গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভা নির্বাচনে চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে সোমবার। এই পর্বে বাংলার আট আসনে ভোটগ্রহণ ছিল। বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল, বোলপুর এবং বীরভূম— এই আট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে সোমবার। ভোটপর্বে বিক্ষিপ্ত কিছু হিংসার অভিযোগ উঠেছে ঠিকই, কিন্তু মোটের উপর ভোট শান্তিপূর্ণই হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর। চতুর্থ দফায় এ রাজ্যে কত ভোট পড়ল? ২০১৯ সালের ভোটদানের হারকে কি টেক্কা দিতে পারল? মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন চতুর্থ দফার ভোটদানের হার প্রকাশ করতেই মিলল সেই সব প্রশ্নের উত্তর। কমিশন সূত্রে খবর, সোমবার বাংলার আট আসনের ভোটদানের হার গড়ে ৮০ শতাংশের বেশি। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই আট আসনের ভোটদানের হারের তুলনায় কিছুটা কম।
মঙ্গলবার কমিশন ভোটদানের হারের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, বাংলার আট আসনে ভোটদানের হার গড়ে ৮০.২২ শতাংশ। ২০১৯ সালে সংখ্যাটা ছিল ৮৩.০৫ শতাংশ। এই আট আসনের মধ্যে সোমবার সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে। আর সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে আসানসোলে।
সোমবার বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৭৭.৫৪ শতাংশ। গত বারের লোকসভা নির্বাচনে এই আসনেই ভোট পড়েছিল ৭৯.৭২ শতাংশ। এ বার এই কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ অধীর চৌধুরীকেই প্রার্থী করেছিল কংগ্রেস। তবে প্রার্থী নির্বাচনে এই কেন্দ্রে চমক দিয়েছিল বাংলার শাসকদল তৃণমূল। বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য ইউসুফ পাঠানকে প্রার্থী করে ঘাসফুল শিবির। বিজেপির প্রার্থী ছিলেন নির্মল সাহা।
কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনেও ২০১৯ সালের তুলনায় এ বার প্রায় চার শতাংশ কম ভোট পড়েছে। সোমবার এই লোকসভা কেন্দ্রের ভোটদানের হার ৮০.৬৫ শতাংশ। গত বার তা ছিল ৮৪.১১ শতাংশ। কৃষ্ণনগরের বিদায়ী সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে এ বারও প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়। এই কেন্দ্রে লড়েছেন কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী এসএম সাদিও।
রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রটি ছিল বিজেপির দখলে। ২০১৯ সালে এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন জগন্নাথ সরকার। পদ্মশিবির এ বারও তাঁর উপরই ভরসা রেখেছে। বিজেপি থেকে তৃণমূলে যাওয়া মুকুটমণি অধিকারীকে এ বারের লোকসভা নির্বাচনে জগন্নাথের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছিল বাংলার শাসকদল। এই কেন্দ্রে লড়েছেন কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী অলকেশ দাস। কমিশন সূত্রে খবর, সোমবার রানাঘাট লোকসভা আসনে ভোট পড়েছিল ৮১.৮৭ শতাংশ। ২০১৯ সালে এই আসনেই ভোটদানের হার ছিল ৮৪.৫৩ শতাংশ।
বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন শর্মিলা সরকার। বিজেপির প্রার্থী অসীমকুমার সরকার। ২০১৯ সালে এই আসনে জয় পেয়েছিল তৃণমূল। সুনীলকুমার মণ্ডলকে সে বার প্রার্থী করেছিল ঘাসফুল শিবির। গত লোকসভা কেন্দ্রে ভোটদানের হার ছিল ৮৪.৮৬ শতাংশ। সোমবার এই আসনে ভোট পড়েছে ৮২.৮৫ শতাংশ।
বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এ বার চমক দিয়েছিল বিজেপি। মেদিনীপুরের বিদায়ী সাংসদ দিলীপ ঘোষকে এ বার বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী করেছিল পদ্মশিবির। প্রার্থী বাছাইয়ে চমক দিয়েছিল তৃণমূলও। ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য কীর্তি আজ়াদকে প্রার্থী করে বাংলার শাসকদল। সোমবার এই কেন্দ্রে ভোটদানের হার ৮০.৭২ শতাংশ। ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই আসনে ভোট পড়েছিল ৮২.৭৩ শতাংশ।
কমিশন সূত্রে খবর, চতুর্থ দফার নির্বাচনে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে ভোটদানের হার ৭৩.২৭ শতাংশ। ২০১৯ সালে এই আসনে ভোটদানের হার এর থেকেও তিন শতাংশ বেশি ছিল। সে বার এই লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি বাবুল সুপ্রিয়কে প্রার্থী করেছিল। জয়ও পান তিনি। পরে বাবুল তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন করাতে হয় কমিশনকে। বিজেপির জেতা আসন ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। অভিনেতা-রাজনীতিবিদ শত্রুঘ্ন সিন্হাকে উপনির্বাচনে প্রার্থী করেছিল বাংলার শাসকদল। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও তাঁকেই প্রার্থী করে তৃণমূল। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি টিকিট দিয়েছিল সুরেন্দ্র অহলুওয়ালিয়াকে।
বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ অসিতকুমার মালকে এ বারও প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। বিজেপির প্রার্থী ছিলেন পিয়া সাহা। সোমবার এই লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পড়েছিল ৮২.৬৬ শতাংশ। ২০১৯ সালের তুলনায় তা কম। সে বার এই লোকসভা আসনে ভোটদানের হার ছিল ৮৫.৮৮ শতাংশ। কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সোমবার বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পড়েছিল ৮১.৯১ শতাংশ। ২০১৯ সালে এই কেন্দ্রেই ভোটদানের হার ছিল ৮৫.৪৬। এই লোকসভা আসনের বিদায়ী সাংসদ শতাব্দী রায়কে এ বারও প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। বিজেপি প্রার্থী করে দেবতনু ভট্টাচার্যকে।