বটতলায় মতুয়াদের উৎসবে রান্নায় হাত লাগিয়েছেন মুকুটমণি অধিকারী। নিজস্ব চিত্র।
কাঠের আগুনে বড় লোহার কড়াইয়ে ফুটছে খিচুড়ি। তাতে খুন্তি নাড়ছেন মুকুটমণি অধিকারী। দক্ষিণ নদিয়ার অন্যতম মতুয়া মুখ, কিছু দিন আগেও যিনি বিজেপি ছিলেন, বর্তমানে রানাঘাট কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। নব ওড়াকান্দির হরিগুরু মণিচাঁদ সেবাশ্রম আয়োজিত মতুয়াদের উৎসব প্রাঙ্গণে বৃহস্পতিবার তিনিই ছিলেন অন্যতম মধ্যমণি।
নবদ্বীপের মাজদিয়া-পানশিলা পঞ্চায়েত এবং ভালুকা পঞ্চায়েতের সীমানায় কানাইনগর বটতলা থেকে দু’পা এগিয়ে বাদল স্বপ্ন সমিতির মাঠে এ বারই প্রথম ওই মতুয়া মহামিলন মেলার আয়োজন হয়েছিল। বুধবার থেকে শুরু হওয়া ওই উৎসবে এ দিন মতুয়া ধর্ম নিয়ে বলেন মুকুট। এর পর চলে যান মণ্ডপের পিছনে রান্নার জায়গায়। পরে তিনি ভক্তদের নিজের হাতে প্রসাদ পরিবেশনও করেন।
গ্রামীণ নবদ্বীপে বিজেপির অন্যতম শক্ত ঘাঁটি মাজদিয়া পানশিলা পঞ্চায়েত, বিশেষ করে কানাইনগর। লাগোয়া ভালুকা এবং জোয়ানিয়াতেও তাদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। গত পঞ্চায়েত ভোটে কানাইনগর গ্রামের চারটি বুথের সব ক’টিতে বিজেপি প্রার্থীরা জিতেছেন। গত বিধানসভা ভোটে এই এলাকায় হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী। গত লোকসভা ভোটেও বিজেপির জগন্নাথ সরকার এখান থেকে এগিয়ে ছিলেন।
প্রশ্ন হল, বিজেপি ঘেঁষা মতুয়া মহাসঙ্ঘের সদ্যপ্রাক্তন জেলা সভাপতি মুকুটমণি ফুল বদল করতেই কি এ বার সেই চেনা অঙ্কও কি বদলাতে শুরু করেছে?
অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের নবদ্বীপ ব্লক সম্পাদক তথা জেলা কমিটির সদস্য এবং বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার এসসি মোর্চার সহ-সভাপতি রঞ্জিত মণ্ডল এই মিলন মেলার অন্যতম আয়োজক। তাঁর বক্তব্য, “নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেওয়ার বদলে কেন্দ্র আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। মুকুটমণি আমাদের সঙ্গে আগেও ছিলেন, এখনও আছেন। পারলে উনিই পারবেন এই কাজ করতে। তাই গুরুদেবের নাম নিয়ে সকলকে একত্রিত করার চেষ্টা হচ্ছে। আগে আমার বাড়িতে উৎসব হত, এ বার মাঠে করা হল।”
নবদ্বীপের ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, ওই এলাকার মানুষ বরাবর বিজেপিকেই ভোট দেন। কিন্তু এ বার হিসাব বদলে যেতে পারে। ব্লক তৃণমূল সভাপতি কল্লোল কর বলেন, “মুকুটমণি সব সময়ে ওঁদের আন্দোলনের মুখ ছিলেন। ফলে এ বার ভোটের ফলাফল অন্য রকম হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।”
আর মুকুটমণির দাবি, “শুধু মতুয়া বলে নয়, সব ধর্মের সব বর্ণের মানুষ আমার সঙ্গে আছেন। নবদ্বীপ থেকে বেরিয়ে আমি এসেছি আঁইশমালি। এখানে ঐতিহাসিক মতুয়া মহাসম্মেলন হল। এখানকার মতুয়াদের উৎসাহ, উদ্দীপনা, আবেগ নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব হবূ না।”
তবে প্রতিপক্ষের দাবি এক কথায় উড়িয়ে দিয়ে বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ পাল্টা দাবি করেন, “সবাই কি আর বিজেপিকে ভোট দেয়? তেমনই মতুয়াদের মধ্যেও কিছু তৃণমূল, কিছু সিপিএমের লোক আছে। তবে তারা সংখ্যায় খুবই নগণ্য। ও সবে গুরুত্ব দেওয়ার মতো কিছু নেই।”