Lok Sabha Election 2024

তফসিলি-মন পেতে তোড়জোড় শাসকের

মঙ্গলবার কলকাতার নজরুল মঞ্চে ওই কর্মসূচি ঘোষণা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে দলের একাধিক মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত 

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৪ ০৭:৫৫
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

লক্ষ্য তফসিলি জাতি ও জনজাতি ভোট সুনিশ্চিত করা। সেই উদ্দেশ্যেই মঙ্গলবার নতুন জনসংযোগ কর্মসূচি ‘তফসিলি সংলাপ’-এর ঘোষণা করেছে তৃণমূল। জেলাতেও তার প্রস্তুতি শুরু করে দিল শাসক দল। তৃণমূলের এসটি (তফসিলি জনজাতি) সেলের জেলা সভাপতি বুদ্ধদেব হাঁসদা বলছেন, ‘‘শুক্রবার থেকে কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। রূপরেখা স্পষ্ট করতে বৃহস্পতিবারই ব্লক সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠক করব।’’

Advertisement

মঙ্গলবার কলকাতার নজরুল মঞ্চে ওই কর্মসূচি ঘোষণা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে দলের একাধিক মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন প্রতিটি জেলা থেকে এসটি-এসসি সেলের জেলার প্রতিনিধিরা।

সেই তালিকায় বীরভূমের ১১টি বিধানসভা থেকে ৫ জন করে মোট ৫৫ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা জেলায় ফিরেই কী ভাবে কর্মসূচি পালিত হবে সেই প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বলে খবর।

Advertisement

বুদ্ধদেব বলছেন, ‘‘বিজেপি তফসিলি জাতি ও জনজাতির মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। আমরা ওই বর্গভুক্ত প্রতিটি পরিবারে যাব। যাতে কান দিয়ে না দেখে যেন তাঁরা চোখে দেখে বিশ্বাস করেন।’’ এসসি (তফসিলি জাতি) সেলের জেলা সভাপতি নব বাউড়ি বলছেন, ‘‘রাজ্যে যে ভাবে নির্দেশ দেবে সেভাবেই কর্মসূচি পালন করব।’’ তবে জেলা তৃণমূল সূত্রে দাবি, রাজ্য এসসি এসটি সেলের থেকে স্পষ্ট নির্দেশিকা বুধবার বিকেল পর্যন্ত জেলা তৃণমূলের কাছে এসে পৌঁছয়নি।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জেলায় তো বটেই, মহম্মদবাজার-সহ জেলায় যে সামান্য কিছু আসনে ভোট হয়েছিল সেখানেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল শাসক দলের থেকে বেশ কিছুটা মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন আদিবাসী ও তফসিলি জাতিভুক্ত মানুষ। একই ধারা বজায় ছিল গত লোকসভা নির্বাচনে। জোড়া ফুল ছেড়ে পদ্মের দিকে ঝুঁকেছিলেন তাঁদের অনেকেই।

তারপর থেকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, জয় জোহার, মানবিক থেকে একের পর এক জনমুখী প্রকল্প, জনসংযোগ কর্মসূচিতে ভর করে হাওয়া অনেকটাই শাসক দলের অনুকুলে ঘুরেছে। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন এবং গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচন তা প্রতিফলিতও হয়েছে বলে জেলা তৃণমূলের নেতাদের দাবি।

তারপরও শাসক দল জনসংযোগে খামতি রাখতে চায় না বলে দাবি জেলার তৃণমূল নেতাদের। শাসক দলের নেতারা বলছেন, ‘‘জেলায় প্রায় ২৯ লক্ষ ভোটার। তফসিলি জাতি ও জনজাতির ভোটার মিলিত ভাবে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিত যেহেতু আলাদা, তাই কোনও ভাবেই বিজেপি যাতে তাঁদের ভুল বোঝাতে না পারে সেজন্য বীরভূমেও এই কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে।’’

বুদ্ধদেবের কথায়, ‘‘এটা ঠিক গত লোকসভায় তফসিলি জাতি জনজাতির ভোটের একটা অংশ বিজেপিতে গিয়েছিল। কিন্ত প্রেক্ষিত বদলে গিয়েছে। যদি কোথাও ফাঁক ফোঁকর থেকেও থাকে সেটা মেরামত করা যাবে।’’

তৃণমূলের এসসি এসটি সেলের নেতারা জানিয়েছেন, প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় ১০জন তফলিসি জাতি ও ৫ জন তফসিলি জনজাতির নেতাকর্মীদের নিয়ে একটা দল গঠিত হবে। তাঁরাই গ্রামে গ্রামে ঘুরবেন। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে যাবেন। প্রচারের জন্য সুসজ্জিত গাড়িও থাকছে। সঙ্গে থাকবেন তৃণমূলের উপদেষ্টা সংস্থার প্রতিনিধিরা।

সরকার কী কী ভাল কাজ তাঁদের জন্য করেছে জানানোর পাশাপাশি প্রচার চলবে বিজেপি সরকারের সময়ে সারা দেশে কী ভাবে তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ ‘নির্যাতিত’ হচ্ছেন তা নিয়েও। প্রতিনিধিরা অন্তত পাঁচ দিন গ্রামে রাত্রিবাস করবেন বলেও জানিয়েছেন তৃণমূল নেতারা।

তবে এই কর্মসূচি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছেন দলেরই অনেকে। আড়ালে তাঁরা বলছেন, ‘‘৯০ শতাংশ বাসিন্দা মোটমুটি ঠিকই করে ফেলেছেন ভোট কাকে দেবেন। ১০ শতাংশের মন বদলানো যায়। মূল তৃণমূল এই কর্মসূচি সফল করতে কতটা সাহায্য করছে তার উপর নির্ভর করছে। কারণ গত দু’বছর ধরে শাখা সংগঠন সেভাবে গুরুত্ব পায়নি।’’

তবে শাসক দলের এই কর্মসূচিতে লাভ কিছু হবে না বলে দাবি বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহার। তিনি বলছেন, ‘‘তৃণমূল মানে চোর, দুর্নীতিগ্রস্ত, মহিলাদের উপর অত্যাচারকারী। সন্দেশখালির ঘটনা তা প্রমাণ করেছে। কোনও প্রচারেই লাভ হবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement