জাতীয় নির্বাচন কমিশন। — ফাইল চিত্র।
অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোট পরিচালনার প্রাথমিক দায়িত্ব রাজ্য প্রশাসনিক কর্তাদের উপরেই ছেড়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। বিশেষ ভাবে ‘দায়বদ্ধ’ করা হয়েছে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের। শান্তিপূর্ণ ভোট পরিচালনায় জেলা প্রশাসন কী পরিকল্পনা করবে, এ বার তা-ও লিখিত ভাবে জানতে চাইল কমিশন। তাদের এই পদক্ষেপকে ‘বিরল’ বলেই মনে করছে প্রশাসনিক মহল। অভিজ্ঞ অফিসারদের মতে, এমন পদক্ষেপ কমিশন সাম্প্রতিক কালে অন্তত করেনি।
সূত্রের দাবি, জেলাশাসকদের কমিশন চিঠি পাঠিয়ে বলেছে যে সুষ্ঠু এবং অবাধ ভোট পরিচালনা করতে তাঁরা সম্ভাব্য পদক্ষেপ এক পাতার মধ্যে সারাংশ আকারে লিখে পাঠাতে হবে। এর পাশাপাশি নিজেদের আওতাধীন এলাকায় ভোটের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে তাঁরা কী পদক্ষেপ করেছেন তা-ও জানাতে বলেছে কমিশন। এ দিনই সেই উত্তর জেলাশাসকেরা দিল্লির নির্বাচন সদনে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে খবর।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের বক্তব্য, কমিশনের ফুল বেঞ্চের সামনে রাজ্য প্রশাসনের একাংশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও সরব ছিলেন তাঁরা। তার পরেই জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের কড়া কথায় সতর্ক করেছিল কমিশন। সেই হুঁশিয়ারি প্রশাসনের কর্তারা গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেছেন কি না এবং নিজের কাজের প্রতি তাঁরা দায়বদ্ধ কি না, তা ওই সারাংশ থেকে বুঝতে চাইছেন কমিশনের কর্তারা। যদিও সে ব্যাপারে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের কড়া ভাবে সতর্ক করেছিল কমিশন। এ বার এক পাতার লিখিত প্রস্তাবের দেখে কমিশন বুঝতে চাইবে, নির্বাচন সদনের বার্তা সংশ্লিষ্টরা কতটা গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেছেন এবং সুষ্ঠু ভোট করাতে তাঁরা কতটা আন্তরিক। সেই মতো আগামী দিনে পদক্ষেপ করতে পারে কমিশন। পদক্ষেপে খামতি থাকলে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক বা এসপি-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারে তারা।
প্রসঙ্গত, রাজ্য এসে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেছিলেন, ‘‘প্রশাসনে ঊর্ধ্বতন, মাঝামাঝি, নীচুতলার অথবা জুনিয়র অফিসারদের দলীয় আনুগত্যের মানসিকতা (পার্টিজ়ান অ্যাটিটিউড) বরদাস্ত করা হবে না। ভোটে নিরপেক্ষ পরিস্থিতি (লেভেল প্লেইং ফিল্ড) প্রস্তুত করতে হবে জেলাশাসক, পুলিশ সুপারদেরই। তাঁরা করলে ভাল, না করলে আমরা তা করাব। দায়বদ্ধ করা হবে সংশ্লিষ্টদের।’’
গত ৫ জানুয়ারি থেকে প্রতি সপ্তাহের আইনশৃঙ্খলা তথ্য কমিশনকে পাঠাতে হচ্ছে জেলাশাসকদের। ভোট ঘোষণার পরে প্রতি দিনের (সকাল ছ’টা থেকে সন্ধ্যা ছ’টা) তথ্য পাঠাতে হবে। কমিশন সূত্রের খবর, রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রে সমসংখ্যক করে সাধারণ, পুলিশ এবং আর্থিক পর্যবেক্ষক নিযুক্ত হবেন। ভোট ঘোষণা হওয়ার পরেই চলে আসবেন আর্থিক পর্যবেক্ষকেরা। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনের আগেই চলে আসবেন সাধারণ এবং পুলিশ পর্যবেক্ষকেরা। এর পাশাপাশি, এক জন করে বিশেষ সাধারণ এবং পুলিশ পর্যবেক্ষক গোটা রাজ্যের দায়িত্বে থাকবেন।
কমিশন কর্তাদের সামনে প্রায় ১৭ লক্ষ অন্যায্য ভোটারের কথা বলেছিল বিজেপি। সূত্রের দাবি, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে সংখ্যাটা এতটা নয়।