাসরি মানতে নারাজ কাটোয়ার পুরপ্রধান সমীর সাহা। তাঁর কথায়, “কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মতো উপবিধি তৈরি করে শহরবাসীকে জানানো হয়েছিল। এখন বিষয়টি পর্যালোচনা স্তরেই রয়েছে।” কোনও রাখঢাক না করেই কালনার উপপুরপ্রধান তপন পোড়েল বলেন, “ভোটের আগে বাড়তি কর চাপালে মানুষ ক্ষুব্ধ হবেন। সে কারণেই তিন মাস আগে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও তা চূড়ান্ত রূপ দিতে পারিনি। ভোটের পরে উপবিধি তৈরি করব।” কালনা পুরসভা দোকান থেকে ২০ টাকা ও হোটেল থেকে ৩০ টাকা কর নেবে বলে ঠিক করেছিল।
দাঁইহাটের পুরপ্রধান প্রদীপ রায় বলেন, “বর্জ্য-কর নেওয়ার নির্দেশ এসেছে। তবে এখনই এ নিয়ে ভাবছি না। অন্য পুরসভাগুলির পদক্ষেপ দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” দাঁইহাট ও গুসকরা পুরসভা যথাক্রমে ২৮ হাজার এবং ১৫ হাজার বাড়ি ও দোকান থেকে কর নিতে পারবে। গুসকরার পুরপ্রধান কুশল মুখোপাধ্যায় বলেন, “এখনও উপবিধি তৈরি হয়নি। মে মাসের পরে আলোচনা করব।”
জেলা বিজেপি সভাপতি (কাটোয়া সাংগঠনিক) গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা নিয়ে পুরসভাগুলি মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। মানুষ সেটা বুঝে ফেলায় সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে ভয় পাচ্ছে পুরসভাগুলি।”