Lok Sabha Election 2024

স্বরূপনগর থেকে ‘লিড’ পাখির চোখ সব পক্ষের

দিল্লির দৌড়ে কে কোথায়? কোন দল কী ভাবে ঘর গোছাচ্ছে? কোথায় কোন কাঁটা বেগ দিচ্ছে কাকে? লোকসভা ভোটের আগে বিধানসভা ভিত্তিক খোঁজখবর। সেই সঙ্গে কোন বিষয়গুলি মাথায় রেখে বুথমুখী হবেন ভোটার, সে দিকে নজর রাখল আনন্দবাজার।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

স্বরূপনগর শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৩৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

বনগাঁ লোকসভা আসনে জয়ী হতে স্বরূপনগর বিধানসভাকেই পাখির চোখ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের অনেকেই মনে করছেন, স্বরূপনগর থেকে যত বেশি ভোটের লিড মিলবে, ততই তৃণমূল প্রার্থী সুবিধাজনক জায়গায় থাকবেন। উল্টো দিকে, বিজেপি নেতৃত্বও চাইছেন, স্বরূপনগর থেকে তৃণমূলের লিড যাতে যতটা সম্ভব কমানো যায়।

Advertisement

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর জয়লাভ করেছিলেন ১ লক্ষ ১১ হাজার ৫৯৪ ভোটে। লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে শান্তনু ৬টি বিধানসভাতেই এগিয়ে ছিলেন। তবে হোঁচট খেয়েছিলেন স্বরূপনগরে। এখানে শান্তনু পিছিয়ে ছিলেন ২৩ হাজার ৯৭১ ভোটে।

একই ধারা বজায় ছিল ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটেও। সে বারও বনগাঁ লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে ৬টি আসনে বিজেপি প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু স্বরূপনগরে বিজেপি প্রার্থী বৃন্দাবন সরকার পরাজিত হন। তৃণমূল প্রার্থী বীণা মণ্ডল ৩৪ হাজার ৮০০ ভোটে জয়ী হয়ে তৃতীয় বারের জন্য স্বরূপনগরের বিধায়ক হন।

Advertisement

এ বার লোকসভা ভোটে তৃণমূল নেতৃত্ব স্বরূপনগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে গত বিধানসভা ভোটের থেকেও বেশি ভোটে এগিয়ে থাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করেছেন। দলের প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস জানান, স্বরূপনগর থেকে অন্তত ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছেন তাঁরা। তৃণমূল নেতৃত্বের এই দাবির পিছনে রয়েছে গত পঞ্চায়েত ভোটের সাফল্য। পঞ্চায়েত ভোটে স্বরূপনগর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ১২টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১১টিতে তৃণমূল জয়লাভ করেছিল। জেলা পরিষদের তিনটি আসনের সব ক’টিতে তৃণমূল জয়ী হয়। স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতির ৩০টি আসনের সব ক’টি পায় তৃণমূল।

একদা বাম তথা সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল স্বরূপনগর। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল এখানে বাম শিবিরে ভাঙন ধরায়। সে বার স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতি দখল করে ঘাসফুল শিবির। সমিতির সভাপতি হন বর্তমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী। তখন থেকেই এখানে তৃণমূলের জয়যাত্রা শুরু।

২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে জয়ী হয় তৃণমূল। তবে এ রকম শক্ত ঘাঁটিতেও তৃণমূলকে ভাবাচ্ছে গোষ্ঠীকোন্দল।

স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের অনেকেই জানান, এখানে মূলত বিধায়ক বীণা মণ্ডলের সঙ্গে জেলা সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামীর অনুগামীদের দ্বন্দ্ব রয়েছে। দু’জনের মধ্যে দূরত্ব ইদানীং অনেকটাই বেড়েছে বলে দলের অন্দরে গুঞ্জন। তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দলীয় নেতৃত্ব সকলকে এক ছাতার তলায় আনতে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছেন। ব্লকের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আলাদা বৈঠক হয়েছে।

দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, লোকসভা ভোটে স্বরূপনগরে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নারায়ণকে। বীণা বলেন, “আমরা সকলে এক সঙ্গে ভোটে বিজেপিকে হারাতে লড়াই করছি।” বিশ্বজিতের দাবি, “স্বরূপনগরে আমাদের দলে কোনও কোন্দল নেই।”

স্থানীয় রাজনৈতিক মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বরূপনগর ব্লকে সংখ্যালঘু ভোটার প্রায় ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া, মতুয়া, উদ্বাস্তু, তফসিলি ভোটাররা রয়েছেন। বিজেপি নেতৃত্বকেও ভাবাচ্ছে গোষ্ঠীকোন্দল। বিভিন্ন সময়ে তা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। দলের নেতৃত্ব আশা করছেন, কেন্দ্র সিএএ কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি জারি করায় মতুয়া, উদ্বাস্তু মানুষের পুরো সমর্থন তাঁরা পাবেন। দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের অবশ্য দাবি, “স্বরূপনগরে আমাদের দলে কোনও কোন্দল নেই। এ বার আমরা স্বরূপনগর বিধানসভা থেকে পাঁচ ভোটে হলেও লিড পাব।”

অন্য দিকে, বাম-কংগ্রেসের সংগঠন কার্যত তলানিতে। বাম এবং কংগ্রেসের অনেক কর্মী-সমর্থক তৃণমূল, বিজেপিতে যোগদান করেছেন। গত লোকসভা ভোটে কংগ্রেস প্রার্থী সৌরভ প্রসাদ স্বরূপনগর থেকে পেয়েছিলেন মাত্র ৮ হাজার ৭৫৪ ভোট। সিপিএম প্রার্থী অলকেশ দাস স্বরূপনগর থেকে পেয়েছিলেন ২২ হাজার ৭৯৭
ভোট।

এ বার বনগাঁ লোকসভায় বাম-কংগ্রেসে আসন সমঝোতা হয়েছে। সিপিএম এখানে প্রার্থী দেয়নি। জোটের প্রার্থী হয়েছেন কংগ্রেসের প্রদীপ বিশ্বাস। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেসের (গ্রামীণ) সভাপতি অমিত মজুমদার বলেন, “এ বার আমরা স্বরূপনগর থেকে যথেষ্ট ভাল ফল করব। সামান্য কিছু ভোটের ব্যবধানে কংগ্রেস প্রার্থী এগিয়ে থাকতে পারেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement