(বাঁ দিকে) ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ। ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। আনুষ্ঠানিক ভাবে এই ঘোষণা করার পরেই ওই কেন্দ্রে নতুন চমক দিল তৃণমূল। ব্যারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিকের নির্বাচনী এজেন্ট করা হল অর্জুনের ভাইপো সৌরভ সিংহকে। পাল্টা পার্থের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন ব্যারাকপুরের সাংসদও। ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেওয়ার’ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে ভোট ঘোষণার আগে ক্রমশ উত্তাপ বাড়ছে ব্যারাকপুর কেন্দ্রে।
২০২২ সালে অর্জুনের পাশাপাশি ভাইপো সৌরভও বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। ব্রিগেড সভায় লোকসভার টিকিট না পেয়ে মন বদলেছেন অর্জুন। বৃহস্পতিবারই তিনি জানিয়েছেন, বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। সন্ধ্যায় তাঁর দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা। বিজেপিতে গেলে ব্যারাকপুরের টিকিট দেওয়া হতে পারে অর্জুনকে। এই পরিস্থিতিতে অর্জুনের ভাইপোকে তাঁরই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট করা হল।
এজেন্টের নাম জানিয়ে অর্জুনের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন পার্থ। তিনি বলেন, ‘‘সৌরভকে বঞ্চনা করেছেন অর্জুন। ভাটপাড়ায় তাঁকে টিকিট না দিয়ে নিজের পুত্র পবনকে বিধায়ক করেছেন। ভাটপাড়ায় বিজেপির প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল সৌরভের। সেখানে উনি নিজের ছেলেকে বিধায়ক করে দিলেন। ব্যক্তিস্বার্থের বাইরে গিয়ে অর্জুন কোনও কাজ করেন না। আমি সৌরভকে ভরসা করি। তাই ওকে মুখ্য নির্বাচনী এজেন্ট করেছি।’’ পার্থের বক্তব্যের রেশ ধরেই অর্জুনের ভাইপো সৌরভের তোপ, ‘‘অর্জুন স্বার্থপর। কাজ হয়ে গেলেই সকলকে ছুড়ে ফেলে দেন। আমি এজেন্ট। দল এটা ঠিক করেছে। অর্জুনই আমাকে বিজেপিতে জোর করে নিয়ে গিয়েছিল। দরকার ছাড়া উনি কোনও কাজ করেন না।’’
পার্থের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছেন অর্জুন। সন্দেশখালিকাণ্ডের অন্যতম মূল অভিযুক্ত শাহজাহান শেখের সঙ্গে পার্থের যোগাযোগের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘নৈহাটি বিধানসভার সঙ্গে শাহজাহানদের যোগ আছে। নৈহাটির বিস্তীর্ণ এলাকায় শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের জমি কেনা আছে। বিধায়কের সাহায্য ছাড়া এটা সম্ভব নয়।’’ নৈহাটির বিধায়ক পার্থকেই এ ক্ষেত্রে অভিযোগের কেন্দ্রে রেখেছেন তিনি। সেই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘নৈহাটির বিধায়ক এবং মন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ব্যারাকপুরে লড়তে আসুন। দল যদি আমাকে প্রার্থী করে, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে হিসাব বুঝিয়ে দেব।’’
সৌরভকে এজেন্ট করা এবং অর্জুনের হুঁশিয়ারি প্রসঙ্গে পার্থ পাল্টা বলেন, ‘‘অর্জুন বিজেপিতে যাচ্ছেন। ওকে প্রার্থী করা হবে কি না, তা বিজেপির ব্যাপার। কিন্তু বিজেপি দলের নিচুতলার কর্মীদের বিশেষ গুরুত্ব দেয় না।’’
২০১৯ সালে তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন অর্জুন। বিজেপির টিকিটেই ভোটে জিতে সাংসদ হন। কিন্তু পরে আবার তৃণমূলে ফিরে আসেন। অর্জুন জানিয়েছেন, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে তৃণমূল টিকিট দেবে— এই প্রতিশ্রুতি পেয়েই তিনি দলে ফিরেছিলেন। ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে তৃণমূল প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে অর্জুনও গিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা যায়, ব্যারাকপুরের প্রার্থী হিসাবে নৈহাটির বিধায়ক তথা রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের নাম করা হচ্ছে। এর পর সে দিনই সন্ধ্যায় অর্জুন জানিয়ে দেন, তিনি হতাশ। তাঁকে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা পালন করা হয়নি। অর্জুনকে প্রার্থী না করায় তাঁর কেন্দ্রে অনুগামীরা বিক্ষোভও দেখান। তাঁর বিজেপিতে ফেরার জল্পনা যখন তুঙ্গে, অর্জুন নিজেই জানিয়ে দেন, তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে সন্ধ্যায় দিল্লি যাচ্ছেন। টিকিট পেলে ব্যারাকপুর থেকে পার্থের বিরুদ্ধে ভোটেও লড়বেন।