—প্রতীকী চিত্র।
মাথার উপরে চড়া রোদ। পুল মাথা মোড়ে ডিভিসি খালের ধারে গাছের ছায়ায় কয়েক জন বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। পাতে ছিল পান্তা ভাত, পেঁয়াজ, লঙ্কা আর আলু ভাজা। সেলিমাবাদ থেকে সাইকেলে করে সেই খাবার নিয়ে এসেছেন সংখ্যালঘু পরিবারের এক বধূ।
ভোটে কী হতে চলেছে? প্রশ্ন শুনে সাইকেল থেকে নামেন ওই বধূ। বললেন, “লক্ষ্মীর ভান্ডার, বিধবা-বার্ধক্য ভাতার জন্যে মহিলাদের সমর্থন তৃণমূলের দিকে আছে। কিন্তু যে বাড়িতে বেকার ছেলেমেয়ে আছে, সে সব বাড়িতে সব ভোট তৃণমূল পাবে, এ কথা বলতে পারছি না। সে সব ভোট এ বার সিপিএম পেতেও পারে।”
কয়েক কিলোমিটার দূরে জৌগ্রাম। মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। মতুয়াদের একটি সংগঠনের সঙ্ঘাধিপতি মতুয়াবালা ঠাকুর একটি অনুষ্ঠানে সেখানে এসেছিলেন। এখানেই আধার কার্ড বন্ধের চিঠি এসেছিল। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আতঙ্কও রয়েছে। এই এলাকায় বিজেপি ভোটার বেশি? জৌগ্রামের ফুটবল মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি বললেন, “গত লোকসভা, বিধানসভা ভোটে এখানকার মানুষ ঢেলে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য যে সব শর্ত চাপানো হয়েছে, তাতে আমাদের মধ্যেই বিভাজন দেখা দেবে। বিজেপির অনুকূলে সব ভোট পড়বে কি না, সন্দেহ রয়েছে।”
বর্ধমান পূর্ব লোকসভার মধ্যে জামালপুর বিধানসভা এলাকায় এ সব কথা শোনা গিয়েছিল ভোট ঘোষণার পরেই। তার পরে অনেকগুলি দিন কেটে গিয়েছে। সিপিএম নেতা সুকুমার মিত্র, তৃণমূল নেতা তরুণকান্তি ঘোষ বলেন, “ভোট যত এগোচ্ছে, জামালপুরের চতুর্দিকে নীরবতা বাড়ছে। ভোট নিয়ে কোনও আলোচনাই শোনা যাচ্ছে না।” ২০১৬ সালেও জামালপুরের আসনটি বামেরা জিতেছিল। ৪৪.৫৩% শতাংশ ভোট পেয়ে জেতা এই আসনে ২০১৯ সালে বামেদের ভোট কমে দাঁড়ায় ১৩.৩০ শতাংশ। গত বিধানসভা ভোটে বামেদের ভোট আরও দু’শতাংশ কমে। রাজনীতির ময়দানে ‘গুরুত্বহীন’ হয়ে যাওয়া বামেরা এ বারের ভোটে ফের প্রাসঙ্গিক হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। প্রচারের নিরিখে গেরুয়া শিবিরকে পিছনে ফেলে দিয়েছে তারা। সিপিএমের জামালপুর ১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক মহাদেব হালদারের দাবি, “পঞ্চায়েতে আমরা ৩৬ শতাংশ ভোট পেয়েছি। সেখানে বিজেপির ভোট ছিল ৯ শতাংশ। পঞ্চায়েতের ভোট তো পাবই। ভোট আরও বাড়বে।” এই বিধানসভায় সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে ২৯ শতাংশ। সেই ভোটেও তাঁরা ‘ভাগ’ বসাবেন বলে দাবি সিপিএম নেতৃত্বের।
তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বিরোধীরা ছন্নছাড়া। এই অবস্থায় রাজনীতি সচেতন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না, যাতে বিজেপির সুবিধা হয়। তা ছাড়া, এলাকায় উন্নয়নও হয়েছে ব্যাপক। সেটাও তাঁদের পক্ষে কাজ করবে। এ নিয়ে প্রচার চলছে। দলের জামালপুর ব্লক সভাপতি মেহেমুদ খান বলেন, “আমাদের সংখ্যালঘু ভোট অটুট থাকবে। মতুয়া ভোটও আমাদের দিকে চলে আসবে। বিধানসভার চেয়ে ব্যবধান বাড়বে।” তবে ‘কাঁটা’ রয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। দলের কর্মীদের বড় অংশ এখনও বসে রয়েছেন। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলার পরেও তাঁদের অনেককে ভোটের কাজে নামাতে পারেননি ব্লক নেতৃত্ব। ব্লকের নির্বাচনী কমিটিতে পুনর্বাসন দেওয়া হলেও তাঁরা ‘চুপ’ করেই রয়েছেন। সে সব দেখে দলের একাংশের আশঙ্কা, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে যাঁরা দলের প্রার্থীকে হারাতে ‘অগ্রণী’ ভূমিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এ বার ‘বিক্ষুব্ধ’। ২০১৬ সালের মতো অন্তর্ঘাত হবে না তো? দলের এক নেতার দাবি, “প্রার্থী খুব ভাল হওয়ায় বিক্ষুব্ধদের প্রভাব কাজ করবে না।”
বিজেপিরও দাবি, এ বছর সংখ্যালঘু ভোট ভাগ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে জামালপুরে। তবে মতুয়ারা তাদের সঙ্গেই থাকবেন। পাশাপাশি তৃণমূলের একটা অংশ বসে থাকায় তাঁদের লাভ হবে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতারা। দলের নেতা রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, “যে কোনও ভোটে শাসক দলের পক্ষে অনেককে মুখ খুলতে দেখা যায়। জামালপুরে সেই হাওয়া নেই।”