—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কল আছে, কিন্তু জল পড়ে না। সাবমার্সিবল পাম্প আছে, কিন্তু সেচের জল ওঠে না। অথচ এই বিধানসভার মাঝ দিয়েই গিয়েছে দামোদর। যন্ত্রের সাহায্যে বালি তোলার জন্যই জলস্তর কমছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি।
খণ্ডঘোষ জুড়ে রাস্তার দু’ধারে রয়েছে অসংখ্য চালকল, সিলিকনের কারখানা, ইটভাটা। চালকলের ছাইয়ে বেশির ভাগ মানুষ বিরক্ত। পরিবেশ দূষণও নিত্য সঙ্গী। আবার দু’টি ব্লক দামোদরের দুই পাড়ে হলেও সরাসরি কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি এত দিনেও। দুই পাড়ের বাসিন্দাদের ভরসা নৌকাই। কিন্তু এ সব নিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলই উচ্চবাচ্চ্য করে না। আসলে বালিঘাট কিংবা চালকলে কাজ করেই খণ্ডঘোষ-সহ তৎসংলগ্ন এলাকার কয়েক হাজার মানুষের পেটে ভাত জোটে। ভোট হারানোর ভয়ে অবাধে বালি তোলা কিংবা পরিবেশ-বান্ধব চালকল কেন হবে না, সে নিয়ে প্রশ্ন তোলে না কেউ।
পূর্ব বর্ধমানের মধ্যে পড়লেও খণ্ডঘোষ বিধানসভা বিষ্ণুপুর লোকসভার আওতায় পড়ে। পুরো এলাকা জুড়েই ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। চায়ের দোকান, পাড়ার মোড়, গ্রামের আটচালায় ভোট নিয়ে তেমন আলোচনাও নেই। পলেমপুর থেকে কামালপুর যাওয়ার বাঁধের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন কমল শেখ। লোকসভা ভোটের প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি বললেন, “ভোট নিয়ে আমাদের আগ্রহ নেই। যে ভোট রাস্তা ঠিক করতে পারে না, যে ভোট পানীয় জল দিতে পারে না, সেই ভোটে আমাদের কি যায়, কি-ই বা আসে।” পাশে দাঁড়ানো অনিল সাহাও বলেন, “আমাদের এলাকায় জলের অভাব ছিল না। কিন্তু দামোদরের বুকে বড় বড় যন্ত্র বসিয়ে যথেচ্ছ হারে বালি তোলায় জলস্তর হু হু করে নামছে। সাবমার্সিবলেও জল উঠছে না।”
পঞ্চায়েত বা ব্লক থেকে বসানো নলকূপে চাপ দিলে ফ্যাঁসফ্যাঁস আওয়াজ বার হয়। জল ওঠে না। আর যে সব জায়গায় জল মেলে বা নলবাহিত রাস্তার কলে জল পড়ে সেখানে ভোর থেকে লাইন পড়ে যায়। ‘জল জীবন মিশন’ প্রকল্পে বিভিন্ন গ্রামে বাড়িতে নলবাহিত কল পৌঁছেছে। কিন্তু কখন জল আসে বোঝা যায় না।
দামোদরের একপাড়ে খণ্ডঘোষ ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েত আর গলসি ২ ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েত নিয়ে খণ্ডঘোষ বিধানসভা। গলসির দু’টি ব্লকে বিজেপির ‘জোর’ আছে। সেটা গত লোকসভা, বিধানসভার পরে পঞ্চায়েতেও দেখা গিয়েছে। তবে খণ্ডঘোষ ব্লকে একচেটিয়া রাজ তৃণমূলের। এই ব্লকে ৩৪% ভোটার সংখ্যালঘু। এ ছাড়াও তফসিলিদেরও প্রচুর ভোট রয়েছে।
উন্নয়ন-অনুন্নয়নকে পাশে সরিয়ে লক্ষ্মীর ভান্ডারকেই সামনে রেখে প্রচার করছে তৃণমূল। খণ্ডঘোষের ব্লক সভাপতি অপার্থিব ইসলামের দাবি, “লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য আগের থেকেও মহিলাদের ভোট আমরা বেশি পাব। তফসিলি মহিলাদের সব ভোটই আমাদের বাক্সে পড়বে।’’ যদিও বিজেপির বিনোদ ঘোষদের দাবি, লক্ষ্মীর ভান্ডার মহিলাদের স্বনির্ভর করছে না। বরং ওই টাকা দিয়ে পিছন পথে বিদ্যুতের বিল বা জিনিসের দাম বাড়াচ্ছে রাজ্য সরকার। বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রের দাবি, “লক্ষ্মীর ভান্ডার কিছু মহিলাকে প্রভাবিত করলেও বাস্তব অবস্থাটা বেশির ভাগই জানেন। আমরাও তো অন্নপূর্ণা যোজনার মাধ্যমে ৩০০০ টাকা করে দেব বলছি।”
সিপিএমের মুখে শোনা যাচ্ছে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়েও সন্ত্রাসের অভিযোগ। সঙ্গে যোগ হচ্ছে তৃণমূলের ‘দ্বন্দ্ব’, ১০০ দিনের কাজের দুর্নীতি। খণ্ডঘোষের একাধিক পঞ্চায়েতে দুর্নীতি নজরে আসায় ১০০ দিনের প্রকল্পে টাকা ফেরত দিতে হয়েছিল। ব্লক সভাপতি আর বিধায়কের এলাকা ভাগাভাগির কথাও কান পাতলেই শোনা যায় এখানে। ‘দ্বন্দ্বের’ কাঁটা রয়েছে গলসি ২ ব্লকের প্রাক্তন ও বর্তমান ব্লক সভাপতির মধ্যেও।
বিজেপির দাবি, খণ্ডঘোষ বিধানসভায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘চোরাস্রোত’ বইছে। শাসক দলের মধ্যেই অবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে। যদিও বিধায়ক (খণ্ডঘোষ) নবীনচন্দ্র বাগ বলেন, “গত লোকসভার চেয়েও বেশি ভোটে জিতব।”