অজয় মুখোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
আজ অষ্টাদশ লোকসভা ভোটের ফল গণনা। ইদানীং বাংলায় ভোটের প্রচারে বিপক্ষ দল বা প্রার্থীর প্রতি কুকথা কার্যত রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফল ঘোষণার পরেও টিপ্পনীর অন্ত থাকে না। কিন্তু প্রায় ৬০ বছর আগে এমনই এক ভোট গণনার দিন হুগলির আরামবাগে প্রতিপক্ষ প্রার্থী প্রফুল্ল সেনকে দলীয় সমর্থকেরা শুধুমাত্র ‘কাঁচকলা’ বলায় জিতেও বিজয়ীর ঘোষণাপত্র নেবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন অজয় মুখোপাধ্যায়।
ঘটনাটি ১৯৬৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনের। দীর্ঘ ২০ বছর রাজ্যে ক্ষমতায় কংগ্রেস। মেদিনীপুরের গান্ধীবাদী নেতা অজয় মুখোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে নতুন দল ‘বাংলা কংগ্রেস’ গড়েছেন। তিনি ভোটে দাঁড়ালেন আরামবাগ থেকে। সমর্থন জানাল বামেরা। ‘আরামবাগের গান্ধী’ বলে পরিচিত কংগ্রেস প্রার্থী তথা বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্রসেনের বিপক্ষে।
আরামবাগের মানুষ প্রফুল্লচন্দ্রকে দেখেছেন বন্যা দুর্গতদের সেবা করতে এসে গান্ধীজির সত্যাগ্রহ, অহিংস স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াই, কর বন্ধ করার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার দিন থেকে। অজয় মুখোপাধ্যায় পরিচিত মেদিনীপুরে গান্ধীবাদী অসহযোগ আন্দোলন, তাম্রলিপ্ত স্বাধীন সরকার গঠনের প্রবাদপ্রতিম স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে।
ভোট গণনা শুরু হল। সমানে সমানে টক্কর। শেষ পর্যন্ত ৮০০-র কিছু বেশি ভোটে জিতে গেলেন অজয়। ভোট গণনার জায়গায় প্রফুল্ল সেনকে নিয়ে টিপ্পনী শুরু হল। ‘কাঁচকলা, কাঁচকলা’ বলে চিৎকার।
কেন ‘কাঁচকলা’?
সে বার প্রফুল্লচন্দ্র খাদ্য সঙ্কটের সময়ে মানুষকে আয়রনযুক্ত কাঁচকলা গাছ লাগাতে বলেছিলেন। তার উল্টো মানে করে বামপন্থীরা ভোটে প্রচার করেছিলেন। গণনাকেন্দ্রেওতারই রেশ।
তবে, গণনাকেন্দ্রে সেই টিপ্পনী শুনে সমবেত অতি উৎসাহীদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে উঠলেন অজয় মুখোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘একটিও বাজে কথা তোমরা বলবে না। যে মানুষ নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে তোমাদের মাঝেই থেকে গেলেন, তাঁকে খারাপ কথা বলতে এতটুকু লজ্জা হচ্ছে না তোমাদের! এমন চলতে থাকলে আমি বিজয়ীর ঘোষণাপত্রই নেব না।’’ আগ্রাসী কর্মীরা আর স্লোগান তোলেননি। ভুল বুঝে মাথা নিচু করেছিলেন তাঁরা। দু’চোখ বেয়ে জলের ধারা প্রফুল্লচন্দ্র সেনের। দুই স্বাধীনতা সংগ্রামী আলিঙ্গন করলেন পরস্পরকে।
এর ক’দিনের মাথায় অজয় মুখোপাধ্যায় হলেন প্রথম যুক্তফ্রন্টের মুখ্যমন্ত্রী।
তথ্য: পার্থ চট্টোপাধ্যায়, আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চাকারী।