দিনহাটায় রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —নিজস্ব চিত্র।
ভোটে কোনও ভাবেই হিংসা বরদাস্ত নয়। হিংসা কোনও ভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। লোকসভা ভোটের আগে প্রতিটি রাজনৈতিক দল এবং বাংলার মানুষকে এই বার্তা দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বুধবার সন্ধ্যায় কোচবিহারে পৌঁছে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘রাজনৈতিক হিংসার বিষয়ে জ়িরো টলারেন্স। দিনহাটা শান্তি চায়। দিনহাটা শান্তি পাবে। সারা বাংলায় শান্তি থাকবে।’’
মঙ্গলবার রাতে দিনহাটায় তৃণমূল এবং বিজেপির সংঘর্ষের ঘটনার পর পুলিশের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিল রাজভবন। বুধবার সকালে রাজভবন থেকে জানানো হয় কোচবিহার জেলার ওই ঘটনাস্থলে আসছেন রাজ্যপাল। বিকেলে কলকাতা থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এসেছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘গ্রাউন্ড জ়িরোতে গিয়ে বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এসেছি। সেখানে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলব। যা বলার ঘটনাস্থলে গিয়েই বলব। যে রিপোর্ট চেয়েছিলাম তা পুরোটাই গোপনীয়।’’ অন্য দিকে, দিনহাটার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনকে রিপোর্ট জমা দিয়েছে পুলিশ। তৃণমূলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে যে এফআইআর দায়ের হয়েছে, তারও উল্লেখ রয়েছে বলে খবর। পুরো ঘটনার উপর নজর রাখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যায় দিনহাটায় পৌঁছে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আমি খুব খুশি যে দিনহাটার মানুষ এখানে এসেছেন। হিংসা শেষ করা পর্যন্ত সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়ব। হিংসা, গুন্ডামির জায়গা নেই এই বাংলায়। বাংলার যে কোনও নাগরিকই চান স্বচ্ছ এবং অবাধ ভোট। আমি সবার সঙ্গে আছি। আর আপনাদের সবার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, রাজভবন লোকসভা পোর্টাল চালু করেছে। তাতে যে কোনও নাগরিক রাজ্যপালের কাছে পৌঁছতে পারেন। আমি রাজ্যপাল হিসাবে সর্বদা মানুষের জন্য এবং মানুষের সঙ্গে আছি।’’ পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে অশান্তির ঘটনায় একাধিক গ্রেফতারির তুলনা টেনে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘সন্দেশখালি থেকে গুন্ডাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। কোনও ভাবে হিংসা, গুন্ডামিকে রেয়াত নয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সারা বিশ্বের কাছে বাংলা প্রমাণ করে দেবে যে আমরা অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে সমর্থ। মানুষ শান্তি চায়। তাঁরা শান্তিতেই থাকবেন।’’
মঙ্গলবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে বুধবার ২৪ ঘণ্টার জন্য বন্ধ ডেকেও বিকেলে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে তৃণমূল। বিজেপির অভিযোগ, বিকেলে সভা করার জন্যই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল পুলিশের কাছে গিয়ে অভিযোগ করে আসে। নাটাবাড়ির বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামী বলেন, ‘‘নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশের পর নির্দিষ্ট পোর্টালে আবেদন করে রাজনৈতিক সভা-সমিতি করতে হয়। আমরা এসপিকে জানালাম, মন্ত্রী উদয়ন গুহ পোস্ট করেছেন যে আজ সন্ধ্যা ৬টাতেই তিনি দিনহাটার চৌপথিতেই জনসভা করবে। আমরা পুলিশ অফিসারকে বললাম, নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে হবে। গতকাল জেলা সভাপতি-সহ বিজেপি মনোনীত প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের গাড়িতে এবং তাঁদের দৈহিক ভাবে আক্রমণ করেছে। উদয়ন গুহ নিজে সেই কাজ করেছেন। আমরা তাঁর গ্রেফতারির দাবি করেছে। নির্বাচন কমিশনকেও জানিয়েছি।’’
এর মধ্যেই বুধবার পুণ্ডিবাড়িতে নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়েছিলেন কোচবিহারের তৃণমূল প্রার্থী জগদীশ বসুনিয়া। তৃণমূলের অভিযোগ, তাঁর গাড়িতে হামলা করেন বিজেপি বিধায়ক সুকুমার রায়ের অনুগামীরা। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি।