মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র ।
প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের স্বামী বলছেন এ দেশের ভবিষ্যৎ নেই। মোদী আসলে দেশ শেষ। বিজেপির লোকেরাই বলছে। আবার বলছে লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করে দেব। আমি বলছি হাত দিয়ে দেখান ওখানে!’’
বনগাঁর বিদায়ী সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘একটা কথা আপনাদের বলছি। একটা মতুয়ার গায়ে হাত দিতে দেব না। আপনার যিনি লোকসভার বিজেপি প্রার্থী এবং মন্ত্রী, তাঁর টিকি দেখতে পাওয়া যায়নি পাঁচ বছরে। আবার উনি নাগরিকত্ব দেব বলে নাম লিখিয়েছেন। শুনেছি, টাকাও তুলেছেন কোথাও কোথাও। নিজে আগে নাম লেখাননি কেন? লেখালেই বিদেশি। আমরা বিদেশি হতে চাই না। স্বদেশি থাকব।’’
মমতা বলেন, ‘‘হাওয়া বদল হচ্ছে। ভাল করে জেনে রাখুন। কেউ ভয়ে বলতে পারছে না, চতুর্থ দফা হয়ে গিয়েছে। বিজেপি খুব জোর ১৯৫-২০০ আসন পাবে। জোট ‘ইন্ডিয়া’ পাবে ২৯৫-৩১৫ আসন। এই বার মোদীর ৪০০ পার না পগারপার। বাঙালিরা কেউ চাই না মোদী আসুক।’’
ইভিএম খুলে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলে ভোট দিলে বিজেপিতে যাচ্ছে। বনগাঁয় মন্তব্য মমতার। তিনি বলেন, ‘‘হেরে যাচ্ছে বুঝে শেষ কামড় দিতে ইভিএমে কারচুপি হচ্ছে। কেউ আলো বন্ধ করতে দেবেন না।’’
বনগাঁয় মমতা বলেন, ‘‘রায়গঞ্জ সীমানায় বিএসএফ আজ এক জনকে গুলি করেছে। গুলি করেই ওদের হাতে কিছু ঢুকিয়ে বলে বোমা ছিল বা অন্য কিছু ছিল। কালকেও রানাঘাটের দত্তফুলিয়ায় বিজেপির টোটো ছিল। বিএসএফ-এর লোকেরা বিজেপি কর্মীদের নিয়ে যাচ্ছিল। আমি টোটো ভাইদের অনুরোধ করব বিজেপির পাতা ফাঁদে পা দেবেন না।’’
বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য, ‘‘কিছু দেয় না বিজেপি সরকার। জল, গ্যাস, চাল কিছু দেয় না। পেনশনও বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু বাংলা পেনশেন দেয়।’’
মমতা আরও বলেন, ‘‘ভোট এলে সিএএ-র কথা মনে পড়ে। মতুয়া ভোটের কথা মনে পড়ে। ভাগাভাগির রাজনীতি মনে পড়ে। এরা এসসি, এসটি, সব তুলে দেবে। আদিবাসী এবং সংখ্যালঘুদের তুলে দেবে। হিন্দুদেরও তুলে দেবে। আসামে এনআরসি হওয়ার সময় ১৯ লক্ষ হিন্দু বাঙালি বাদ হয়েছিল। এখনও অনেকে জেলে। কয়েক দিন আগেও আমি গিয়ে ওদের দুঃখের কথা শুনে এসেছিলাম। মোদীর গ্যারান্টি মানে নো গ্যারান্টি। ’’
সন্দেশখালি নিয়ে সিপিএম এবং বিজেপিকে একযোগে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘‘সিপিএমের হার্মাদরাই এখন বিজেপিতে। সন্দেশখালিতে গিয়ে খোঁজ নিন, যারা কারসাজি করেছিল ওরা আগে সিপিএম করত। এখন বিজেপিতে। ওরা জানে না, মা-বোনেদের টাকাটা বড় কথা নয়, ওদের সম্মান করা বড় কথা। যা তা লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে না জানিয়ে। শুধু বিজেপির মণ্ডল সভাপতিকে দোষ দিলে হবে? যাঁরা মদত দিয়েছেন, যাঁরা বলেছেন বোম-রিভলভার চাই, তাঁদেরও শাস্তি দরকার। সত্যের জয় আছে। তোমার মিথ্যা বেরিয়ে যাবে। আসল রিপোর্ট বেরোতে সমস্ত সংবাদমাধ্যমকে সত্যি দেখাতে বারণ করছে বিজেপি।’’
