দুর্গাপুরে নেপালিপাড়া হিন্দি হাইস্কুলে সভা। নিজস্ব চিত্র।
এসএসসি মামলায় আদালতের রায়ে জেলার যাঁরা চাকরি থেকে বরখাস্ত হচ্ছেন, তেমন শিক্ষকদের নিয়ে সরকার পোষিত স্কুলে বৈঠক আয়োজন করে বিতর্কে জড়াল তৃণমূল। রবিবার দুর্গাপুরের নেপালিপাড়া হিন্দি হাইস্কুলে বৈঠকে ছিলেন জেলা তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কর্তারা। তবে সংগঠনের ব্যানার ছাড়াই এই আয়োজন। বৈঠক চলাকালীন স্কুলে উপস্থিত হন তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। এই ঘটনায় নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। অভিযোগ মানতে চাননি নরেন্দ্রনাথ।
সংগঠন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা তৃণমূল শিক্ষক সমিতির নেতা কলিমুল হক, সংগঠনের জেলা সভাপতি নুরুল হক, দুর্গাপুর আদালতের তৃণমূলের আইনজীবী সেলের নেতা দেবব্রত সাঁই প্রমুখ। সভায় চাকরিহারা শিক্ষকদের পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়। প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। বিরোধীদের চক্রান্তেই এই পরিস্থিতি, অভিযোগ করেন নুরুল। আলোচনার শেষ দিকে স্কুল চত্বরে পৌঁছন নরেন্দ্রনাথ। তিনি ওই শিক্ষকদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে এই রায়ের সমালোচনা করেন বলে অভিযোগ।
আলোচনায় যোগ দেওয়া এক শিক্ষিকার কথায়, ‘‘২০০৮ সালে স্নাতক স্তরের শিক্ষিকার চাকরি পাই। স্নাতকোত্তরের চাকরির জন্য ২০১১ সালে পরীক্ষা দিয়ে সফল হই। কিন্তু বাড়ি থেকে দূরে হওয়ায় যোগ দিতে পারিনি। ২০১৬ সালে ফের পরীক্ষা দিয়ে জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠে চাকরি পাই। আমি চরম হতাশ। যা করিনি সেই শাস্তি আমরা কেন ভোগ করব? পরিবার, পড়ুয়াদের কাছে আমাদের সম্মান ধুলোয় মিশে যাচ্ছে।’’ নুরুলের দাবি, ‘‘জেলায় ৫৪৩ জন এমন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী কাজ হারিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে আমরা এক সঙ্গে এত দিন কাজ করেছি। কোনও দিন তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে আমাদের সন্দেহ হয়নি। অধিকাংশই যোগ্য শিক্ষক। আমরা ওই শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য বলে মনে করি।’’
বিজেপির বর্ধমান-দুর্গাপুর সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘নির্বাচনী বিধি চালু রয়েছে। এই সময়ে সরকার পোষিত স্কুলে তৃণমূল শিক্ষক সমিতির সভা হয় কী করে? চাকরিহারাদের পাশে তো থাকতেই হবে। তা না হলে তো তৃণমূলের নেতাদের কলার ধরে টানাটানি শুরু হবে। এই সভার উদ্দেশ্য, ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পরিবারের সদস্যদের ভোটে প্রভাবিত করা।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের বক্তব্য, ‘‘আমাদের আইনজীবীরা যোগ্য প্রার্থীদের চাকরির জন্য হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে লড়ছেন। আর, ওঁদের সভায় কাকে কাকে টাকা ফেরত দিতে হবে, সেই হিসাব হচ্ছে। তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে টাকা ফেরত আমরা নেবই।’’
নরেন্দ্রনাথের পাল্টা দাবি, ‘‘ছুটির দিনে স্কুলে আলোচনাসভা হয়েছে। বিরোধীরা কী বলছেন, তাতে কিছু যায়-আসে না। আমরা চাকরিহারা শিক্ষকদের পাশে আছি।’’ কলিমুলের বক্তব্য, ‘‘কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে আলোচনা হয়নি। আমাদের স্কুলে এমন ১১ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী রয়েছেন। আদালতের রায় সম্পর্কে বিশদ জানতে ও পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে আইনজীবীদের নিয়ে সভা হয়।’’