গ্রাফিক— সনৎ সিংহ
নির্যাতিত হননি জানিয়ে সন্দেশখালির মহিলাদের বক্তব্য বেশ কিছু ভিডিয়ো (ওই সমস্ত ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) মারফত ছড়িয়ে পড়তেই জাতীয় মহিলা কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল তৃণমূল। এ ব্যাপারে তারা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করবে বলে জানিয়েছিল শুক্রবার। সেই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নির্বাচন কমিশনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করল জাতীয় মহিলা কমিশন।
শুক্রবার জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধান রেখা শর্মা একটি চিঠি দিয়ে ওই অভিযোগ জানিয়েছেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারকে। চিঠিতে রেখা লিখেছেন, সন্দেশখালির নির্যাতিতাদের বাধ্য করা হচ্ছে নির্যাতনের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে। আর এই কাজ করাচ্ছেন তৃণমূলের কর্মীরাই। মহিলা কমিশনের বক্তব্য, বাংলার শাসকদল হওয়ার জোরেই এই কাজ করাচ্ছে তৃণমূল।
এক সপ্তাহে সন্দেশখালির ঘটনা আচমকাই উল্টো দিকে ঘুরে গিয়েছে। গোপন ক্যামেরায় বন্দি একের পর এক ভিডিয়োয় প্রকাশ্যে এসেছে সন্দেশখালি-২ ব্লকের মণ্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়াল, বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী তথা সন্দেশখালি আন্দোলনের অন্যতম মুখ রেখা পাত্র এবং অন্য মহিলাদের বক্তব্য। আনন্দবাজার অনলাইন এই সমস্ত ভিডিয়োর সত্যতাও যাচাই করেনি। তবে ওই ভিডিয়োয় প্রত্যেককেই বলতে শোনা গিয়েছে, ধর্ষণ এবং নির্যাতনের অভিযোগ সত্য নয়। গঙ্গাধরকে এমনও বলতে শোনা গিয়েছে যে, গোটা আন্দোলনটাই সাজানো এবং এর নেপথ্যে রয়েছে বাংলায় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের হাতযশ। এই ভিডিয়োগুলিকে সামনে রেখেই এ বার বিজেপির বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল। যার ফলে ‘বিড়ম্বনা’য় পড়েছে জাতীয় মহিলা কমিশনও।
কারণ, কমিশনের প্রধান রেখা নিজে সন্দেশখালিতে এসেছিলেন ‘নির্যাতিতা’দের বক্তব্য শুনতে। সরব হয়েছিলেন মহিলাদের উপর হওয়া ‘নির্যাতন’-এর বিরুদ্ধে। অভিযোগ জানিয়েছিলেন দেশের রাষ্ট্রপতির কাছেও। কিন্তু তৃণমূলের দাবি, এক মহিলা অভিযোগ করেছেন যে, দিল্লির মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা সন্দেশখালিতে গিয়ে সাদা কাগজে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগে সই করিয়ে নিয়েছেন।
শুক্রবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের মুখপাত্র শশী পাঁজা বিষয়টি আলাদা করে তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, সন্দেশখালির গোটা ঘটনাপ্রবাহে রেখা এক জন ‘চক্রান্তকারী’। তাই তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আর্জি জানাতে চলেছে তৃণমূল। তৃণমূল এ-ও বলে যে, মহিলা কমিশনের প্রধান নিজের ‘পদের অপব্যবহার’ করেছেন।
তৃণমূলের তরফে এই অভিযোগ ওঠার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের কাছে পৌঁছয় রেখার চিঠি। তাতে রেখা জানিয়েছেন, সন্দেশখালির ঘটনায় নানা সংবাদমাধ্যম থেকে পাওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে তাঁরা একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছিলেন। সেই কমিটির সদস্যেরা সন্দেশখালিতে গিয়ে সেখানকার মহিলাদের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। সন্দেশখালির বহু মহিলা এসে তাঁদের জানিয়েছিলেন, কী ভাবে সন্দেশখালির জেলা পরিষদের সদস্য শেখ শাহজাহানের সঙ্গীদের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তাঁরা। এ ব্যাপারে কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু এখন তাঁরা জানতে পেরেছেন, ওই মহিলাদের বাধ্য করা হচ্ছে তাঁদের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে। যা করাচ্ছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। রেখার অনুরোধ, ‘‘কমিশন অবিলম্বে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করুক।’’