(বাঁ দিক থেকে) শান্তনু সেন, জয়রাম রমেশ, সুজন চক্রবর্তী। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
২০২৩ সালের ১৯ অগস্টের পরে ২০১৪-এর ৮ মার্চ। মধ্যবিত্ত গ্রাহকদের সুরাহা দিতে আবার রান্নার গ্যাসের দাম কমাল নরেন্দ্র মোদী সরকার। ঘটনাচক্রে, দু’বারই ভোটের আগে এমন ‘জনমুখী’ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হল। গত বার পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগে রান্নার গ্যাসের দাম সিলিন্ডারপ্রতি ২০০ টাকা কমানো হয়েছিল। এ বার সিলিন্ডারপ্রতি ১০০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী মোদী যখন ঘোষণা করলেন, লোকসভা এবং চার রাজ্যের বিধানসভা ভোট দোরগোড়ায়।
বিজেপি পরিচালিত সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়ে শুক্রবার প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলি। মোদীকে খোঁচা দিয়ে তৃণমূলের বিবৃতি— ‘দেশের একজন প্রধানমন্ত্রী দরকার, আমাদের যা আছে তা হল এক জন ভোট-মন্ত্রী’। গত পাঁচ বছরে বিজেপির শাসনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বিপুল মূল্যবৃদ্ধি থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দিতেই প্রতি বার ভোটের আগে বিজেপি গ্যাসের দাম কমানোর কৌশলকে হাতিয়ার করে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের অভিযোগ।
তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সাকেত গোখলে বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদী গত বছর রাখিবন্ধনের দিনে গ্যাসের দাম কমিয়েছিলেন। এ বার কমালেন আন্তর্জাতিক নারী দিবসে। মাঝের সাত মাসে কেন সরকার কোনও পদক্ষেপ করল না? কেন আগেই গ্যাসের দাম কমানো হল না?’’
তৃণমূল নেতা শান্তনু সেন বিজেপিকে ‘ভারতীয় জুমলা পার্টির গিমিক’ বলে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, ‘‘দেশের মানুষ জানে ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার সময় দেশে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ছিল ৪০০ টাকা। তা মোদীর আমলের ১২০০ টাকা হয়েছে। এ ধরনের সস্তার চমক (দাম কমানো) দেশ আগেও দেখেছে। উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোটের আগেও দু’মাস পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়েনি। কিন্তু নির্বাচন মিটতে ফলাফল ঘোষণার আগেই তারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল। এ বার ১০০ টাকা কমিয়েছে। ভোটের ফল ঘোষণার আগেই ২০০ টাকা বাড়িয়ে দেবে।’’
গ্যাসের দাম কমানো প্রসঙ্গে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভোট বড় বালাই। তাই এক্স হ্যান্ডল থেকে প্রধানমন্ত্রীকে এই ঘোষণা করতে হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে গ্যাসের দাম ছিল ৪৫০ টাকা। তার পর সেটা বাড়তে বাড়তে ১১৫০ টাকায় পৌঁছেছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম যখন কমেছে, ভারতে তখন পেট্রল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে লুট করেছেন মোদী। উনি কি রান্নার গ্যাসের দাম ৪৫০ টাকা করতে পারবেন? লুটের টাকা ফেরত দেবেন কি?’’
অন্য দিকে, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মোদীর এই পদক্ষেপকে খোঁচা দিয়েছে দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসও। এআইসিসির মুখপাত্র জয়রাম রমেশ শুক্রবার পাঁচ দফা প্রশ্ন ছুড়েছেন মোদী সরকারের উদ্দেশে। গত ১০ মাস ধরে মণিপুরের হিংসাপর্বে মহিলাদের উপর ধারাবাহিক অত্যাচার এমনকি, নগ্ন করে হাঁটানোর ঘটনার পরেও কেন প্রধানমন্ত্রী এক বারও সে রাজ্যে যাননি, সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। জানতে চেয়েছেন, মহিলা কুস্তিগিরদের যৌন নিগ্রহে অভিযুক্ত বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে বিজেপি কেন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি?
মোদীর জমানাকে ‘অন্যায় কাল’ (অন্যায়ের রাজত্ব) বলে বর্ণনা করে গত এক দশকে রান্নার গ্যাস-সহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ‘নজিরবিহীন মূল্যবৃদ্ধি’র প্রসঙ্গও এসেছে রমেশের বিবৃতিতে। সেই সঙ্গে বিজেপি শাসনের এক দশকে দেশের আর্থিক উন্নয়নে মহিলাদের অংশগ্রহণ কমেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা। মোদী জমানায় মহিলা সশক্তিকরণ প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁর মন্তব্য, ‘‘মনমোহন সিংহের প্রধানমন্ত্রিত্বে দেশের শ্রমশক্তির ২০ শতাংশ ছিল মহিলাদের। তা কেন কমল? দেশের অর্থনীতির পক্ষে এই ঘটনা চরম উদ্বেগের।’’
প্রসঙ্গত, গত বছরের অগস্টে, পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগে গ্যাসের দাম সিলিন্ডারপ্রতি ২০০ টাকা কমিয়েছিল মোদী সরকার। তার আগে একটি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম উজ্জ্বলা গ্রাহক নন যাঁরা, তাঁদের কাছে ১,১০০ টাকা ছিল। মোদী সরকার গত বছরের অগস্টে সিলিন্ডারপ্রতি ২০০ টাকা দাম কমানোয় তা ৯০০ টাকায় নেমেছিল। এ বার, আরও ১০০ টাকা দাম কমায় উজ্জ্বলা গ্রাহক নন যাঁরা, তাঁরা ৮০০ টাকায় একটি এলপিজি সিলিন্ডার পাবেন।