জল সমস্যার সমাধান চেয়ে বিদায়ী সাংসদকে ঘিরে বিক্ষোভ। — নিজস্ব চিত্র।
গ্রামবাসীরা ঘিরে ধরে জলের অভাবের কথা শোনাচ্ছিলেন বিদায়ী সাংসদকে। মন দিয়ে কিছু ক্ষণ ধরে বাসিন্দাদের সমস্যা, ক্ষোভ-বিক্ষোভের কথা শোনেনও জয়নগরের তৃণমূলের বিদায়ী সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল। সব শুনে জলাভাবের দোষ চাপালেন বিশ্ব উষ্ণায়নের ঘাড়ে! রবিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর লোকসভার বিভিন্ন এলাকায় প্রচার সারেন প্রতিমা। হরিনারায়ণপুরে তাঁকে জল এবং আলোর সমস্যার কথা জানান গ্রামবাসীরা। তা নিয়ে প্রতিমার অনুগামী এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে একপ্রস্ত তর্কাতর্কিও হয়। নিজেই গোলমাল থামান প্রতিমা। সমস্যা শুনে দেন নিদান।
১০ বছরের সাংসদকে চোখের দেখাও দেখতে পাননি বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। রবিবার সকালে সেই হরিনারায়ণপুরে ভোট চাইতে এসে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন প্রতিমা। এই এলাকাটি জয়নগর বিধানসভার অধীন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এই এলাকায় জলের সমস্যার সমাধান হয়নি। নেই পথবাতিও। বিদায়ী সাংসদকে কাছে পেয়ে সে সব কথা বলতে থাকেন গ্রামবাসীরা। প্রতিমার সঙ্গে ছিলেন জয়নগরের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব। গ্রামবাসীরা যখন জলের অভাবের কথা সরাসরি প্রতিমাকে জানাচ্ছিলেন, তখনই বিদায়ী সাংসদের এক অনুগামীর সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এক গ্রামবাসী। যা গড়ায় মৃদু হাতাহাতিতে। দু’পক্ষকে দূরে সরিয়ে গোলমাল থামিয়ে দেন প্রতিমা। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, তাঁরা দীর্ঘ দিন ধরেই পানীয় জলের সমস্যায় ভুগছেন। সূর্য ডুবলে আলোর ব্যবস্থা না থাকায় গ্রাম অন্ধকারে ডুবে যায় বলেও অভিযোগ বাসিন্দাদের। বাসিন্দাদের ক্ষোভের কারণ বুঝতে পেরে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিমা। নির্বাচন মিটলে বিষয়টির স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দেন। এর পরেই সাংবাদিকদের সামনে প্রতিমা বলেন, ‘‘জল সমস্যা শুধু বাংলার নয়। তা দেশ, এমনকি গোটা বিশ্বের সামনে জ্বলন্ত সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে গিয়েছে। অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা পানীয় জলকে অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করছেন। পরিবেশের কারণেই এই অবস্থা।’’ কিন্তু সমস্যা সমাধানে কী করবেন বিদায়ী সাংসদ? তার জবাবে প্রতিমা বলেন, ‘‘নির্বাচনী আচরণবিধি জারি আছে, তাই ইচ্ছে থাকলেও নলকূপ বসাতে পারব না। আগামিদিনে আমি আবার নির্বাচিত হয়ে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করে দেব। আপাতত, পিএইচই-র ট্যাঙ্কারে করে পানীয় জল বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি।’’
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, গত ১০ বছরে এলাকায় সাংসদের পা পড়েনি। কিন্তু রবিবার ভোটের প্রচারে গ্রামে এসেছেন। এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি গ্রামবাসীরা। সাংসদকেই নিজেদের সমস্যার কথা জানান। স্থানীয় বাসিন্দা প্রভাত কয়াল বলেন, ‘‘আমার পাড়ায় একটা আলো নেই। টিপকলের জল আমরা পাই না। সব পাড়া কমবেশি দু’আড়াই ঘণ্টা জল পাচ্ছে, আমাদের এখানে এক ফোঁটা জলই আসে না। সাংসদ এসেছেন ১০ বছর পরে ভোটের সময়, তাই সমস্যার কথা তাঁকে বললাম। বললেন, আমরা ব্যবস্থা করব।’’
গৃহবধূ মিনতি হালদার বলেন, ‘‘জল আর আলো— এই দুটোই আমাদের সবচেয়ে বড় অসুবিধা। এমনিতে কোনও কাজ আমাদের এখানে হয়নি। সাংসদ বললেন, হবে।’’