প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
দেশের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘আরব অভিযান’কে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। আসন্ন ভোটে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার প্রশ্নে আত্মবিশ্বাসী মোদী সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে সম্পর্কে আরও ঘনিষ্ঠতার বার্তা দিলেন। পশ্চিম এশিয়া তথা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মোদী সরকারের বার্তা, মোদীই গদিতে ফিরে আসছেন এবং তাঁর বিদেশনীতি প্রবহমান থাকবে। বিনিয়োগের আরও বড় গন্তব্য হিসেবে তিনি ভারতকে সামনে রাখলেন কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির। অন্য দিকে আরবের মরুতে হিন্দু মন্দির উদ্বোধনের বার্তা দিয়ে নরেন্দ্র মোদী অযোধ্যার হিন্দুত্ব প্লাবনকে দেশের বাইরে (এমনকি একটি মুসলমান রাষ্ট্রে) নিয়ে ফেললেন। সেই সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির প্রেসিডেন্ট শেখ মহম্মদ বিন জ়ায়েদ আল নাহানকে বারবার ‘আমার ভাই’ হিসেবে সম্বোধন করলেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা এ কথাও মনে করিয়ে দিতে চাইছেন শিয়া মুসলমানদের মন জয়ে গত কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিক ভাবে সক্রিয় মোদী এই আল নাহানকে গুজরাতে নিয়ে গিয়ে রোড শো করিয়েছিলেন কয়েক সপ্তাহ আগেই। গুজরাতের মুসলমানদের আশাতীত সাড়া তিনি পেয়েছিলেন তখন আমদাবাদের রাজপথের ধারে, যা অভূতপূর্ব।
কূটনৈতিক শিবির এ কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে, গত এক বছরে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির থেকে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এক ধাক্কায় ১০৩ কোটি থেকে ৩৩৫ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। অর্থাৎ বৃদ্ধি প্রায় তিনগুণ। এ কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে মোদী সরকার চাইছে আবু ধাবির সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করে দ্বিপাক্ষিক স্তরকে কাজে লাগিয়ে বহুস্তরীয় সহযোগিতার মঞ্চটিতে পৌঁছাতে। যা এ বারের সফরে স্পষ্ট হয়েছে। ভারত-পশ্চিম এশিয়া-পূর্ব ইউরোপের অর্থনৈতিক করিডরকে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রয়াস, ব্রিকস গোষ্ঠীকে সম্প্রসারিত করে পশ্চিম এশিয়ার কিছু দেশকে সংযুক্ত করার মতো উদ্যোগগুলিতেই তা প্রমাণিত। গত বছর জি২০-র সভাপতিত্বে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সহায়তার হাত বাড়িয়ে রেখেছিল সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, সে কথাও বারবার বলছে সাউথ ব্লক।
২০২২ সালে নয়াদিল্লি এবং আবু ধাবির মধ্যে সেপা চুক্তি হয় (কম্প্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট), যা দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ভারত থেকে সে দেশে রফতানির ৯০ শতাংশ এই চুক্তির আওতায় পড়ে। তেল ব্যতীত যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, তাকে ২০৩০-এর মধ্যে ১০০ কোটি ডলারে পৌঁছনোর লক্ষ্যে চলছে সেপা। ২০২১-২২ এর তুলনায় ২০২২-২৩-এ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বেড়েছে ১৬ শতাংশ, যাকে ঐতিহাসিক হিসেবে বর্ণনা করেছে সাউথ ব্লক।