দিলীপ ঘোষ।
নিত্য দিনের প্রাতর্ভ্রমণ, চা-চক্র সেরে কাগজ পড়ছিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। এক জন আলাপ করতে এসে পরিচয় দেন সরকারি কর্মচারী বলে। শুনেই দিলীপ বলে ওঠেন, ‘এরাই রিগিং করেন।’ পরে মন্তব্য হাল্কা করে দিয়ে ওই ব্যক্তির হাতে পদ্মফুল ধরিয়ে দেন তিনি। বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে অবসরের পরে ‘ফুল টাইম জব’ দেওয়ার আশ্বাসও দেন।
পুরো বিষয়টির সমালোচনা করেছে সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। বিজেপি অবশ্য তাতে গুরুত্ব দিতে নারাজ।
বৃহস্পতিবার বর্ধমান শহরের অফিসার্স কলোনির ভিতরে ছোট মাঠে প্রাতভ্রর্মণ করেন দিলীপ। সেখান থেকে বেরিয়ে পারবীরহাটা বাজারের সামনে চা-চক্রে যোগ দেন। তার পরেই এক ভদ্রলোক তাঁর সঙ্গে পরিচয় করেন। হাত মেলান, কুশল বিনিময় করেন। দিলীপ জিজ্ঞাসা করেন, ‘কিসের দোকান’? তাঁকে জানানো হয়, তিনি সরকারি কর্মচারী। এটা শুনেই পাশে বসে থাকা বর্ধমান-দুর্গাপুরের সভাপতি অভিজিৎ তা-কে হাসতে হাসতে দিলীপ আঙুল উঁচিয়ে বলেন, “সরকারি কর্মচারী? এরাই রিগিং করেন।” তার সংযোজন, “ছবি সংবাদমাধ্যমে দেখা গেলেই কালকেই সাসপেন্ড। কেউ বাঁচাতে পারবে না।”
কিছুক্ষণ পরে ফের ওই সরকারি কর্মচারীকে দেখে দিলীপ হাসতে হাসতে নচিকেতার গানের সুরে বলেন, ‘আমি সরকারি কর্মচারী..।’ তাঁর হাতে পদ্ম ফুল তুলে দেন। বলেন, “কেন তুলে দিলাম বুঝতে পেরেছেন তো? বেতন দিদির কাছ থেকে নেবেন, ভোটটা আমাকে দেবেন।” সরকারি কর্মচারীর প্রত্যুত্তর, “আমরা পুরোপুরি সব পদ্মের।” ওই কর্মচারী বেরিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ করতেই দিলীপ তাঁকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন, “দাদা ক’বছর আর চাকরি?” জবাবে ওই কর্মচারী বললেন, “২০২৬ সাল।” দিলীপের বার্তা, “ভোটের আগে রিজ়াইন করে দেবেন। সরকার বানিয়ে তারপরে আমরা ফুল টাইম জব দেব আপনাকে।”
তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনের পূর্ব বর্ধমান জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ সাঁইয়ের অভিযোগ, “ভোটের আগে এই ধরনের কথা বলা মানে নির্বাচনী বিধিভঙ্গ করা। যে কর্মচারী অবসর নেবেন, তাঁকে কী ভাবে স্থায়ী চাকরির আশ্বাস দিচ্ছেন? সবটাই মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা।”
বামপন্থী শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী, ব্যাঙ্ক কর্মীদের যৌথ সংগঠন ১২ জুলাই কমিটির জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক করালী চট্টোপাধ্যায়ও মনে করেন, “কর্মচারীদের উনি অপমান করেছেন। এর তীব্র প্রতিবাদ করছি।’’
আর তৃণমূলের রাজ্যের অন্যতম মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাসের দাবি, “হতাশা থেকে উনি নানা রকম কথা বলছেন। গুরুত্ব দেওয়ার কোনও মানে হয় না।”
বিজেপির মুখপাত্র সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, ‘‘বাম, তৃণমূল দুই আমলেই যে সরকারি কর্মচারীদের একাংশ রিগিংয়ে মদত দেন, এটা সবাই জানেন।’’
হুমকি, মারধরে অভিযুক্ত তৃণমূল
ভাতার: দলীয় পতাকা টাঙানোর সময়ে বিজেপি কর্মীদের মারধর ও হুমকির অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে ভাতারের বলগোনা পঞ্চায়েতের ঢেঁড়িয়া গ্রামে। ভাতার থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন আহত বিজেপি কর্মী জয়ন্ত সিংহ। অভিযোগ, ওই গ্রামের দাসপাড়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় বিজেপির কয়েক জন কর্মী দলীয় পতাকা টাঙাচ্ছিলেন। তখনই তৃণমূলের কর্মীরা এসে মারধর করে। বলগোনা অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি প্রণব পাঁজার দাবি, মিথ্যা অভিযোগ।