ভূপতিনগরে এনআইএ-র গাড়িতে ভাঙচুর। — ফাইল চিত্র।
হাই কোর্টের নির্দেশে ভূপতিনগর বিস্ফোরণের তদন্তে গিয়ে আক্রান্ত হন এনআইএ আধিকারিকেরা। গত শনিবার সকালের সেই ঘটনায় ধরপাকড় না হলেও মামলা-পাল্টা মামলার জেরে তৃণমূল এবং বিজেপি, দু’দলেরই বহু নেতা-কর্মীই এলাকা ছাড়া। ফলে, কাঁথি লোকসভার অধীন ভূপতিনগরের নাড়ুয়াবিলা, অর্জুননগরে দু’দলের ভোট প্রচারই আপাতত থমকে।
গত শনিবারের সেই ঘটনায় এনআইএ-র অভিযোগের ভিত্তিতে এবং মূল অভিযুক্তের স্ত্রীর পাল্টা নালিশে একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে বৃহস্পতিবারও এলাকায় তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। হামলার তদন্তে এ দিন জখম এনআইএ আধিকারিককে ভূপতিনগর থানায় ডাকা হয়েছিল। তিনি না এলেও তাঁর মেডিক্যাল রিপোর্ট বুধবার রাতে ই-মেলে পাঠানো হয়েছে। কাঁথির এসডিপিও দিবাকর দাস বলেন, ‘‘এনআইএ-র অভিযান সংক্রান্ত দু’টি মামলারই তদন্ত চলছে।’’
শনিবারের ঘটনায় সাক্ষী হিসেবে তিন গ্রামবাসীর বয়ানও নথিভুক্ত করেছে পুলিশ। প্রয়োজনে আরও কয়েক জনকে ডাকা হতে পারে। বিস্ফোরণ মামলায় তৃণমূলের দুই দাপুটে নেতা এনআইএ-র হাতে ধরা পড়েছেন। আবার কয়েকটি
পুরনো মামলায় বিজেপির স্থানীয় মণ্ডল সভাপতি তপন মিদ্যা-সহ একাধিক নেতা-কর্মীকেও গ্রেফতারের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাঁদের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত হাই কোর্ট রক্ষাকবচ দিলেও তাঁরা এলাকার বাইরেই রয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে ভূপতিনগরের এই এলাকায় তৃণমূল ও বিজেপি, দুই শিবিরের ভোট প্রচারই ঝিমিয়ে পড়েছে। নাড়ুয়াবিলার অদূরে বাসুদেববেড়িয়ায় প্রচার করেছেন বিজেপি প্রার্থী সৌমেন্দু অধিকারী। কাছাকাছি মুগবেড়িয়া এবং ইটাবেড়িয়ায় প্রচার সেরেছেন তৃণমূল প্রার্থী উত্তম বারিক। তবে দু’জনের কেউই এখনও অর্জুননগর বা বরজে যাননি।
বছরদুয়েকের পুরনো মামলায় নাম রয়েছে থাকার কারণে বিজেপির তফসিলি মোর্চার সভাপতি রাজু বর্মণ গ্রেফতার হন। সেই মামলাতেই হাই কোর্ট রক্ষাকবচ দেয় বিজেপি নেতা-কর্মীদের এবং ভূপতিনগর থানার ওসি গোপাল পাঠককে ভর্ৎসনা করে। নির্দেশ দেয়, বিজেপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনও মামলার তদন্ত করতে পারবেন না তিনি। তার পরেও অবশ্য অভিযুক্তেরা ঘরে ফেরেননি। অর্জুননগর এবং বরজ পঞ্চায়েতের প্রায় ৪০টি বুথে এখনও দেওয়াল লিখন করতে পারেনি গেরুয়া শিবির। স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি বলছেন, ‘‘রবিবার থেকে বরজে সভা শুরু। তার পরে অর্জুননগরে প্রচার।’’
দেওয়াল লিখনে এগিয়ে থাকলেও আপাতত তৃণমূলের প্রচারও বন্ধ রয়েছে। বলাইচরণ মাইতি এবং মনোব্রত জানার গ্রেফতারির পরে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান অরুণ মাইতি, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মানব পড়ুয়া-সহ অনেকেই এলাকাছাড়া। বিস্ফোরণ মামলায় গ্রেফতারির আশঙ্কা রয়েছে তাঁদেরও। তৃণমূলের ভগবানপুর-২ ব্লক সভাপতি অম্বিকেশ মান্না অবশ্য বলছেন, ‘‘দেওয়াল লিখন হয়ে গিয়েছে। কমবেশি প্রচার চলছে। এলাকাবাসী তো সত্যিটা জানেন। বিজেপির চক্রান্তের প্রতিবাদ তাঁরা ভোটেই জানাবেন।’’