গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ সরকারের বন দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে পিলিভিটে বাঘের হামলায় মৃত্যু ঘটেছে ২২ জনের। কখনও ব্যাঘ্রপ্রকল্পের সংরক্ষিত এলাকায় মাশরুম সংগ্রহ করতে গিয়ে। কখনও বা ভোররাতে গ্রামের পাশের জমিতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে। বার বার গ্রামবাসীরা বন দফতরে অভিযোগ জানালেও ‘মানুষখেকোর তাণ্ডব’ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের উন্নয়ন কিংবা দুষ্কৃতী দমন নয়, এ বারের লোকসভা ভোটে পশ্চিম তরাই লাগোয়া পিলিভিটে সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয় বাঘের হামলায় মৃত্যুর ঘটনা। ভোটের মুখে যা বিজেপি প্রার্থী জিতিন প্রসাদকে চিন্তায় ফেলেছে বলেছে দলের একাংশ মনে করছেন। এ নিয়ে এলাকার প্রায় ৩০০টি গ্রামের বাসিন্দাদের প্রশ্ন ও ক্ষোভের মুখোমুখি হতে হচ্ছে কেন্দ্র এবং উত্তরপ্রদেশের শাসকদলকে।
এ বার পিলিভিট লোকসভা কেন্দ্রে বিদায়ী সাংসদ বরুণ গান্ধীকে প্রার্থী করেনি বিজেপি। তার বদলে টিকিট দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা তথা বর্তমানে যোগী আদিত্যনাথের সরকারের পূর্তমন্ত্রী জিতিনকে। যা নিয়ে দলের একাংশে ক্ষোভ রয়েছে বলেও প্রকাশিত কয়েকটি খবরে দাবি। বরুণের মা মেনকা ২০১৪-১৯ এই কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন। তাঁর সময়ও বাঘের হামলায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল পিলিভিটে। ২০১৯-এ থেকে তা আরও বাড়ে। সরকারি নথি বলছে, সে বছরের নভেম্বর থেকে পিলিভিট ব্যাঘ্রপ্রকল্পের লাগোয়া গ্রামগুলির মোট ২২ জন বাসিন্দা বাঘের শিকার হয়েছেন। আবার গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে বাঘ পিটিয়ে মারার অভিযোগও উঠেছে।
এমনকি, ৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিজেপি প্রার্থী জিতিনের সমর্থনে পুরানপুর এলাকায় সমাবেশ করার কয়েক ঘণ্টা আগেই বাঘের হামলায় নিহত হয়েছিলেন ৫৫ বছর বয়সি কৃষক ভোলে রাম। ভোটের বাজারে বিষয়টিকে প্রচারের অস্ত্র করেছে বিরোধীরাও। পিলিভিটে জিতিনের প্রতিদ্বন্দ্বী সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী তথা প্রাক্তন মন্ত্রী ভাগবত শরণ গঙ্গওয়ার ১১ এপ্রিল নিহত ভোলে রামের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে মোদী এবং যোগী সরকারের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের প্রাণরক্ষার বিষয়টি উপেক্ষা করার অভিযোগ তুলেছেন।
এর পরে গত ১২ এপ্রিল সমাজবাদী প্রধান অখিলেশ যাদবের প্রচারসভাতেও অন্যতম বিষয় হয়ে উঠেছিল বাঘের হানায় মৃত্যুর ঘটনা। আগামী ১৯ এপ্রিল প্রথম দফায় উত্তরপ্রদেশের আটটি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট। তার মধ্যে অন্যতম পিলিভিট ‘বিজেপির নিরাপদ ঘাঁটি’ বলেই পরিচিত। কিন্তু এ বারের ভোটে ‘মানুষখেকো’ বাঘ এবং গ্রামবাসীদের নিরাপত্তা সেখানে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়দের একাংশ।