গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রামমন্দির নির্মাণ, ৩৭০ ধারা বিলুপ্তি, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবি ছিল। ‘এক দেশ এক ভোট’, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকরের অঙ্গীকার ছিল। ছিল ‘৪০০ পার’ স্লোগান কার্যকরের লক্ষ্য। কিন্তু অষ্টাদশ লোকসভার ফল জানিয়ে দিল, এই প্রথম বার সহযোগীদের সমর্থনের উপর নির্ভর করে সরকার গড়তে হবে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপিকে। মাত্র সাড়ে ১১ মাস আগে গড়া বিরোধী জোট (যাকে প্রচারপর্বের আগাগোড়া কটাক্ষ করে এসেছেন মোদী-সহ বিজেপি নেতারা) আটকে দিল ‘পদ্মে’র নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার পথ।
৫৪৩ আসনের লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭২। বিজেপি একক ভাবে জিতেছে ২৪০টি। তাদের নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ ২৯২। অন্য দিকে, এই লোকসভা নির্বাচন জাতীয় রাজনীতিতে কার্যত পুনরুত্থান হল কংগ্রেসের। তারা পেয়েছে ৯৯টি আসন। ‘ইন্ডিয়া’ ঝুলিতে ২৩৩। বিরোধী দলনেতার পদের জন্য লোকসভায় ৫৫টি আসনে জেতা প্রয়োজন। কিন্তু ২০১৪-য় ৪৪ এবং ২০১৯-এ ৫২টি আসনে জেতা কংগ্রেস সংসদীয় বিধি অনুযায়ী সেই মর্যাদা পায়নি। এ বার সেই মর্যাদা পেতে চলেছে মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুল গান্ধীর দল।
দেশের তিন বৃহত্তম রাজ্য (জনসংখ্যার নিরিখে) উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং পশ্চিমবঙ্গে পরাস্ত হয়েছ বিজেপি। উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি-কংগ্রেসের জোট, মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস-শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে)-এনসিপি (শরদ পওয়ার)-এর ‘মহাবিকাশ অঘাড়ী’ ধাক্কা দিয়েছে মোদীর দলকে। বাংলায় সেই ‘দায়িত্ব’ একা পালন করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল। মাত্র এক বছর আগে গড়ে ওঠে কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম-সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির যৌথমঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স)-র (যে জোটের যার নামকরণে তৃণমূলনেত্রীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে বিরোধী শিবির সূত্রের খবর) ফল যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
আসন সমঝোতার পরিসর বাড়লে এবং তা মসৃণতর হলে বিহার, দিল্লি এমনকি, মহারাষ্ট্রেও ‘ইন্ডিয়া’র ফল আরও ভাল হত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের অনেকেই। ভোটের পাটিগণিত বলছে, মহারাষ্ট্রের বিআর অম্বেডকরের পৌত্র প্রকাশের দল বঞ্চিত বহুজন অঘাড়ীকে সঙ্গে পেলে এনডিএ-কে কার্যত নিশ্চিহ্ন করে দিত পারত বিরোধী জোট। বিহারে আরজেডি প্রধান লালুর পুত্র তেজস্বী আর একটু নমনীয় হলে সুফল পেত ‘ইন্ডিয়া’।
ভোটের ফলপ্রকাশের পর মঙ্গলের সন্ধ্যায় ‘জয় জগন্নাথ’ দিয়ে মঙ্গলবার বক্তৃতা শুরু করলেন নরেন্দ্র মোদী (ঘটনাচক্রে, এ বার ওড়িশায় বিপুল জয় পেয়েছে বিজেপি)। দেশে তৃতীয় বার এনডিএ কেন্দ্রে সরকার গড়ার জাদুসংখ্যা পেরিয়ে যাওয়ার পর মোদীর ৩৪ মিনিটের বক্তৃতায় এক বারও ‘জয় শ্রীরাম’ শোনা গেল না। রামমন্দিরের কথা বললেন যদিও। বিজেপি নয়, জোর দিলেন এনডিএ নামক জোটের উপর। তাঁর ভাষণে বার বার শোনা গেল এনডিএ-র কথা।
অন্য দিকে, কংগ্রেসের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করেন মল্লিকার্জুন খড়্গে, রাহুল গান্ধী, সনিয়া গান্ধীরা। সেখানে রাহুল বলেন, ‘‘মোদী-শাহ দেশের এজেন্সি, অর্ধেক বিচার ব্যবস্থাকে কব্জা করে রেখেছে। আমাদের লড়াই ছিল তার বিরুদ্ধে। সংবিধান বাঁচানোর লড়াইয়ে এটাই প্রথম পদক্ষেপ।’’ বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ দলের অন্যতম শরিক কংগ্রেস। সেই জোটের প্রত্যেকটি দলকে ধন্যবাদ জানান রাহুল। তিনি বলেন, ‘‘আমরা আমাদের জোটসঙ্গীদের সম্মান করি।’’
(এই প্রতিবেদন প্রথম প্রকাশের সময় লেখা হয়েছিল, দু’টি মনোনীত আসন-সহ লোকসভার মোট আসন ৫৪৫টি। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭৩টি আসন। এই তথ্য সঠিক নয়। ২০২০ সালের জানুয়ারির শেষে লোকসভায় দুই মনোনীত সাংসদ রাখার আইনটি সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বাতিল হয়ে গিয়েছে। ফলে নির্বাচিত ৫৪৩ জন সাংসদকে নিয়েই এখন পূর্ণাঙ্গ লোকসভা। ক্ষমতা দখলের জাদুসংখ্যা ২৭২। এই তথ্যগত ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এবং সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী)