—প্রতীকী চিত্র।
গত পাঁচ বছরে জয়নগর লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে জয়নগরে সব থেকে বেশি সময় দিতে দেখা গিয়েছে বিদায়ী তৃণমূলের সাংসদ প্রতিমা মণ্ডলকে। জয়নগরে পড়ে থাকার কারণ হিসেবে সাংসদ প্রতিনিধি তথা জয়নগর থেকে জেলা পরিষদ সদস্য খান জিয়ায়ুল হক বলেন, “গত বার এই কেন্দ্রে খুব বেশি লিড ছিল না। সে কারণেই এখানে প্রচুর সময় দিয়েছেন সাংসদ। এলাকার অনেক কাজও করেছেন।” গত লোকসভায় জয়নগর বিধানসভা থেকে পনেরো হাজারের কিছু বেশি ভোটে লিড পেয়েছিলেন প্রতিমা। ২০২১ সালের বিধানসভায় সেই লিড বেড়ে দাঁড়ায় চল্লিশ হাজারের কাছাকাছি। সভা-সমিতিতে তৃণমূল দাবি করছে, এ বার লিড আরও বাড়বে। তবে এখান থেকে এগিয়ে থাকতে চেষ্টা কম করছে না বিজেপিও।
জয়নগর বিধানসভা দীর্ঘ দিন এসইউসির দখলে ছিল। ২০১১ সালেও এখানে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে জেতেন এসইউসি প্রার্থী। ২০১৬ সালের বিধানসভায় একা লড়াই করে তৃণমূল। সে বার জয়নগর থেকে জিতে বিধায়ক হন বিশ্বনাথ দাস। পরে ২০২১ সালের বিধানসভাতেও জয়ী হন তিনি। লোকসভার প্রার্থী ঘোষণার পরেই প্রতিমার হয়ে জোরকদমে প্রচারে নেমে পড়েছেন বিশ্বনাথ। কিন্তু অভিযোগ, এই সাংসদের সঙ্গেই গত পাঁচ বছরে তীব্র দ্বন্দ্ব ছিল বিধায়কের। কোনও জায়গাতেই দু’জনকে এক সঙ্গে দেখা যেত না। তৃণমূল কর্মীরা কার্যত সাংসদ গোষ্ঠী ও বিধায়ক গোষ্ঠীতে বিভিক্ত ছিলেন। সেই গোষ্ঠীকোন্দলের প্রভাব এই ভোটে পড়বে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠছে। তবে কোন্দলের অভিযোগ মানতে চাননি বিধায়ক।
লোকসভা কেন্দ্রের একমাত্র পুরসভা এই বিধানসভা এলাকাতেই। বিধানসভায় লিড পেলেও সেই জয়নগর-মজিলপুর পুর এলাকায় গত ভোটে পিছিয়ে ছিলেন প্রতিমা। ২০২২ সালে পুরভোটে কংগ্রেসকে হারিয়ে সেই পুরসভা দখল করেছে তৃণমূল। কিন্তু পুরভোটে ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে। ভোটের দিন এলাকায় প্রকাশ্যেই বন্দুক হাতে বহিরাগতদের দাপাদাপি দেখা যায়। গুলিও চলে। অভিযোগ, সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে ভোট দিতে না দিয়ে পুরসভা দখল করে তৃণমূল। পরের বছর পঞ্চায়েত ভোটেও সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে।
তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল এবং পুরসভা, পঞ্চায়েতে ভোট সন্ত্রাসের অভিযোগকে কাজে লাগিয়ে এই ভোটে বিধানসভা এলাকায় বাজিমাত করতে চাইছে বিজেপি। এই কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী অশোক কাণ্ডারী জয়নগরে বিধানসভা এলাকারই বাসিন্দা। এখানে তাঁর নার্সিংহোম রয়েছে। এলাকায় তিনি পরিচিত মুখ। সেই সুবিধা তিনি পাবেন বলে মনে করছে বিজেপি। অশোকও প্রচার-পর্বে ছুটে বেরিয়েছেন এক অঞ্চল থেকে আর এক অঞ্চলে।
লড়াইয়ে রয়েছে আরএসপি, এসইউসি। এসইউসি প্রার্থী নিরঞ্জন নস্কর এলাকায় প্রচার করছেন। এমনকী, এলাকায় দেওয়াল লিখনে তৃণমূল, বিজেপির সঙ্গে টক্কর দিচ্ছে এসইউসি। নিরঞ্জনের দাবি, পুরনো ভোটারদের অনেকেই এ বার তাঁদের ভোট দেবেন। আরএসপির সমরেন্দ্রনাথ মণ্ডলের ফ্লেক্স-ফেস্টুন চোখে পড়েছে কম। এলাকায় তাঁকে খুব বেশি প্রচারে দেখা যায়নি বলেও অভিযোগ। বাম, এসইউসি এলাকায় কতটা ভোট টানতে পারবে, তা নিয়ে কৌতূহল আছে রাজনৈতিক মহলে।
এই পরিস্থিতিতে জয়নগর থেকে এগিয়ে থাকতে মরিয়া বিজেপি। দলের প্রার্থী অশোক বলেন, “মানুষ ভোট দিতে পারলে আমরা অনেক ভোটে জিতব। এলাকার মানুষ সন্ত্রাস চান না। তাঁরা শান্তিতে থাকতে চান। আমি জিতে আসলে প্রথম কাজ হবে মানুষের শান্তি নিশ্চিত করা।” জয়নগরের বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস বলেন, “বিজেপি প্রার্থী তো নিজের বুথেই পিছিয়ে ছিলেন। যিনি নিজের বুথে দলকে জেতাতে পারেন না, তিনি কী ভাবে বিধানসভা, লোকসভায় জেতাবেন! তৃণমূল এখান থেকে বড় ব্যবধানে লিড পাবে।”