—প্রতীকী চিত্র।
দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে পাঁচটা বছর। দোরগোড়ায় আরও একটি লোকসভা ভোট। অথচ, তাঁদের প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূন্য। তাঁরা, অর্থাৎ চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, গত পাঁচ বছরে ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতি এসেছে। কিন্তু, কোনওটিই শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। যার নিট ফল, নিয়োগের দাবিতে এখনও রাস্তাতেই বসে আছেন তাঁরা। চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্ন, এ বার ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকেরই মনে হতে পারে, গত পাঁচ বছরে তাঁরা কী পেলেন? এমনকি, আদৌ ভোট দেবেন কি না, সেই দোলাচলেও ভুগছেন কেউ কেউ।
নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীদের ধর্না মঞ্চে কেটে গিয়েছে এক হাজারেরও বেশি দিন। তাঁদেরই এক জন অভিষেক সেন জানান, পাঁচ বছর আগে লোকসভা ভোটের আগে যখন প্রেস ক্লাবের সামনে চাকরিপ্রার্থীদের অনশন চলছিল, সেই সময়ে এক বিকেলে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তৎকালীন
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অভিষেক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, নিয়োগ জটিলতার যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, তার জন্য তিনি নিজে উদ্যোগী হবেন। আমরা যেন অনশন তুলে নিই। প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়েই তিনি আমাদের কয়েক জনকে নিয়ে একটি কমিটি গড়ে দিলেন। যাঁরা নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে বিকাশ ভবনের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। আমরা তা মেনেও নিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, যে কমিটি তৈরি হয়েছিল, সেই কমিটিরই সদস্যদের ডেকে নিয়োগপত্র দেওয়া হল।’’ হতাশ গলায় অভিষেক আরও বলেন, ‘‘সেই শুরু। গত পাঁচ বছর ধরে শুধুই প্রতিশ্রুতির বন্যা বইল।’’
একই কথা জানাচ্ছেন শহিদুল্লাহ নামে আর এক চাকরিপ্রার্থী। তাঁর আক্ষেপ, এর পরেও
মুখমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি তাঁরা পেয়েছেন। ধর্না চলাকালীন এক চাকরিপ্রার্থীর ফোনে মুখ্যমন্ত্রীর ফোন এসেছিল। তিনি দ্রুত নিয়োগের আশ্বাস দিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের অনুরোধ
করেন, তাঁরা যেন ধর্না তুলে নেন। শহিদুল্লাহ বলেন, ‘‘আবার সেই শুকনো প্রতিশ্রুতি। আবার আমরা বোকা বনলাম।’’
চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, গত পাঁচ বছরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে কুণাল
ঘোষ, সবাই তাঁদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ধর্না মঞ্চে এসে সহমর্মিতা দেখিয়েছেন বিরোধী দলের নেতারা। কলকাতা হাই কোর্টের এক প্রাক্তন বিচারপতি, যিনি এখন রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন, তিনিও সহমর্মী ছিলেন চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি। কিন্তু প্রার্থীদের অভিযোগ, এখন তাঁদের মনে হচ্ছে, সকলেই যেন নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
রাজ্য সরকারের গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি পদের এক চাকরিপ্রার্থী কিংশুক চৌধুরী বলেন, “গত লোকসভা থেকে এ বারের লোকসভা ভোট। এর মাঝে কত ধর্না অবস্থানে বসলাম। বিকাশ ভবন থেকে শুরু করে স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিসে, ধর্মতলায়, মেয়ো রোডে, ডোরিনা ক্রসিংয়ে, কালীঘাটে বিক্ষোভ দেখালাম। কিন্তু পাথর কি নড়ল একটুও?” এসএসসি-র
গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি পদের এক চাকরিপ্রার্থী অষ্টপদ শাসমল বলেন, “সিবিআই তদন্তে দেখা গিয়েছে, আমাদের প্রতি অবিচার হয়েছে। ওএমআরশিটে ৫ নম্বরকে করা হয়েছে ৫৫। নিয়োগ নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেটা তো প্রমাণিত। কিছু মানুষ জেলে গিয়েছেন। কিন্তু, যাঁরা যোগ্য প্রার্থী, তাঁরা তো বঞ্চিতই থেকে গেলেন।’’
প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থী অর্ণব ঘোষ মনে করেন, ২০১৭ সালে প্রাথমিকে ৪২,৯৪৯ জনের নিয়োগ হওয়ার পর থেকে হতাশার জগদ্দল পাথর ক্রমেই বেড়েছে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওই
৪২৯৪৯ জনের বেশির ভাগকেই নিয়োগ করা হয়েছে ঘুরপথে। তাঁদের প্যানেল প্রকাশ করা হয়নি।’’ অর্ণব বলেন, ‘‘আমাদের ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ায় কোন অ্যাপটিটিউড টেস্ট হয়নি, সংরক্ষণের নিয়ম মানা হয়নি। আদালতের নির্দেশে ২০২২ সালে ৪২৯৪৯ জনের ওই প্যানেল কিছু সময়ের জন্য প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু একাধিক অভিযোগ ওঠার পরে প্রযুক্তিগত ভুল থাকার কারণ দেখিয়ে প্যানেল তুলে নেওয়া হয়।’’
উচ্চ প্রাথমিকের এক চাকরিপ্রার্থী সুশান্ত ঘোষ বলেন, “গত পাঁচ বছরে মাঝেমধ্যেই মনে হয়েছে, এই বুঝি নিয়োগের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেলাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নানা কারণে পিছিয়ে গিয়েছে শুনানি।’’ তাঁর কথায়, “সম্প্রতি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখলাম, ভোটের প্রচার চলছে। প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি আসছেন। ফের তাঁরা বলছেন, নিয়োগের বিষয়টি দ্রুত দেখে নেবেন। মনে মনে খালি ভাবছি, গত পাঁচ বছরের মতো আবারও আমরা বোকা বনব না তো?’’