মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি ফেসবুক।
লোকসভা ভোটের প্রচার শেষ হলে ধ্যানে বসবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে দু’দিন ধ্যানমগ্ন হবেন তিনি। সূত্রের খবর, মূল ভূখণ্ডের অদূরে যে শিলার উপর বসে ধ্যান করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ, সেই ‘ধ্যানমণ্ডপম’-এ বসে ধ্যান করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে খবর, ৩০ মে সন্ধ্যা থেকে ১ জুন সন্ধ্যা পর্যন্ত— দু’দিন বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালে ধ্যানে বসবেন মোদী। তাই নিয়ে বুধবার বারুইপুরের সভা থকে মমতাকে নিশানা করেন মমতা। সভা থেকে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘লোকে যখন পুজো করে, তখন ক্যামেরার সামনে করে? উনি সমুদ্রের হাওয়া খেতে খেতে প্রচার চালাবেন। নির্বাচনের পরে এ ভাবে প্রচার করতে পারেন না। আমরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাব। উনি ধ্যান করতেই পারেন, কিন্তু সংবাদমাধ্যম তা দেখাতে পারে না। কারণ তা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে।’’
তৃণমূলের কমিশনে যাওয়া নিয়ে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিজেপি এজেন্ডা তৈরি করে, তার পর সেটা তৃণমূল করে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেই কন্যাকুমারী যাচ্ছেন, সেখানে ধ্যান করবেন। প্রধানমন্ত্রীর কাজে যদি আপত্তি থাকে, তবে অভিযোগ জানাতেই পারে।’’
শওকত মোল্লাকে পাশে নিয়ে বুধবার মমতা কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন। মমতা বলেন, ‘‘বেচারা শওকতকে মধ্যরাতে নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই। বলছে ‘কালকে এসে দেখা করো’। জমিদারি নাকি? এখন নির্বাচন করাবে, না কি দেখা করতে যাবে।’’
বারুইপুরের সভা থেকে সিপিএমকে আক্রমণ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আজ সিপিএম বড় বড় কথা বলছে। ৩৪ বছর চিটফান্ডের টাকা নিয়েছে। চিটফান্ড বানিয়েছিল সিপিএম। ৩৪ বছর ধরে একটা কাজও করেনি।’’
মমতা বলেন, ‘‘ওরা বলছে বিনা পয়সায় গ্যাস, বিদ্যুৎ দিচ্ছে। সব ফোরটোয়েন্টির গ্যারান্টি। আপনারা বিশ্বাস করবেন না। আমরাই সব করে দেব।’’
মমতাকে বলেন, ‘‘আপনারা মিমিকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছিলেন। কিন্তু মিমি চলচ্চিত্র জগতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় এ বার সায়নীকে টিকিট দিয়েছি। সায়নী কোমরে কাপড় কষে লড়াই করার মেয়ে। ওকে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের কারও নেই।’’
মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি বলেছিল, তিন মাস পর বাংলার তৃণমূল সরকার ভেঙে দিয়ে ক্ষমতায় এসে লক্ষ্মীর ভান্ডার বন্ধ করবে। সাহস থাকলে লক্ষ্মীর ভান্ডার ভেঙে দেখাক।’’
মমতা বলেন, ‘‘জয়নগরের মোয়া জিআই প্রোডাক্ট করে দিয়েছি। বর্ধমানের সীতাভোগও তাই। আমরা এখন চেষ্টা করছি বারুইপুরের পেয়ারাটা যাতে জিআই ট্যাগ পায়। তার প্রক্রিয়া চলছে। এটাও হবে।’’
