Lok Sabha Election 2024

জল মাপছে সব দলই

দুয়ারে লোকসভা ভোট। প্রতিটি কেন্দ্রের অধীনে সাতটি বিধানসভা। কী বলছে জনতা। রইল বিধানসভাওয়াড়ি পরিক্রমা।

Advertisement

প্রশান্ত পাল 

জয়পুর শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৪ ০৬:০৮
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

৫০০ বছরেরও আগে রাজা জয় সিংহের নামানুসারে জয়পুরের পত্তন হয়েছিল। তবুও জয়পুরে যেন কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন পৌঁছয়নি। রেল থেকে কর্মসংস্থান, বিড়ি শ্রমিকদের স্বার্থ, সেচের অপ্রতুলতা— ভোটের মুখে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এই তল্লাটে। এর সঙ্গেই এলাকার রাজনৈতিক তাৎপর্য অন্য মাত্রা যোগ করেছে এই বিধানসভা এলাকায়।

Advertisement

একসময় কংগ্রেসের গড় বলে পরিচিত জয়পুর বিধানসভা কেন্দ্রে ফরওয়ার্ড ব্লক, তৃণমূল থেকে বর্তমানে বিজেপি বিধায়ক রয়েছেন। কিন্তু কাঙ্খিত উন্নয়ন কোথায় হয়েছে? প্রশ্ন আমজনতার। এ নিয়ে চাপানউতোর অব্যাহত দলগুলির মধ্যে।

তৃণমূল প্রার্থী তথা জয়পুরের প্রাক্তন বিধায়ক শান্তিরাম মাহাতোর দাবি, ‘‘বাম আমলে নারী শিক্ষায় দেশে পিছনের সারিতে ছিল এই বিধানসভার আওতাধীন ঝালদা ২ ব্লক। এখন কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী প্রকল্পের হাত ধরে সেই তকমা ঘুচেছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বিকাশ গ্রামীণ মহিলাদের আর্থিক দিশার সন্ধান দিয়েছে।’’

Advertisement

জয়পুরে আর এক প্রাক্তন বিধায়ক তথা ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতোর ‘‘এখানে শিল্প বলতে বিড়ি। প্রায় এক লক্ষ বিড়ি শ্রমিক রয়েছেন। কিন্ত পরিচয়পত্র রয়েছে মোটে ৩০ হাজারের। কেন্দ্রের উদাসীনতায় এই শিল্প ধুঁকছে।’’

অভিযোগ উড়িয়ে বিদায়ী সাংসদ তথা বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর দাবি, কোটশিলায় বিড়ি শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল তৈরি হয়ে পড়ে থাকলেও তাঁর উদ্যোগেই সম্প্রতি চালু হয়েছে। যদিও ফব প্রার্থীর দাবি, প্রয়াত সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়ার উদ্যোগেই ওই হাসপাতাল গড়ে ওঠে। বিদায়ী সাংসদ শুধু দ্বারোদ্ঘাটন করেছেন। পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল চালু হয়নি।

কংগ্রেস আবার এক যোগে তৃণমূল ও বিজেপিকে আক্রমণ করেছে। জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি ফণিভূষণ কুমারের দাবি, কংগ্রেসের আমলে সাহারজোড় (মুরগুমা) জলাধার গড়ে উঠেছিল। মানুষ আশায় ছিল, ২০১১-র পালাবদলের পর সেচের সমস্যা মিটবে, চাষাবাদ বাড়বে, কর্মসংস্থান হবে। এলাকায় কাজ না থাকায় অনেকেই আজ পরিযায়ী শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘‘এলাকার কৃষিজ পণ্য রফতানির জন্য ট্রেন মিলবে বলে আশায় ছিলেন মানুষজন। ভেবেছিলেন আরও যাত্রিবাহী ট্রেন পাবেন তাঁরা। তার বদলে বেশি ভাড়া গুণে মানুষকে ট্রেনে যাতায়াত করতে হচ্ছে।’’ বিদায়ী সাংসদ জ্যোতির্ময়ের অবশ্য দাবি, ‘‘কোটশিলা-পুরুলিয়া ডবল লাইনের দাবি দীর্ঘদিনের। সেই কাজ আমাদের সরকারই শুরু করেছে।’’ পাল্টা তৃণমূল নেতৃত্বও জয়পুরের আঘরপুর ডুংরির প্রস্তাবিত শিল্পতালুককে ঘিরে কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।

তবে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, তাদের প্রার্থী শান্তিরাম জয়পুরের ঘরের ছেলে। কারণ তাঁর বাবা রামকৃষ্ণ মাহাতো এই কেন্দ্রের পাঁচ বারের (কংগ্রেস) বিধায়ক। শান্তিরামও চার বারের বিধায়ক (২ বার কংগ্রেস ও ২ বার তৃণমূল)। ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতোও জয়পুরের (২০১১-২০১৬) প্রাক্তন বিধায়ক। এ বার বাম সমর্থিত কংগ্রেসও জয়পুরে তাদের পুরনো জমি উদ্ধারে মরিয়া।

তবে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে জয়পুরের রাজনৈতিক সমীকরণে খানিকটা বদল আসে। ঘাঘরা পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনকে ঘিরে দুই বিজেপি কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ২০১৯-র লোকসভা ভোটে এখানে ঘাসফুলকে পিছনে ফেলে দেয় পদ্মফুল শিবির। বছর দুয়েক বাদে ২০২১-র বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। নির্দল হিসেবে লড়াইয়ের ময়দানে থাকা যুব তৃণমূল নেতাকে সমর্থন করেছিল তৃণমূল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এই কেন্দ্রের দখল নেয় বিজেপিই।

তবে তৃণমূল শিবিরের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ ঘটেছে।অন্য দিকে, গেরুয়া শিবিরের দাবি, পঞ্চায়েত ভোট শাসকদল কারচুপি করায় মানুষের রায়ের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটেনি। এই তরজার মধ্যেই ভোটের মুখে জয়পুর বিধানসভা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement