পুলওয়ামার শহিদ জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক অজিত মাহাতো। ঝাড়গ্রামে। নিজস্ব চিত্র ।
সন্দেশখালি নিয়ে জঙ্গলমহলেও সুর চড়াচ্ছে গেরুয়া ও বাম শিবির। এমন আবহে পুলওয়ামার শহিদ জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানিয়ে কৌশলী প্রচারে নামছে তৃণমূল। অতীত উস্কে দিয়ে জঙ্গলমহলে শান্তি রক্ষায় রাজ্যের ভূমিকা মনে করাচ্ছে তারা।
সূত্রের খবর, পুলওয়ামার ঘটনার পঞ্চম বর্ষপূর্তিতে জঙ্গলমহলে শান্তি অটুট রাখতে বিনা রক্তপাতে রাজ্য সরকারের সাফল্য তুলে ধরা হবে। আসন্ন ভোটের প্রচারে থাকবে বিনা রক্তপাতে শান্তি ফেরানোর সাফল্য-কথা। বুধবার ঝাড়গ্রামে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অজিত মাহাতোর উদ্যোগে পুলওয়ামার শহিদদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন কর্মসূচি হয়। শহিদ ৪০ জন সিআরপি জওয়ানের ছবিতে শ্রদ্ধা জানান তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। অজিত মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘বাম আমলে জঙ্গলমহলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি একাধিক পুলিশ কর্মী ও আরক্ষা বাহিনীর জওয়ান প্রাণ হারিয়েছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরেছে। প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। বিনা রক্তপাতে অর্জিত সেই শান্তি ধরে রাখতে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আগামী নির্বাচনেও সফল হব।’’
লোকসভা ভোটের আগে সরকারি পরিষেবা প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়িয়েছে রাজ্য। লক্ষ্মীর ভান্ডারে টাকার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। তবে অস্বস্তি বাড়িয়েছে সন্দেশখালি। সেখানে মহিলা নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। সেই আঁচ থেকে জঙ্গলমহলকে বাঁচাতেই কি পাল্টা কৌশলী প্রচারে যাচ্ছে তৃণমূল? জেলা তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতা মানছেন, ‘‘বিরোধীরা সাধারণ মানুষের মধ্যে, বিশেষত মহিলাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছে। ফলে, বাম আমলে রক্তাক্ত অধ্যায়ের পরে তৃণমূলের জমানায় শান্তি ফেরানোর বিষয়বস্তুও থাকবে ভোট প্রচারে।’’
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কে সিআরপির গাড়িতে আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জন জওয়ান শহিদ হন। লোকসভা ভোটের আগে সেই শহিদ জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানিয়ে পরোক্ষে গেরুয়া শিবিরের উপর চাপ বাড়ানোই তৃণমূলের কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, তৃণমূলের শাসনে এখনও পর্যন্ত জঙ্গলমহলে কোনও পুলিশ কিংবা আরক্ষা বাহিনীর সদস্য মাওবাদীদের হাতে আক্রান্ত হননি। বরং জঙ্গলমহল মাওবাদী শূন্য বলে পর্যটনের যথেষ্ট শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে বলে দাবি করা হয়। পুলিশের নিরন্তর নজদারির ফলে জঙ্গলমহলে শান্তি বজায় রয়েছে বলে যেমন তৃণমূল সূত্রের দাবি, তেমনই শান্তির পরিবেশে প্রত্যন্ত এলাকায় উন্নয়ন পৌঁছে দেওয়াও সহজ হয়েছে বলে দাবি শাসকদলের।
ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু বলছেন, ‘‘সন্দেশখালি থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে তৃণমূল এখন তড়িঘড়ি পুলওয়ামার শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজেদের সাফল্য প্রচার করতে চাইছে। মনে রাখতে হবে, ২০১১ সালের আগে মাওবাদী-তৃণমূল জোটই জঙ্গলমহলকে অশান্ত করে তুলেছিল।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপকুমার সরকারেরও দাবি, ‘বাম আমলে মাওবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জঙ্গলমহলকে রক্তাক্ত করে তুলেছিল তৃণমূল। রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন তৃণমূল এখন দৃষ্টি ঘোরাতে পুলওয়ামার শহিদদের স্মরণ করছে।’’