জনহীন: বেহালার ম্যান্টনে ফাঁকা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কার্যালয়। শনিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
গলির রাস্তা জনমানবহীন। বেশ কিছু ক্ষণ দাঁড়ালে পাড়ার দু’-এক জনকে চোখে পড়ছে। একদা মন্ত্রীর অফিসও আজ তালাবন্ধ। ধুলো, জং ধরা তালা দীর্ঘদিন অফিস না খোলার সাক্ষী। সেই অফিস থেকে সামান্য দূরত্বে করা হয়েছে তৃণমূলের কাপড় ঘেরা অস্থায়ী ক্যাম্প। সেখানেও ভিড় নজরে এল না। যে দু’-তিন জন বসে, তাঁরাও যে যাঁর মোবাইলে বুঁদ।
বেহালার ম্যান্টনে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের একদা অফিসের সামনের ছবি দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এলাকায় ভোট হচ্ছে। এমনকি, ভোটের শনিবারে জেলবন্দি বিধায়কের অফিস চত্বরের ‘হাল’ দেখে পাড়া-প্রতিবেশী কিংবা তৃণমূল কর্মীরাও মেলাতে পারছেন না আগের সঙ্গে। কারণ জিজ্ঞাসা করতেই ক্যাম্পে বসা এক তৃণমূল কর্মী উত্তর দিলেন, ‘‘অভিভাবকই তো নেই, ভোটে ভিড় জমবে কী ভাবে?’’
বছর দুই আগের শেষ কলকাতা পুর নির্বাচন এবং তার আগের বিধানসভা নির্বাচনে এই এলাকায় ছিল উল্টো ছবি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সারা বছর তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের ভিড়ে গোটা রাস্তা গমগম করত। বাইক, গাড়ির ভিড়ে জমজমাট থাকত এলাকা। অফিসে বসেই গোটা এলাকা দেখাশোনা করতেন বিধায়ক। ভোটের দিন হলে সেই ভিড় বেড়ে যেত আরও কয়েক গুণ। কার্যত পা রাখার জায়গা থাকত না। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকে এই গলিতে উৎসবের মেজাজ থাকত। কেউ পতাকা নিয়ে দৌড়চ্ছেন, কারও আবার পোস্টারের দায়িত্বের ব্যস্ততা। ভিড় কাটিয়ে পাড়ায় ঢোকাই কষ্টকর হত। ভোটের দিন গলিতে পা রাখা যেত না।’’ ‘দাদা’র গ্রেফতারির পর থেকে ধীরে ধীরে মিলিয়েছে সেই ভিড়।
ডায়মন্ড হারবার রোডের ম্যান্টনের কাছে ছিল বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অফিস। গলির ভিতরে তেতলা বাড়ির একতলায় অফিস থাকলেও করোনার সময়ে কিছুটা বদল হয়। গলির মুখে রাস্তার ধারে বিধায়কের বসার জন্য আরও একটি অফিস হয়। ওই দুই অফিসেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় বসতেন। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, সকাল হোক বা বিকেল, প্রতিদিন এক বার হলেও অফিসে যেতেন তিনি। ক্যাম্পে বসা তৃণমূল কর্মীদের বক্তব্য, বরাবরই ভোটের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকত পার্থের উপরে। গোটা বেহালায় কোথায় কী হচ্ছে, সব নজরে রাখতেন। যে ভোটই হোক, এক বার হলেও প্রার্থী নিজে ‘দাদা’র সঙ্গে দেখা করে যেতেন।
এ দিন ভিড়হীন গলির মুখে রাখা বিধায়কের নামাঙ্কিত ফলকও অযত্নে খসে পড়ছে। দুপুরে এক বার দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়ের গাড়ি সেই গলির মুখে দাঁড়াল বটে, তবে গাড়ি থেকে নামলেন না প্রার্থী। গাড়ি দেখেই ঘিরে ধরলেন দু’-তিন জন দলীয় কর্মী। তাঁদের উদ্দেশে ‘সব দেখে নিস’ বলে এলাকা ছাড়লেন প্রার্থী।