জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। কিন্তু এ বার হাবড়ায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক নেই। তা সত্ত্বেও নির্বাচনের জন্য হাবড়া বিধানসভার জন্য যে নির্বাচনী কমিটি গড়ল তৃণমূল, তাতে ঠাঁই পেলেন যাঁরা, তাঁরা জ্যোতিপ্রিয়-ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত। রেশন বণ্টন দুর্নীতি বণ্টন মামলায় হাবড়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাক্তন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় শ্রীঘরে থাকলেও তাঁর ঘনিষ্ঠদের নিয়ে তৃণমূল নির্বাচনী কমিটি গড়ায় বিরোধীরা টিপ্পনী কাটতে ছাড়ছে না।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ৮ জনের কমিটিতে আছেন পুরপ্রধান নারায়ণচন্দ্র সাহা, উপ-পুরপ্রধান সীতাংশু দাস, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ জ্যোতি চক্রবর্তী, প্রাক্তন বিধায়ক তপতী দত্ত, হাবড়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেহাল আলি, হাবড়া শহর মহিলা তৃণমূলের সভাপতি মালা বসুকর, হাবড়া শহর যুব তৃণমূল সভাপতি রিঙ্কু দে এবং হাবড়া শহর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুমিত দে। নারায়ণকে কমিটির চেয়ারম্যান এবং সীতাংশু ও জ্যোতিতে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে।
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, জেলে থাকলেও হাবড়ায় বালুর (জ্যোতিপ্রিয়ের ডাক নাম) অনুগামীর সংখ্যা কম নয়। সে দিকে তাকিয়েই এই সিদ্ধান্ত। তবে এ নিয়ে নারায়ণ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘পদাধিকারী হিসাবে কমিটি তৈরি করা হয়েছে। এ বার বালুদা নেই। তিনি হাবড়ার জন্য প্রচুর উন্নয়ন করেছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে আমরা হাবড়া থেকে আমাদের প্রার্থীকে বড় ব্যবধানে এগিয়ে দেব।’’ হাবড়া বিধানসভা বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। ২০১১ সাল থেকে যে কোনও ভোটে তৃণমূলের প্রচার রণকৌশল ঠিক করা-সহ সব কাজ একা হাতেই সামলাতেন বালু। এ বার বালু না-থাকায় হাবড়ায় দল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সম্প্রতি দলের জেলা কোর কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও হাবড়ায় কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে সন্দিহান দলের একাংশ।
নির্বাচনী কমিটিতে জায়গা পাননি প্রাক্তন পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস। কিছু দিন আগে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী হাবড়ার সংগঠনের কাজ পরিচালনা করার জন্য একটি কমিটি তৈরি করেছিলেন। তাতে নীলিমেশের নাম ছিল। তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, জেলে যাওয়ার আগে বালুর সঙ্গে নীলিমেশের দূরত্ব বেড়েছিল। জেলা সভাধিপতি জানান, আগের কমিটির এখন আর কোনও অস্তিত্ব নেই। নির্বাচনী কমিটিই এখন কাজ করবে।
এই কমিটি নিয়ে হাবড়ার সিপিএম নেতা আশুতোষ রায়চৌধুরীর টিপ্পনী, ‘‘বালুকে তৃণমূল ভুলতে পারছে না। বালুর যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সেই সংস্কৃতির পাদুকা মাথায় নিয়ে তৃণমূল এগোতে চাইছে। সে কারণেই কমিটিতে বালুর ঘনিষ্ঠদের রাখা হয়েছে।’’ বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার প্রাক্তন সভাপতি তাপস মিত্র বলেন, ‘‘বালু হয় তো জেলে বসেই কমিটি তৈরি করেছেন, সে জন্য তাঁর ঘনিষ্ঠরা রয়েছেন! তিনি হয় তো জেলে বসে অনুব্রত মণ্ডলের মতো ভোটও পরিচালনা করবেন।’’