Lok Sabha Election 2024

পশ্চিমবঙ্গে হিমন্ত-তাস বিজেপির

বঙ্গেও একই কায়দায় শুভেন্দু অধিকারীকে দলে টেনেছিল বিজেপি। ২০১৬ সালের তিন আসন থেকে ২০২১-এর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিজেপির আসন বেড়ে হয় ৭৭।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৪ ০৮:১৭
Share:

হিমন্ত বিশ্বশর্মা। — ফাইল চিত্র।

অসমে ৪০ দিনে ১৪টি লোকসভার ১১০টি বিধানসভা কেন্দ্র চষে ফেলে ১১৭টি জনসভা! তা বলে বিশ্রামের সময় নেই। কারণ, অসমে ভোট মেটার তিন দিনের মাথায়, আজ থেকেই বঙ্গবিজয়ের লক্ষ্যে তাঁকে সামনে রেখে এগোনো শুরু করল বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী তথা উত্তর-পূর্বে নেডা জোটের প্রধান হিমন্তবিশ্ব শর্মা এ বার পশ্চিমবঙ্গের সামনে তুলে ধরতে চলেছেন তাঁর ‘সাফল্য’-কোলাজ। প্রথম দিনেই তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র করলেন সন্দেশখালি ও এনআরসিকে।

Advertisement

হুগলির বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থনে শুক্রবার বলাগড়ের কামারপাড়ায় সভায় হিমন্ত বলেন, ‘‘বাংলায় লিটারপিছু পেট্রল ১০৩ টাকা, অসমে ৯৬ টাকা। এখানে সরকারি কর্মীদের ১৪ শতাংশ হারে ডিএ মিললে, অসমে ৫০ শতাংশ মেলে। বাংলায় দিদি ভাইপোকে ছাড়া আর কাউকে কিছুই দিতে চান না।’’ এ-ও দাবি করেন, ‘‘অসমে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে প্রথম বছরে ১ লক্ষ সরকারি চাকরি দিয়েছি। তা নিয়ে মামলা হয়নি। বাংলায় শিক্ষকদের ২৩ হাজার চাকরি হয়েছে। তার টাকা শিক্ষামন্ত্রীর ঘরে পাওয়া গিয়েছে। এখানে লক্ষীর ভান্ডারে এক হাজার টাকা, অসমে ১২৫০ টাকা।’’ ব্যারাকপুরে অর্জুন সিংহের সমর্থনে সভাতেও একই কথা বলেন তিনি।

২২ বছর কংগ্রেসে থাকার পরে, নেতৃত্ব নিয়ে টানাপড়েনে ২০১৪ সালে ইস্তফা দিয়েছিলেন হিমন্ত। ২০১৫ সালের অগস্টে হিমন্ত বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, অনুগত বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে। পরের বছর কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করেও হিমন্তের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া হয়নি। গদিতে বসেন সর্বানন্দ সোনোয়াল। যদিও পরের পাঁচ বছর হিমন্তকেই বিরোধী ও সংবাদমাধ্যম ‘সুপার সিএম’ নামে ডেকেছে। ২০২১ সালে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী না করার ভুল করেননি। কারণ, গোটা উত্তর-পূর্বকে ‘কংগ্রেসমুক্ত’ করার পরিকল্পনায় তিনিই ছিলেন গেরুয়া শিবিরের ‘চাণক্য ও চন্দ্রগুপ্ত’।

Advertisement

বঙ্গেও একই কায়দায় শুভেন্দু অধিকারীকে দলে টেনেছিল বিজেপি। ২০১৬ সালের তিন আসন থেকে ২০২১-এর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিজেপির আসন বেড়ে হয় ৭৭। এ বার ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে লোকসভা ভোটে আসন বাড়াতে তাই ‘অসম মডেল’কেও বাংলার জনসভায় তুলে ধরতে চাইছে দল।

অসমে কী কী সাফল্যের দাবি করবে বিজেপি? হিমন্ত-শিবির হিসাব নিয়ে তৈরি। যে ভাবে তিনি মাদক-বিরোধী অভিযান চালিয়েছেন, দুষ্কৃতী দমনে পুলিশকে এনকাউন্টারের স্বাধীনতা দিয়েছেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া ও সরকারি কাজ দুর্নীতিমুক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছেন, ‘অরুণোদয়’ প্রকল্পে মহিলাদের দেড় হাজার টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন— সেই সব থাকবে উপরের দিকে। পাশাপাশি, বহুবিবাহ বন্ধের ঘোষণা, বাল্যবিবাহ বন্ধে আইন আনা ও ব্যাপক ধরপাকড়, সরকারি মাদ্রাসা বন্ধ করা, ‘লাভ জেহাদে’র বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও ‘জেহাদি দমন’ অভিযানের অংশ বলে দাবি করে বহু ‘বেআইনি’ মাদ্রাসায় বুলডোজ়ার চালানোর মতো সিদ্ধান্তও নিয়েছেন হিমন্ত। সত্র ও অরণ্যের জমি থেকে জবরদখল হটাতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছেন। এমন সংবেদনশীল বিষয়েও অসমে তেমন আন্দোলন হয়নি। একই ভাবে সিএএ বলবৎ হওয়ার পরে সব বিরোধী দল-সংগঠন বিরোধিতায় নামলেও সরকার-বিরোধী আন্দোলনে কার্যত সাড়া মেলেনি।

নেডা জোট শক্তিশালী করে উত্তর-পূর্বে কংগ্রেসের ভিত কেড়েছেন হিমন্ত। মণিপুর-নাগাল্যান্ডে রাজনৈতিক সঙ্কট, জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে শান্তি আলোচনা, এমনকি মণিপুরে কুকি-মেইতেই সংঘাতেও হিমন্ত নিয়েছেন মধ্যস্থের ভূমিকা। যদিও মণিপুরে শান্তি ফেরেনি।
তবু হিমন্ত-মডেল তুলে ধরতে চাইছে দল।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের দাবি, বিজেপির উত্থানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধর্মীয় ও সামাজিক মেরুকরণ বাড়ছে বঙ্গে। তবে অসমে হিমন্ত যে সব কাজ করেছেন ও কথা বলেছেন অবলীলায়, পশ্চিমবঙ্গে সেই পথে চললে পরিস্থিতি ঘোরালো হওয়ার আশঙ্কা। হিমন্ত অবশ্য তাঁর প্রচারের সুর আজই বেঁধে দিয়েছেন। ব্যারাকপুরে তিনি দাবি করেছেন, সন্দেশখালি থেকেই মমতা সরকারের পতন শুরু।

তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘হিমন্তের মতো বাংলা ও বাঙালি-বিরোধীরা এ রাজ্যে বিজেপির হয়ে যত বেশি প্রচার করবেন, তত ভাল। ওঁর আমলেই অসমে নাগরিকত্বের প্রশ্নে অসংখ্য বাঙালি অমানবিকতার শিকার হয়েছেন। ডিটেনশন ক্যাম্পের নামে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের সেই অমানবিকতা গোটা পৃথিবী দেখেছে। দুর্নীতিগ্রস্ত হিমন্ত বিজেপির ওয়াশিং মেশিনে সুযোগ পাওয়ার ঋণ শোধ করতে এসেছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement