—প্রতীকী চিত্র।
ভোটের ময়দানে না থেকেও আছেন তিনি। যেমন থেকেছেন গত প্রায় দু’দশক ধরে।
রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। হাবড়ার বিধায়ক তিনি। তবে গোটা জেলায় তৃণমূলের রাজনীতিতে দীর্ঘ দিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা গিয়েছে বালুকে (জ্যোতিপ্রিয়ের ডাক নাম)। এ বার বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের ভোটেও তাঁর অস্তিত্ব রীতিমতো চলমান। ভোটের ময়দানে শারীরিক উপস্থিতি না থাকলেও আলোচনার কেন্দ্রে এখনও তিনি।
তবে এ বার বালু সরাসরি ভোটের ময়দানে না থাকায় হাবড়ায় (বারাসত কেন্দ্রের মধ্যে) দলকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে বলে মনে করছেন শাসক দলের একাংশ। এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘২০১১ সাল থেকে হাবড়ায় যে কোনও ভোটে আমরা নিশ্চিন্তে থাকতাম। কেবল বালুদার নির্দেশই পালন করতাম। জানি না, এ বার বালুদার অভাব কী ভাবে সামলানো সম্ভব হবে!’’
এরই মধ্যে অবশ্য ২০১৯ সাল থেকে হাবড়ায় বিজেপি দাপট দেখাতে শুরু করেছে। গত লোকসভা ভোটে বারাসত কেন্দ্রে তৃণমূল জয়ী হলেও হাবড়া কেন্দ্রে বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদার পিছিয়ে ছিলেন ১৯,০৫০ ভোটে। পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ডেই পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহ জ্যোতিপ্রিয়ের কাছে পরাজিত হন। তবে জয়ের ব্যবধান ছিল মাত্র ৩,৮৪১ ভোটের!
বালু গ্রেফতার হওয়ার পরে বিদায়ী সাংসদ কাকলির হাবড়ায় আনাগোনা বেড়েছে। তিনি সংগঠনের রাশ শক্ত হাতে ধরতে চেষ্টা করছেন বলে দলের অন্দরে খবর। তবে দলের একটি সূত্রের মতে, হাবড়ায় দলের অন্দরে গোষ্ঠীকোন্দলের চোরা স্রোত এখনও বইছে।
হাবড়ায় বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল ইদানীং একাধিক বার প্রকাশ্যে এসেছে। এরই মধ্যে গত লোকসভায় বিজেপি প্রার্থী মৃণালকান্তি দেবনাথ জানিয়েছেন, স্বপন মজুমদার প্রার্থী থাকলে তিনি প্রচারে নামবেন না। বিজেপিকে ভোটও দেবেন না। মৃণাল হাবড়ার বাসিন্দা।
তবে হাবড়া এলাকায় বড় সংখ্যায় মতুয়া ও উদ্বাস্তু সমাজের বসবাস। সিএএ-র সূত্র ধরে ভাল ফল করার আশা করছে বিজেপি। স্বপনের কথায়, ‘‘জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেফতার হওয়াটা অবশ্যই এ বার ভোটে হাবড়ায় প্রভাব ফেলবে। আমরা সুবিধা পাব। হাবড়ার মানুষ জানেন, রেশন দুর্নীতির টাকা খেয়ে বালুবাবু পেট মোটা করে ফেলেছিলেন। গুন্ডা পুষে ভোটে সন্ত্রাস করতেন।’’
গত লোকসভা ভোটে ফরওয়ার্ড ব্লকের হরিপদ বিশ্বাস পেয়েছিলেন ১,২৪,০৬৮টি ভোট। ২০১১ সাল থেকেই এখানে সিপিএমের রক্তক্ষরণ শুরু। তবে এ বার তারা আশাবাদী। করোনা ও আমপানের সময়ে বাম কর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়ান। হাটথুবায় সমবায় সমিতির দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আন্দোলন হয়েছে। সিপিএম নেতা আশুতোষ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘দূরে সরে যাওয়া অনেক বামপন্থী সক্রিয় ভাবে ফিরে এসেছেন।’’
অভিযোগ নিয়ে পুরপ্রধান নারায়ণ সাহা বলেন, ‘‘জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক থাকা মানে জেলায় তৃণমূল সুরক্ষিত থাকা। সে কারণে বিজেপি ইডিকে দিয়ে চক্রান্ত করে তাঁকে ধরেছে।’’