Lok Sabha Election 2024 Result

উত্তর-পূর্বে রাহুলের যাত্রায় ফিরল কংগ্রেস

গত ১ বছরের সংঘর্ষে ২২০ জনের মৃত্যু ও ষাট হাজার মানুষের ঘরছাড়া হওয়া, কার্যত দ্বিখণ্ডিত মণিপুরের দিকে নজর ছিল দেশের।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২৪ ২৩:৫৩
Share:

মণিপুরের দুই কেন্দ্রে বিজয়ী দুই কংগ্রেস প্রার্থী। বাঁয়ে বিমল, ডান দিকে আর্থার। নিজস্ব চিত্র।

মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মিজ়োরাম, মণিপুর এমনকী খোদ হিমন্তবিশ্ব শর্মার রাজ্যে উজানি ও নামনি অসমেও ‘রাম মন্দির বনাম ন্যায় যাত্রা’র লড়াইতে ন্যায় যাত্রাই বাজি মাৎ করল। মন্দির-মসজিদ বিভাজনের রাজনীতিতে শেষ পর্যন্ত অসম বাদে বাকি চার রাজ্যে ‘ডার্ক হর্স’ গির্জাই কি রুখে দিল অশ্বমেধের ঘোড়ার জয়যাত্রা! তেমনই দাবি করলেন উত্তর-পূর্বে নেডা জোটের মাথা হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

Advertisement

অসমে ১১ আসন ধরে রাখার পরেও উত্তর-পূর্ব মিলিয়ে এনডিএর সংগ্রহ মাত্র ১৬। উত্তর-পূর্বে নেডা জোটের মাথা হিমন্তবিশ্ব শর্মা রাম ও মোদীর ম্যাজিক ব্যর্থ হওয়ার কথা না মানলেও দাবি করলেন, “খ্রিস্টান প্রধান রাজ্যগুলিতে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের নেতারা বিজেপির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়াতেই এই ফল।”

উত্তর-পূর্বের খ্রিস্টান সংগঠনের অন্যতম নেতা ও অসম খ্রিস্টান ফোরামের মুখপাত্র অ্যালেন ব্রুকস্ বলেন, “পরাজয়ের পরে এ ভাবে খ্রিস্টানদের দিকে আঙুল তোলা দুর্ভাগ্যজনক। কারণ খ্রিস্টান প্রধান রাজ্যে এনডিএ জোটের পরাজিত প্রার্থীরাও কিন্তু খ্রিস্টানই ছিলেন। হিন্দুপ্রধান ইনার মণিপুরের মানুষও শাসকদলকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তার দায় কার?” কংগ্রেসের মতে, ধর্মীয় বিভাজনকে হাতিয়ার করে ভোট লড়তে নামার পরে এখন হারের পরে সেই ধর্মকেই ঢাল করতে চাইছে বিজেপি।

Advertisement

গত ১ বছরের সংঘর্ষে ২২০ জনের মৃত্যু ও ষাট হাজার মানুষের ঘরছাড়া হওয়া, কার্যত দ্বিখণ্ডিত মণিপুরের দিকে নজর ছিল দেশের। নিজেকে মেইতেইদের রক্ষাকর্তা হিসেবে তুলে ধরা মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ এবং রাজা সানাজাওবার পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি আরাম্বাই টেঙল ও মেইতেই লিপুন বাহিনীর সদস্যসংখ্যা এখন প্রায় ষাট হাজার। তার পরেও মেইতেইপ্রধান ইনার মণিপুরে যে ভাবে বিজেপির শিক্ষামন্ত্রীকে লক্ষাধিক ভোটে হারালেন কংগ্রেসের আনকোরা প্রার্থী অধ্যাপক বিমল আকৈজাম- তাতে ছলে-বলে-কৌশলে গদি আঁকড়ে পড়ে থাকা বীরেনের রাশ আলগা হল অনেকটাই। বিজেপি-বিরোধী এই ঢেউতে নেতৃত্ব দিলেন বিজেপির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দেওয়া মহিলারা। আউটার কেন্দ্রে যুযুধান কুকিরা ভোটে অংশ না নেওয়ার পরেও নাগা এলাকায় বিজেপির সঙ্গী এনপিএফ এবং তাদের মদতদাতা এনএসসিএন আইএমের এত বছরের মৌরসিপাট্টাকে ভেঙে দিল জনতা। গুলি চালিয়ে, টাকা ছড়িয়ে কোনও ভাবেই দখলে রাখা গেল না পার্বত্য মণিপুর। কুকি-জ়ো যৌথ মঞ্চ একে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে দাবি করল। কুকি যৌথ মঞ্চ আইটিএলএফের সাধারণ সম্পাদক মুয়ান তোম্বিংয়ের মতে, এ হল ধর্মনিরপেক্ষতা ও জনজাতির অধিকারের জয়।

কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক্স-এ লেখেন মণিপুরের দুই আসনেই কংগ্রেসের জয় রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার পরেও রাহুল গান্ধীর মণিপুর সফর ও ন্যায় যাত্রার সূচনার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং প্রধানমন্ত্রীর মণিপুরে না আসা ও নীরবতার প্রতি সপাট চপেটাঘাত। মণিপুরবাসী কংগ্রেসের দুই সাংসদের উপরে বিরাট দায়িত্ব অর্পণ করেছেন।

মোদীর নীরবতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে যে ভাবে সংঘর্ষের মধ্যেই রাহুল গান্ধী মণিপুরের কুকি ও মেইতেই এলাকা সফর করেন, পরে মণিপুর থেকে শুরু করেন ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা- সেই দুই ঘটনাকেই মণিপুর জয়ের তুরুপের তাস বলে মনে করছেন বিজয়ী দুই প্রার্থী। ঠিক যে সুর শোনা গেল নাগাল্যান্ডে অঘটন ঘটানো সুপংমেরেন জামিরের গলায়।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী-সহ ৬০ জন বিধায়কেরই পূর্ণ সমর্থন ও কেন্দ্রীয় শাসকদলের সমর্থনের পরেও শাসকদলের প্রার্থীর ভোটে হারা নাগাল্যান্ডের ইতিহাসে প্রথম! ২০০৩ সালের পর থেকে কখনও নাগাল্যান্ডে লোকসভা আসনে না জেতা কংগ্রেসের সংগঠনই হারাতে বসেছিল রাজ্যে। বহুবছর পরে রাহুল গান্ধীর ন্যায় যাত্রা কার্যত ঘুম থেকে টেনে তুলে মাঠে নামিয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেসকে। এনডিপিপির চুম্বেনকে ৫০,৯৮৪ ভোটে হারানোর পরে কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সুপংমেরেন জামিরকে ‘সুপারম্যান জামির’ নামে ডাকা শুরু হয়েছে। আবেগ বিহ্বল জামিরের মতে, রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা তাঁর জয়ের চাবিকাঠি। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া কংগ্রেসকে ফের মানুষের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছে ওই যাত্রা। নেফিউ রিও ও বিজেপির মৌরসিপাট্টায় ক্ষুব্ধ মানুষও পরিবর্তন ও গণতন্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, একদিকে নাগাল্যান্ডে শান্তি চুক্তি বিশ বাঁও জলে চলে যাওয়া এবং সেই সঙ্গে নাগাড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে খ্রিস্টানবিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপের অভিযোগ ওঠায় জনমত বিগড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিওকে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির হাতের পুতুল বলে মনে করছে জনতা।

মেঘালয়ে এনপিপির ঘরের মাঠ তুরায় অঘটন ঘটিয়ে জিতে রাজ্যে ১টি আসন ধরে রাখল কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রীর বোনকে হারিয়ে তুরায় পূর্ণ সাংমা ও তাঁর পরিবারের ৪৫ বছর ধরে জয়ের রেকর্ড ভেঙে দেওয়া সালেং এ সাংমা নিজেই বলেন, “এই জয় আমার কাছে অলৌকিক মনে হচ্ছে। গণদেবতা পরিবর্তন চায়। তাই ঈশ্বরই আমায় জিতিয়েছেন।”

এ দিকে, শিলংয়ে চারবারের সাংসদ, কংগ্রেস সভাপতি ভিনসেন্ট পালাকে প্রায় তিন লক্ষ ৭২ হাজার ভোটে হারিয়ে চমকে দেওয়া নবগঠিত দলের নতুন প্রার্থী রিকি এ জে সিংকনের মতে, রাজ্যবাসী মনেপ্রাণে পরিবর্তন চাইছিলেন। জাতীয় দলগুলির রাজনীতিতে তাঁরা বিরক্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement