ভোট পরবর্তী হিংসার জেরে ঘরছাড়া বেলেঘাটা এলাকার বিজেপি সমর্থকেরা। খন্না এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।
কোথাও এজেন্ট হিসাবে বুথে বসায় বিরোধী কর্মীকে মেরে চোখের কোণ ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোথাও রাতে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। হামলার আশঙ্কায়, ভয়ে দলীয় কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন কেউ কেউ। এ ছাড়াও বাড়ি ভাঙচুর, শাসানি, দেখে নেওয়ার মতো হুমকি তো আছেই। বেলেঘাটা, ট্যাংরা, যাদবপুর, আলিপুর— শনিবার ভোট শেষের পর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় এমন অভিযোগের তালিকা দীর্ঘতর হয়েছে। লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার আগেই কলকাতার একাধিক জায়গায় গোলমালের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, মঙ্গলবার ফল ঘোষণার পরে কী হবে?
ভোটের আগে থেকে অশান্তির নিরিখে বার বার সামনে এসেছিল উত্তর কলকাতার নাম। ভোট মিটতেই সেখানে ফের গন্ডগোলের খবর এসেছে। বিজেপি প্রার্থী তাপস রায়ের এজেন্ট হিসাবে বুথে বসায় এক বিজেপি কর্মীর চোখের কোণ ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আক্রান্ত বিজেপি কর্মী রমেশ সাউ জানান, বেলেঘাটায় ২৮৩ নম্বর বুথে পোলিং এজেন্ট ছিলেন তিনি। ভোট শেষ হতেই রাত ৮টা নাগাদ তাঁর উপরে এক দল লোক হামলা চালায়। অভিযোগ, বাইকে করে তুলে নিয়ে গিয়ে রমেশকে বেধড়ক মারধর করা হয়। মারের চোটে তাঁর চোখের কোণ ফেটে যায়। রমেশের আরও অভিযোগ, ভোটের ফল বেরনোর পরে তাঁকে এলাকাছাড়া করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, শনিবার শেষ দফার ভোট মেটার পরে রাতে টালিগঞ্জে দুই বিজেপি কর্মীর মাথায় বন্দুকের বাট দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ। মারধরে তাঁদের এক জনের দাঁত ভেঙেছে।
ভোটের ফল বেরোনোর আগে বিরোধী দলের কর্মীদের ঘরছাড়া করার ঘটনাও ঘটেছে শহরে। তিন মহিলা-সহ সাত জন উত্তর কলকাতায় বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁরা বেলেঘাটা এবং মানিকতলা থানা এলাকার বাসিন্দা। ঘরছাড়া হিনা শূর, রীতা রজকেরা বলেন, ‘‘আমরা শুধু বিজেপি প্রার্থীর এজেন্ট হিসাবে বুথে বসেছিলাম। তার জেরে আমাদের লাগাতার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। ভয়ে পার্টি অফিসে চলে এসেছি।’’ ছেলেকে নিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন মানিকতলার বাসিন্দা মালতি নাথও। শনিবার রাতে এক দল লোক বাইকে করে এসে তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ।
আক্রান্ত হয়েছেন সিপিএম কর্মীরাও। যাদবপুর কেন্দ্রে ভোটের পরে একাধিক বাম কর্মীর উপরে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, ১০২, ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সিপিএম কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সেখানেও বেশ কয়েক জন আতঙ্কে ঘরছাড়া। প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠছে শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদের দিকে। তৃণমূল যদিও সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে।
শহরের পুরভোটই হোক বা বিধানসভা— একাধিক নির্বাচনে বার বার সামনে এসেছে ভোট পরবর্তী হিংসা। এমনকি, প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এ বার লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার আগেই নির্বাচন পরবর্তী হিংসার একের পর এক অভিযোগ সামনে আসায় মঙ্গলবারের পরে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, সেই আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। আশঙ্কা যে নেহাত অমূলক নয়, তা স্পষ্ট হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সিদ্ধান্তে। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ভোট পরবর্তী হিংসা রুখতে ফল বেরোনোর পরেও কলকাতা পুলিশ এলাকার জন্য ৬০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রেখে দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা যদিও বলেন, ‘‘প্রতিটি অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে। ভোট পরবর্তী হিংসার কোনও ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য প্রতিটি থানাকেই প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের বিশেষ দল এলাকায় টহল দিচ্ছে।’’