বারুইপুরের সভা থেক মমতা বলেন, ‘‘প্রতি বছর আমরা গঙ্গাসাগরে মেলা করি। প্রতি বছর ৫০০ কোটি টাকা করে আমাদের খরচ হয়। আজ পর্যন্ত গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলা হিসাবে ঘোষণা করল না। মুড়িগঙ্গা সেতুটা ঠিক করার কথা বলেছি। কিন্তু কিছু করেনি। আমি করে দেব।’’
মমতা বলেন, ‘‘লোকে যখন পুজো করে, তখন ক্যামেরার সামনে করে? উনি সমুদ্রের হাওয়া খেতে খেতে প্রচার চালাবেন। নির্বাচনের পরে এ ভাবে প্রচার করতে পারেন না। আমরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাব। উনি ধ্যান করতেই পারেন, কিন্তু সংবাদমাধ্যম তা দেখাতে পারে না। কারণ তা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে।’’
মমতা বলেন, ‘‘কাকদ্বীপ থেকে মিটিং করে উনি (নরেন্দ্র মোদী) বলছেন বাঁধের টাকা দিয়েছেন, তৃণমূল নাকি খেয়ে নিয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, বাঁধের জন্য একটা টাকাও দেয়নি।’’
মমতা বলেন, ‘‘উনি (নরেন্দ্র মোদী) নাকি বলছেন সাইক্নোন আটকেছেন। রাজপ্রাসাদে বসে কাকদ্বীপের সাইক্লোন আটকেছেন। আমরা সারা রাত রাস্তায় থেকে দুর্যোগ মোকাবিলা করলাম, আর এখন উনি বলছেন সাইক্লোন আটকেছেন।’’
মমতা বলেন, ‘‘দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন,তাঁর বায়োলজিক্যাল বাবা-মা নেই। তাঁকে নাকি ঈশ্বর পাঠিয়েছেন। তিনি নাকি ঈশ্বরের দূত।’’
মমতা বলেন, ‘‘সমুদ্রের উপর একটা ভাল জায়গা। ওখানে লোকে ঘুরতে যান, স্বামীজি খুব ভালবাসতেন। আর সেখানে গিয়ে উনি ধ্যান করবেন। উনি নাকি দেবতার থেকেও বড় দেবতা। তাই যদি হয়, তবে ওঁর ধ্যান করার কী প্রয়োজন, লোকে ওঁর ধ্যান করবে।’’
লোকসভা ভোটের প্রচার শেষ হলে ধ্যানে বসবেন প্রধানমন্ত্রী। তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে দু’দিন ধ্যানমগ্ন হবেন তিনি। এমনই খবর। বারুইপুরের সভা থেকে এই নিয়ে মোদীকে নিশানা করে মমতা বলেন, ‘‘ধ্যান করলেই ক্যামেরা ছুটবে। প্রতি বার দেখবেন, নির্বাচনের শেষ দফার ৪৮ ঘণ্টা আগে কোথাও না কোথাও ঢুকে বসে থাকেন। আর লোককে দেখায়, ধ্যান করছি।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে মমতা বলেন, ‘‘আপনি ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করেছেন। আমি তা মানব না। যেমন চলছে চলবে। আপনি থাকবেন না, আপনার আয়ু ৪ তারিখ পর্যন্ত।’’
বারুইপুরের সভা থেকে মমতা বলেন, ‘‘আমার আজ এখানে সভা করার কথা ছিল না। তবে পরে মনে হল, বিজেপির মিথ্যাচারের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন আছে। তাই এসেছি। ক্ষমতা থাকলে চ্যালেঞ্জ করুক বিজেপি।’’
বারুইপুর পূর্বের ফুলতলা সংলগ্ন সাগর সঙ্ঘ মাঠে জনসভা করছেন মমতা। মঞ্চে রয়েছেন যাদবপুরের প্রার্থী সায়নী।
বুধবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিনটি কর্মসূচি রয়েছে। প্রথমেই যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষের সমর্থনে জনসভা করছেন তিনি। তার পর উত্তর কলকাতায় একটি পদযাত্রাও সারবেন মমতা। শেষে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল প্রার্থী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে মেটিয়াবুরুজে জনসভা করার কথা মমতার।