বর্ধমানের বড়নীলপুরে দিলীপ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।
জেলা প্রশাসন তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ করলেন বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। বর্ধমান থানার ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ একাধিকবার আপত্তিকর মন্তব্য করেন তিনি। বৃহস্পতিবার পুলিশকে মারধর করে, বিবস্ত্র করার নিদানও দলের নেতাকে দিতে শোনা যায় তাঁর মুখে। তৃণমূল বিষয়ট নিয়ে কটাক্ষ করেছে। জেলা পুলিশ তাঁর মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ।
এই কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার পরেই দুর্গাপুরে কুকথা বলার জন্য দল ও কমিশনের কাছ থেকে ‘শো-কজ়ে’র চিঠি পেয়েছিলেন দিলীপ। ভোট শেষ হওয়ার মুখেও আপত্তিকর মন্তব্যে তাঁর বিরাম নেই!
বৃহস্পতিবার বর্ধমানের বড়নীলপুর মোড় থেকে বটতলা পর্যন্ত প্রাতর্ভ্রমণ করেন দিলীপ। বটতলায় চায়ে-পে চর্চা করেন। ছিলেন ওই কেন্দ্রের বিজেপি সভাপতি অভিজিৎ তা। বিজেপির এক মহিলা কর্মী জানতে চান, বুধবার তো দলীয় কোনও কর্মসূচি ছিল না। তার পরেও পুলিশ পারবীরহাটা মোড়ে আটকে দিল কেন? ওই কর্মসূচির অনুমতি ছিল না বলেও পুলিশ জানায় বলে দাবি করেন তিনি। দিলীপ বলেন, “নিয়ম মেনে অনুমতি চাওয়া হচ্ছে। আর অনুমতি বাতিল হচ্ছে কর্মসূচির আগের দিন রাতে। যাতে আমরা আর কিছু করতে না পারি। আমি এ বার প্রচার ছেড়ে দিয়ে থানা, বিডিও, ডিএম অফিস ঘেরাও করব। শেষের দিকে ওদের দমবন্ধ অবস্থা করে দেব। কেমন চামচাগিরি করে দেখব।” এর পরেই বর্ধমান থানার আইসির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দিলীপ।
অভিজিৎকে উদ্দেশ্য করে তাঁকে প্রকাশ্যেই আইসি (বর্ধমান থানা)-কে মারধর করা, চৌরাস্তায় বিবস্ত্র করার কথা বলতে শোনা যায়। অভিজিৎকে তিনি নির্দেশ দেন, “চমকে কথা বলো। পুলিশ ভদ্রলোক নাকি! ছোটলোকদের সঙ্গে যে ভাবে কথা বলতে হয়, পুলিশের সঙ্গে সেই ভাবেই কথা বলো। সব কটা তোলাবাজ, দাগি, পুলিশ সবচেয়ে বড় দুষ্কৃতী, এই বাংলায়। তারা কোনও নিয়ম মানে না, আমি কেন নিয়ম মানব। তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করছে না, আর আমাদের আটকাচ্ছে।”
বুধবার বিকেলেই পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে বর্ধমান থানায় বিজেপি বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ তুলে দিলীপ বলেন, “রাস্তায় বেরনো বন্ধ করে দেব। কাল তো ট্রেলর হয়েছে। এরপরে থানা থেকেই বার হতে দেব না। আমি সারা দিন থানার সামনে বসে থাকব। আমার আর প্রচারের দরকার নেই।” তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানোর জন্যও অভিজিৎকে নির্দেশ দেন।
দিলীপের অভিযোগ, “জেলা প্রশাসন তৃণমূলকে জেতানোর জন্য কাজ করছে। আমাদের কর্মসূচি প্রতিদিন বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলব, সেখানেও পুলিশ চলে আসছে। বাহিনীকে কাজে লাগানো হচ্ছে। অথচ যে সব জায়গায় ভয় আছে, উত্তেজনা আছে বলে আমরা জানাচ্ছি, সেখানে বাহিনীকে ব্যবহার করা হচ্ছে না।”
জেলা প্রশাসন এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হয়নি। পুলিশও বিজেপি প্রার্থীর ‘হুঁশিয়ারি’ নিয়ে মন্তব্য করতে নারাজ। তবে তৃণমূলের রাজ্যের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “বিজেপি বর্ধমান-দুর্গাপুরের হেরে যাওয়ার কপাল-লিখনটা বুঝে গিয়েছে। সেই কারণেই আগাম অজুহাতের রাস্তা তৈরি করতে বিজেপি প্রার্থীকে অসংসদীয় মন্তব্যের দিকে ঝুঁকতে হয়েছে। তিনি দল ও কমিশনের গুঁতো খাওয়ার পরেও শিক্ষা নেননি।”
এ দিন শহরের জেলখানা মোড়ে দিলীপকে ফের গো-ব্যাক স্লোগান দেওয়া হয়। তৃণমূল কর্মীদের একাংশ তাঁকে কালো পতাকা দেখান বলেও অভিযোগ। পাল্টা ‘চোর, চোর’ স্লোগান দেন বিজেপি কর্মীরাও। দিলীপের দাবি, হতাশা থেকেই তৃণমূলকর্মীরা এই ধরনের আচরণ করছেন। পাল্টা
যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক শেখ আসিফ আনোয়ার জানান, নারীবিদ্বেষী দল ও তাঁদের নেতাকে তাঁরা প্রার্থী হিসাবে মানেন না। তাই কালে পতাকা দেখানো হয়েছে।