সায়নী ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের এক দিন আগে আবার পঞ্চায়েত ভোটের স্মৃতি উস্কে দিল ভাঙড়। দলীয় প্রচার সেরে বাড়িতে ফেরার সময় তৃণমূল কর্মীদের লক্ষ্য করে বোমা মারার অভিযোগ উঠেছে আইএসএফের বিরুদ্ধে। শনিবার ভোটের আগে উত্তর কাশীপুর থানার বানিয়াড়া গ্রামের এই ঘটনায় এক শিশু ও পঞ্চায়েত সদস্য-সহ ১০-১২ জন জখম হয়েছেন বলে দাবি। সরাসরি নওশাদ সিদ্দিকির দল আইএসএফের দিকে আঙুল তুলেছে তৃণমূল। দলীয় প্রার্থী সায়নী ঘোষ জানিয়েছেন, ভোটের দিন ভাঙড়ে থাকবেন তিনি। উল্টো দিকে, আইএসএফের দাবি, তৃণমূলই যা করার করেছে। এখন তাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে!
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রাতে এলাকার তৃণমূল নেতা রফিক খানের নেতৃত্বে কর্মীরা দলীয় কর্মসূচি সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময় রাতের অন্ধকারে তৃণমূল কর্মীদের নিশানা করে আইএসএফের লোকেরা এলোপাথাড়ি বোমা ছোড়েন বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় রফিক ও এক শিশু ১০-১২ জন জখম হন। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জনকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বাকিরা জিরানগাছা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি। তাঁদের দেখতে গিয়েছেন ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তথা ভাঙড়ের পর্যবেক্ষক শওকত মোল্লা।
শুক্রবার সায়নীও আহতদের দেখতে গিয়েছেন হাসপাতালে। তিনি বলেন, ‘‘হেরে যাওযার ভয়ে সন্ত্রাস করছে আইএসএফ। নির্বাচনের দিন আমি ভাঙ্গড়ে থাকব। সিপিএম, বিজেপি ও আইএসএফ আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ভাঙ্গড়কে অশান্ত করার চক্রান্ত করছে।’’ রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘পায়ের তলায় মাটি সরে গিয়েছে। মানুষ আর সঙ্গে নেই। সেই কারণে সন্ত্রাস করে মানুষকে ভয় দেখিয়ে জোর করে ভোট লুট করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই হিংসার ঘটনা প্রমাণ দিচ্ছে, ভাঙড়ে বিরোধীদের কোনও অস্তিত্ব নেই।’’
গত পঞ্চায়েত ভোটে বার বার উত্তপ্ত হয়েছিল ভাঙড়। প্রাণহানিও ঘটেছিল। লোকসভা ভোটের আগেই সেই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় সাধারণ মানুষের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, ভোট নির্বিঘ্নেই মিটবে তো? পঞ্চায়েতে হিংসার ঘটনার পর ভাঙড়কে কলকাতা পুলিশের আওতায় আনা হয়েছে। কলকাতা পুলিশের অধীনে থাকা ভাঙড়ের কিছু এলাকা জয়নগর এবং কিছু এলাকা যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রে বুথ এবং ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা যথাক্রমে ১২৪ ও ৮০। যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে তা ২৮৪ এবং ১৬৬টি। এ দিকে, কলকাতা পুলিশ এলাকা যেখানে ৩১১ বর্গকিলোমিটারের আশপাশে, সেখানে ভাঙড়ের দু’টি ব্লক মিলিয়েই আয়তন প্রায় ২৭৩ বর্গকিলোমিটার। এই বিশাল জায়গা সামাল দিতে আটটি থানা তৈরির সিদ্ধান্ত হলেও এখনও বেশি সংখ্যক পুলিশকর্মী মোতায়েন করতে হলে নির্ভর করতে হচ্ছে সেই লালবাজারের উপরেই। জানা যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলার সমস্যা তৈরি হলে এখনও সেই ৩০ কিলোমিটার দূরের লালবাজার বা কলকাতা থেকেই ভাঙড়ে বাহিনী পাঠাতে হয়। পাশাপাশি, পুলিশকর্মীদের চিন্তা বাড়িয়েছে ভাঙড়ের গ্রাম্য চরিত্র। এ সব কারণে পুলিশ আধিকারিকদের একাংশের মনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, বড় কিছু ঘটে গেলে সামাল দেওয়া সম্ভব হবে তো?