Lok Sabha Election 2024

‘দু’পক্ষকেই বলব, রাজায় রাজায় যুদ্ধে যেন উলুখাগড়ার প্রাণ না যায়’

আজ ভোট রয়েছে কলকাতা পুলিশের অধীনে থাকা প্রায় পাঁচ হাজার বুথে। সেগুলির কোনওটি উত্তর বা দক্ষিণ কলকাতায়। কোনওটি যাদবপুর, কোনওটি ডায়মন্ড হারবার, আবার কোনওটি জয়নগরে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২৪ ০৭:৩৯
Share:

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

প্রায় তিন মাসের প্রচার-পর্ব শেষ। আজ, শনিবার রাজ্যের ন’টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে কলকাতা ও শহর সংলগ্ন এলাকায় ভোট। এই জন্য দিন দুয়েক আগে থেকেই প্রস্তুতি চলছে। কলকাতা পুলিশের পাশাপাশি বাড়তি বাহিনী আনানো হয়েছে রাজ্য পুলিশ থেকে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের দিয়েও এলাকা ঘিরে রাখা হচ্ছে। এর মধ্যেই চলছে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের উস্কানিমূলক মন্তব্য, পাল্টা মন্তব্য। এ শহরের বিশিষ্টজনদের বড় অংশই আহ্বান জানাচ্ছেন শান্তিপূর্ণ ভোটের। তাঁরা বলছেন, ‘‘মানুষের উপরে বিশ্বাস থাকলেই উস্কানি নয়, শান্তির ভোট হয়।’’

Advertisement

আজ ভোট রয়েছে কলকাতা পুলিশের অধীনে থাকা প্রায় পাঁচ হাজার বুথে। সেগুলির কোনওটি উত্তর বা দক্ষিণ কলকাতায়। কোনওটি যাদবপুর, কোনওটি ডায়মন্ড হারবার, আবার কোনওটি জয়নগরে। পুলিশ-প্রশাসনের তরফে জোর প্রস্তুতির দাবি জানানো হলেও অনেকেই মনে করছেন, শেষ দফার এই ভোটে বিক্ষিপ্ত গোলমালের ঘটনা ঘটতেই পারে। রক্তপাতের আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। কলকাতা পুলিশের অধীনে থাকা ভাঙড় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বৃহস্পতিবার রাতেই। যার রেশ চলেছে শুক্রবারেও।

এই প্রেক্ষিতেই গায়িকা লোপামুদ্রা মিত্র বললেন, ‘‘যে হারে পরস্পরবিরোধী শালীনতাহীন মন্তব্যের ঝড় চলছে, তাতে হিংসা ছড়াতে বাধ্য। মাঝেমধ্যে মনে হয়, এই ভোটাধিকার প্রয়োগ করা কিসের জন্য? মানুষের পরিবর্তন হচ্ছে কোথায়? মানুষ তো মনুষ্যত্বই হারিয়ে ফেলছে। আগে তো মনুষ্যত্ব বুঝতে হবে, তার পরে তো গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের গুরুত্ব বোঝার প্রশ্ন!’’ তাঁর মন্তব্য, ভোটাধিকার প্রয়োগের দিনটা যেন আরও একটা ছুটির দিন হয়ে উঠেছে। দিনটার গুরুত্বই কাউকে বোঝানো যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতির জন্য রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাহিত্যিক তিলোত্তমা মজুমদার বললেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের বলব, কালকের দিনে অন্তত পারস্পরিক হানাহানি বন্ধ রাখুন। ভারতীয় নাগরিককে তাঁর দায়িত্ব, কর্তব্য পালন করার সুযোগ দিন।’’

Advertisement

এর মধ্যেই অবশ্য তৃণমূল নেতা মদন মিত্র এবং বরাহনগরের বিজেপি প্রার্থী সজল ঘোষ জড়িয়েছেন বাগ‌্‌যুদ্ধে। মদন বলেছেন, ‘‘দমদম মানে দাওয়াই।’’ তাঁর দলের কর্মীরা জানেন, ভোটের আবহাওয়ায় কাকে, কোন দাওয়াই দিতে হয়। পাল্টা সজল বলেছেন, ‘‘আমরাও জানি কোন দাওয়াইয়ের পাল্টা কী! কখন গুড়-বাতাসা, কখন চড়াম চড়াম দিতে হবে!’’

তিলোত্তমার মতোই দক্ষিণ কলকাতার আর এক ভোটার, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সপরিবার সকাল সকাল ভোট দিতে যাই প্রতি বার। আমার এলাকায় শান্তিপূর্ণ ভোট হয়। কিন্তু চাইব, রাজ্যের যে যে জায়গায় ভোট হচ্ছে, সর্বত্রই যেন শান্তি বজায় থাকে। কোনও মন্তব্যই যেন কাউকে প্ররোচিত করতে না পারে।’’ কবি জয় গোস্বামী দাবি করেছেন, ‘‘যাদবপুরের ভোটার আমি। তবে কখনও ভোটে অশান্তি দেখিনি।’’ আজ ভোট দিতে গিয়েও তাঁর একই অভিজ্ঞতা হবে বলে আশাবাদী তিনি।

পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘যদি মানুষের উপরে বিশ্বাস থাকে, তা হলে তো ভোটে অশান্তি হওয়ারই কথা নয়। দুর্নীতিমুক্ত সরকার, জাতপাতের বিভেদের পরিবর্তে সাম্য এবং আরও কর্মসংস্থানের আশা নিয়ে কাল ভোট দিতে যাব।’’

তবে বিবেকানন্দ রোডের বাসিন্দা, উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের ভোটার রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত জানালেন, ভোট দিতে যেতে না পারার আক্ষেপের কথা। তাঁর কথায়, ‘‘১৯৫১ সাল থেকে ভোট দিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু গত কয়েক বছর ভোট দিতেই পারছি না। কারণ, ভোটার তালিকায় নাম উঠছে না। তবে যাঁরা ভোট দেবেন এবং যাঁরা ভোট করাবেন, দু’পক্ষকেই বলব, রাজায় রাজায় যুদ্ধে যেন উলুখাগড়ার প্রাণ না যায়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement