মোদীর প্রথম সভা কেন আরামবাগে? প্রশ্ন তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মার্চ মাসের প্রথম দিনেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভোটের প্রচার শুরু বাংলায়। আর প্রচারের জন্য হুগলি জেলার আরামবাগকে প্রথম আসন হিসাবে বেছেছেন তিনি। বিজেপি বলছে, গত বার সামান্য ভোটে হেরে যাওয়া আসনে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলেই বাছা হয়েছে আরামবাগকে। তবে এই আসনের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের যুক্তি একেবারে আলাদা। তিনি মনে করেন, সংসদে যে মহিলা সাংসদরা বেশি সরব হন শুরুতে তাঁদের কেন্দ্রেই আসতে চান প্রধানমন্ত্রী। সেই হিসাবেই পর পর আরামবাগ, কৃষ্ণনগর এবং বারাসতকে বেছেছেন মোদী।
আগামী ১ মার্চ আরামবাগের সভার পরেই ২ মার্চ কৃষ্ণনগরে সভা করার কথা মোদীর। এর পরে ৬ মার্চ মোদীর সভা বারাসতে। ঘটনাচক্রে এই তিন আসনেই গত লোকসভা নির্বাচনে জয় পান তৃণমূলের তিন মহিলা প্রার্থী। অপরূপা নিজের কথা বলার পাশাপাশিই মনে করিয়ে দেন কৃষ্ণনগরের মহুয়া মৈত্র এবং বারাসতের কাকলি ঘোষ দস্তিদারের কথা। অপরূপার দাবি, প্রধানমন্ত্রী বেছে বেছে সংসদে সরব মহিলা সাংসদদের কেন্দ্রেই আসছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আরামবাগে আসবেন তাঁকে স্বাগত। কিন্তু যখন বন্যায় আরামবাগ ভেসে যায়, তখন প্রধানমন্ত্রীকে পাওয়া যায় না। তখন মানুষের পাশে থাকেন মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রীই। আর বিজেপির কাজ হল দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করা। প্রধানমন্ত্রীও বেছে বেছে আসছেন সরব মহিলা সাংসদদের কেন্দ্রেই।’’ একই সঙ্গে অপরূপার প্রশ্ন, ‘‘মোদী তো হুগলিতে যেতে পারতেন। সেখানকার মহিলা সাংসদ (বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়) তো কোনও কাজই করেননি। কিন্তু তা তো তিনি করছেন না।’’
এর জবাব দিয়েছেন লকেট। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আরামবাগে এ বার আমাদের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। একই ভাবে কৃষ্ণনগর ও বারাসতেও রয়েছে। আর দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, যে সব আসনে গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জিততে পারেননি সেগুলি দিয়েই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রচার শুরু করবেন। পরে হুগলিতেও আসবেন তিনি।’’
বৃহস্পতিবার মোদীর সভা হবে আরামবাগের কালীপুরে। জোরকদমে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে বিজেপির তরফে। এক দিকে যেমন মঞ্চ বাঁধার কাজ চলছে, তেমনই সাংগঠনিক প্রস্তুতিও চলছে। বিজেপি ঠিক করেছে, শুধু আরামবাগ লোকসভা এলাকা নয়, আশপাশের বেশ কয়েকটি লোকসভা এলাকার কর্মী-সমর্থকেরা আসবেন মোদীর সভায়। হুগলি, হাওড়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অনেক এলাকা থেকেই কর্মীদের আনা হবে। দল ঠিক করেছে, আরামবাগ থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে থাকা সব বিধানসভা এলাকা থেকেই সমর্থকদের আনা হবে মোদীর সভায়। এমন বিধানসভার সংখ্যা ৫০-এর মতো। এই সভায় মহিলাদের উপস্থিতিতে জোর দেওয়ার জন্য নির্দেশ রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। মঙ্গলবার সেই সংক্রান্ত সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দিতে আরামবাগে গিয়েছিলেন লকেট। তিনি বলেন, ‘‘মোদীর সভায় মহিলাদের উপস্থিতি দেখার মতো হবে। মহিলা সাংসদদের আক্রমণ করার জন্য নয়, রাজ্যে নিপীড়িত মহিলাদের পাশে থাকার বার্তা দিতেই আসছেন মোদীজি।’’
মোদী যে মাঠে সভা করবেন, সেখানে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সভা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভা ভোটের লক্ষ্যে এত আগে আগে আরামবাগে মুখ্যমন্ত্রীর সভা করার পিছনেও কারণ ছিল। মূল কারণটা পাটিগণিতের। গত লোকসভা নির্বাচনে এই আসনে তৃণমূল জয় পেয়েছিলে মাত্র ১,১৪২ ভোটে। তৃণমূল ভোট পায় ৪৪.১৪ শতাংশ আর বিজেপি ৪৪.০৬ শতাংশ। লোকসভা ভোটের ক্ষেত্রে ফারাকটা খুবই সামান্য। গত বিধানসভা নির্বাচনেও দেখা গিয়েছে, আরামবাগে তৃণমূলের মাটি আলগাই। এই আসনের সাতটি বিধানসভার মধ্যে চারটি (আরামবাগ, খানাকুল, পুরশুড়া এবং গোঘাট) বিজেপির। বাকি তিনটি হরিপাল, তারকেশ্বর এবং চন্দ্রকোণায় জয় পায় তৃণমূল। সেই হিসাবে এই আসন ধরে রাখা শাসক শিবিরের কাছে চ্যালেঞ্জের। অন্য দিকে, বিজেপির কাছে ‘সম্ভাবনাময়’।
তবে বিজেপির কাছে ততটা সহজ নয় কৃষ্ণনগর ও বারাসত আসন। গত লোকসভা নির্বাচনে প্রথমটিতে ৬৩,২১৮ এবং দ্বিতীয়টিতে ১,১০,১৬৯ ভোট জয় পেয়েছিল তৃণমূল। তবে রাজ্য বিজেপির ভাবনায় অতীতে জয় পাওয়া কৃষ্ণনগর এবং সীমান্তবর্তী বারাসত আসন এখন সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে। সেই কারণেই মোদীর প্রথম দফার সভা হিসাবে এই তিন আসন বাছা হয়েছে বলে বিজেপির দাবি। আবার তার মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হিসাবে আরামবাগ দিয়েই শুরু। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, সবল-দুর্বল যে যুক্তি আরামবাগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তা অন্য দুই কেন্দ্রের ক্ষেত্রে নয়। তার সূত্র ধরেই অপরূপা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এসেছিলেন উন্নয়নের ডালি নিয়ে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কেন আসছেন? আসলে যে মহিলা সাংসদেরা সংসদে সরব হয়েছেন, টার্গেট করে সেখানে সেখানেই যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। আরামবাগ, কৃষ্ণনগর এবং বারাসত।’’