চাকরি প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘কাউকে চাকরি দেয় না। মানুষখেকো বাঘ শুনেছেন, চাকরিখেকো বাঘ শুনেছেন? যাকেই চাকরি দিচ্ছি, সিপিএম, বিজেপি এবং কংগ্রেস মিলে কোর্টে গিয়ে কেস করে সেই চাকরি আটকাচ্ছে। তবে দিল্লির কংগ্রেস নয়। এরা তিনটে দল মিলে চাকরিখেকো বাঘ হয়ে চাকরি খাচ্ছে। কাজ দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কিল মারার গোসাঁই। আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে আছি। দেশের প্রধানমন্ত্রীও চোখে জল বার করে বলেছিলেন আমরাও শিক্ষকদের সঙ্গে আছি। কিন্তু আদালতে বিজেপি চাকরি যাওয়াকে সমর্থন করেছিল। আর সিপিএমের প্রকাশবাবু বিখ্যাত আইনজীবী। তিনি কলকাতার মেয়র থাকার সময় হাজার হাজার ভুয়ো বার্থ সার্টিফিকেট বার করেছিলেন। কিন্তু আমি ওই সব কথা মনে রাখিনি। সুপ্রিম কোর্ট চাকরি যাওয়ার মামলায় স্থগিতাদেশ দিতে গায়ে জ্বালা ধরেছে।’’
মোদীর নাম না করে মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, ‘‘বলছে প্রধানমন্ত্রীর গ্যারান্টি। আমি নাম বলছি না। আগেও পাঁচ বছর আগে গ্যারান্টি দিয়েছিল। গ্যারান্টি দিয়ে কথা রাখা গেলে তার মূল্য আছে। কিন্তু কথা যদি না রাখা যায় এবং শুধু বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করা হয়, তা হলে তাকে আমি গ্যারান্টি মানি না। পাঁচ বছর আগে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা ছিল। কেউ পেয়েছেন? ওটা মোদীর গ্যারান্টি নয়, ফোর টোয়েন্টি। ১০ কোটি চাকরি দেওয়ার কথা ছিল, তা দেয়নি।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমরা গঙ্গাতে স্নান করি, নদীতে ডুব দিই, সমুদ্রে দিই। গঙ্গার জোয়ারে নোংরা ভেসে আসে। ভাটা আবার টেনে নিয়ে যায়। রাজনীতিও জোয়ার-ভাটার মতো। গঙ্গায় এক বার নয়, হাজার বার স্নান করতে পারি, কিন্তু কেউ কি গঙ্গায় স্নান করেই পবিত্র হয়ে গেল? কোভিডের সময় উত্তরপ্রদেশে অনেক দেহ গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দূষণ করা হয়েছিল, মুর্শিদাবাদে অনেক দেহ এসেছিল। আমরা দাহ করেছিলাম। সম্মান দিয়েছি। কিন্তু বিজেপি সম্মান দেয়নি।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমরা হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মদিনে ছুটি দিই। বড়মা যত দিন বেঁচে ছিলেন, তত দিন আমি আসতাম। আপনারা জানেন এই নির্বাচন বাংলা চালানোর নির্বাচন নয়, দিল্লি চালানোর নির্বাচন। কিন্তু আমরা বলছি পাল্টে দিন। যিনি এখন প্রধানমন্ত্রী আছেন, তাঁর অত্যাচারে এবং বিজেপির অত্যাচারে মানুষ অত্যাচারিত। হয় জেলে আর নয় গেলে। মাঝখানে আর কিছু নেই। তফসিলিদের মধ্যে প্রথম উত্তরপ্রদেশ। বিজেপির রাজ্য। সেখানেই সব থেকে বেশি অত্যাচার হয়েছে।’’
বনগাঁয় প্রচার শুরু করে মমতা বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরে জনসভা করছি। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। গলা বসে গিয়েছে। কিন্তু কথা বলে যেতে হবে।’’
কমিশনকে নিশানা করে তিনি আরও বলেন, ‘‘এ রকম নির্বাচন দেখিনি। আমি নির্বাচন কমিশনকে সম্মান করি। কিন্তু কয়েক জন বিজেপির হাতের পুতুল হয়ে গিয়েছে। দু’তিন মাস ধরে নির্বাচন হচ্ছে। সব সরকারি কাজ বন্ধ। শুধু মোদীকে সমর্থন জোগাতে এমনটা করছে। আপনাদের জন্য অনেক সম্মান রইল। কিন্তু আপনাদের মতো লোক থাকলে মিটিং করতে বেশি সময় লাগবে না।’’
পরের সভাটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করবেন শ্রীরামপুর লোকসভায়। শ্রীরামপুর বরাবরই তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। ২০০৯ সাল থেকে এই আসনে জয়ী হয়ে আসছেন তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বারও তাঁকে প্রার্থী করেছেন মমতা।
২০১৯ সালে বনগাঁ আসনটি তৃণমূলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল বিজেপি। সেই আসন ফিরে পেতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল।