—প্রতীকী চিত্র।
যে ‘শত্রু’ লুকিয়ে রয়েছে ঘরেই, তাকে পরাস্ত করার পন্থা কী— তৃণমূল ও বিজেপি, উভয় শিবির চিন্তিত এই প্রশ্নে।
কালনা বিধানসভায় ভোট-গণিতের নিরিখে প্রতিপক্ষ বিজেপির থেকে এগিয়ে তৃণমূল। কিন্তু সেই ভোট ধরে রাখতে পার হতে হবে অন্তর্কলহের বাধা। সেই কারণেই বোধহয় রাজ্য নেতৃত্বও বার বার কালনায় এসে জোর দিচ্ছে কর্মিবৈঠকে। বিজেপির অবশ্য দাবি, কালনা শহর তৃণমূলের হাতছাড়া। লাগোয়া পঞ্চায়েতগুলিতেও ভাল ফলের আশা করছেন তাঁরা।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কালনা বিধানসভায় তৃণমূল এগিয়েছিল ৩,৬৩৩ ভোটে। ৪৩.২১ শতাংশ ভোট ছিল তৃণমূলের ঝুলিতে। বিজেপি পেয়েছিল ৪১.৪ শতাংশ ভোট। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে ব্যবধান আরও বাড়ে। বিজেপির থেকে সাড়ে সাত হাজারের বেশি ভোটে এগিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু বর্ধমান পূর্বে যে পাঁচটি বিধানসভায় এগিয়ে থাকার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী বিজেপি, তার মধ্যে অন্যতম কালনা।
কালনা ১ ব্লকের তিনটি পঞ্চায়েত, কালনা ২ ব্লকের আটটি পঞ্চায়েত এবং কালনা পুরসভা নিয়ে এই বিধানসভা। এক সময়ে সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি ছিল এই কেন্দ্রটি। গত লোকসভায় বামেদের ভোটে থাবা বসায় বিজেপি। এ বার ব্যবধান ধরে রাখতে
কালনা ২ ব্লকের কয়েকটি পঞ্চায়েতে জোর দিচ্ছে তৃণমূল। তবে চিন্তা রয়েছে কালনা শহর এবং লাগোয়া কয়েকটি পঞ্চায়েতে নিয়ে। গত লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে কালনা শহরে এগিয়েছিল বিজেপি। পুরভোটে ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে
১৭টি দখল করে তৃণমূল। বোর্ড গঠনের দিন থেকে প্রকাশ্যে আসে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব। গত তিন বছরে কখনও পুরসভার কাজকর্মের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে তৃণমূলের বেশির ভাগ কাউন্সিলর প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন। কখনও কাউন্সিলরদের বৈঠকে বেধেছে ধুন্ধুমার। আবার কখনও পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়েছেন দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলর। বিজেপি, সিপিএমও দাবি করেছে, তৃণমূল শহরের উন্নয়ন করতে ব্যর্থ। সম্প্রতি শহরের নেতা-কর্মীদের নিয়ে একটি বৈঠক করে তৃণমূল। সেখানেও ক্ষোভ জানান অনেকে। নেতারা গোষ্ঠীকলহ ভুলে দলীয় প্রার্থীর হয়ে জোরকদমে প্রচারে নামার নির্দেশ দেন। কিন্তু এখনও শহরে তৃণমূলের প্রচারে তেমন গতি নেই।
এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘পুরবোর্ডে উন্নয়নের কাজ করে মানুষের মনে আস্থা জাগানোর সুযোগ ছিল। তা হয়নি। শহরে ভাল কিছু আশা করব কোন মুখে! ভরসা সেই কালনা ২ ব্লক।’’ ওই ব্লকের সভাপতি প্রণব রায় বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্লকের তিনটে জেলা পরিষদের আসনে আমাদের লিড ছিল ৩২ হাজার। এ বার আরও ভাল ফল হবে।’’
বিজেপির দাবি, তৃণমূলের দুর্নীতি, পঞ্চায়েত এবং পুরভোটে সন্ত্রাসের ফলে বিরোধী-হাওয়া বইছে। এই পরিস্থিতিতে কালনা ১, ২ ব্লকের কয়েকটি পঞ্চায়েত থেকে বড় ব্যবধানের আশা করছেন তাঁরা। মতুয়া, তফসিলি ভোট স্বপক্ষে আনতেও নেওয়া হচ্ছে নানা পরিকল্পনা। প্রার্থী বাছাইয়েও সেই অঙ্ক মাথায় রাখা হয়েছে। এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘বিধানসভা ভোটে কালনা ১ ব্লকের ১৩টি বুথে এক থেকে ১০টি ভোট পেয়েছিল দল। এত কম ভোট পাওয়ার পিছনে কি ত্রুটি ছিল, তা খুঁটিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে।’’ তবে প্রার্থীকে নিয়ে বিক্ষোভ, তাঁর বিরুদ্ধে পোস্টার পড়েছে। বিজেপি অবশ্য তাতে পাত্তা দিতে নারাজ। দলের বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের লোকসভা কেন্দ্রের কনভেনার সুমন ঘোষ বলেন, ‘‘কালনা বিধানসভা থেকে লিড ছাড়া অন্য কিছু ভাবছি না।’’
সিপিএম প্রার্থী নীরব খাঁ গত বিধানসভায় কালনায় প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁর দাবি, ফসলের লাভজনক দর না থাকা, তাঁতশিল্পের দুর্দশা, ভাঙন,ভাগীরথীতে সেতুর মতো মানুষের প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। মানুষ যে ভাবে সাড়া দিচ্ছেন, তা বিফলে যাবে না।