গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গুণকীর্তন করলে তবেই কেন্দ্রীয় অনুদান পাবে বাংলার থিয়েটারের দলগুলি! কেন্দ্রের তরফ থেকে রাজ্যের থিয়েটার দলগুলির কাছে কিছুটা এমনই ধরনের নির্দেশ এসেছে বলে জানালেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা নাট্যকার ব্রাত্য বসু। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রের তরফে যে নির্দেশিকাটি এসেছে বাংলার থিয়েটার গোষ্ঠীর কাছে, তার আদত মানে সেটিই দাঁড়ায়।
কী নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র? মঙ্গলবার এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে বিষয়টি জানিয়েছেন ব্রাত্য। শিক্ষামন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকার লোকসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গের সবক’টি থিয়েটার দলকে এ দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মহিমাবাচক ও গুণকীর্তন করা একটি ছোট নাটিকা পাঠিয়ে বলেছেন, এর অভিনয় সর্বত্র করতে হবে।’’ ব্রাত্য়ের মতে, যার অর্থ, ‘‘অভিনয়টি না করলে কেন্দ্রের পাঠানো মোটা অনুদান এবং ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’
ঘটনাচক্রে, ব্রাত্য এর আগেও এ ভাবে সরকারি নির্দেশনামায় ‘স্তম্ভিত’ হয়েছেন। বাম আমলে তাঁর নির্দেশিত নাটক ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’ একাধিক বার প্রদর্শনী বন্ধের হুমকি পেয়েছিল। কখনও-সখনও সেই হুঁশিয়ারি কার্যকরও হয়েছিল। তাঁর নাটকের জন্য প্রেক্ষাগৃহের অনুমতি না-দেওয়ার হুমকিও পেয়েছিলেন ব্রাত্য। তবে তা রাজ্য সরকারের তরফে। ঘটনাক্রম বলছেন, তার পর থেকেই ব্রাত্য তৃণমূলে যোগদান করেন। ভোটে লড়েন এবং জেতেন। যে ‘ফতোয়ার’ সম্মুখীন তিনি আগে হয়েছিলেন সাধারণ নাট্য নির্দেশক হিসেবে, রাজ্য সরকারের মন্ত্রী হিসেবেও তাঁকে সেই সরকারি ‘ফতোয়া’ নিয়েই সরব হতে হল!
মঙ্গলবার ব্রাত্য তাঁর পোস্টের সঙ্গেই কেন্দ্রের পাঠানো ছ’পাতার ছোট নাটিকাটিও পোস্ট করেছেন। হিন্দিতে লেখা সেই নাটকটির নাম ‘লে আয়ে বাপস সোনে কি চিড়িয়া’ যার অর্থ সোনার পাখিকে ফিরিয়ে আনলাম। নাটকটি লিখেছেন ললিত প্রকাশ। নাটকটির মর্মার্থ কী তা জানিয়ে (‘প্রধানমন্ত্রীর মহিমাবাচক ও গুণকীর্তন করা’ বলে উল্লেখ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ) ব্রাত্য লেখেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের থিয়েটার দলগুলি যে হেতু বামপন্থী সেকুলার, তাই আমরা আশা রাখতেই পারি, এই নির্লজ্জ প্রস্তাব তাঁরা সবাই ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করবেন।’’
মন্ত্রী ব্রাত্যের পোস্ট করা ওই নাটকের পাতায় পাতায় লক্ষণীয় মোদী ব্যবহৃত ‘বিকশিত ভারত’, ‘অখণ্ডতা’ র মতো শব্দবন্ধ। প্রথম পাতার শেষ দিকে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নামও। সেখানে নাটকের এক চরিত্র সূত্রধারকে প্রশ্ন করে, জি২০তে মোদীজি যা বলেছেন, তার অর্থ কী? বসুধৈব কুটুম্বকম বলতে উনি কী বোঝাতে চেয়েছেন।
এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ধীরে ধীরে করোনার সময়ে ভারতে টিকা তৈরির প্রসঙ্গ এসে পড়ে। আলোচনা হয়, বিশ্বের কোন কোন দেশকে ভারত টিকা দিয়ে সাহায্য করেছে, সেই প্রসঙ্গও। এর পরে ‘বিকশিত ভারত’ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনায় মোদী সরকারের স্লোগান ‘সব কা সব কা বিকাশ’-এর কথাও বলতে শোনা যায় চরিত্রদের।
ব্রাত্য ওই নাটকের পাতার ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘ঠেলার নাম বাবাজি, কাকে বলে দ্যাখ এবার।’’