—ফাইল চিত্র।
সিএএ (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন) কার্যকর করার পিছনে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরেরও কিছু অবদান রয়েছে বলে কিছুদিন ধরেই দাবি করে আসছেন স্থানীয় বিজেপি নেতাদের একাংশ। সেই দাবিকে নস্যাৎ করে দিলেন বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার। তিনি ওই আইন কার্যকর হওয়ার জন্য কৃতিত্ব শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেই দিয়েছেন।
রবিবার গোপালনগরের পাল্লায় সিএএ-র সমর্থনে মিছিল করে স্বপন বলেন, ‘‘সিএএ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পর এখন অনেকেই এর কৃতিত্ব নিতে চাইছেন। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, সিএএ-এর কৃতিত্ব পুরোটাই প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। আমরা আর কাউকে কৃতিত্ব দিতে রাজি নই।’’
কেন্দ্র সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি জারি করায় এ রাজ্যের, বিশেষ করে বনগাঁর অনেক মতুয়াভক্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পাশাপাশি কৃতিত্ব দিচ্ছেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনুকেও। ইতিমধ্যে ঠাকুরনগরে মতুয়াদের ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে শান্তনুকে মালা পরিয়ে, মিষ্টি খাইয়ে সংবর্ধনা দিয়ে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানিয়ে এসেছেন তাঁরা।
এই আবহে রবিবারের মিছিলে স্বপন সাংসদ শান্তনুর নাম না করে ওই দাবি করেন। নরেন্দ্র মোদী ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে এবং ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের আগে এ রাজ্যে এসে মতুয়া উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওযার আশ্বাস দিয়েছিলেন। সে কথা স্মরণ করিয়ে স্বপনের প্রশ্ন, ‘‘এখন যাঁরা কৃতিত্ব নিতে চাইছেন, তাঁরা সে দিন কোথায় ছিলেন? পরে শান্তনু ঠাকুর ছাড়াও আমি, বিধায়ক অসীম সরকার-সহ বিজেপির কয়েকজন নেতাও এ বিষয়ে সুপারিশ করি। ফলে, আইন কার্যকর হওয়ার পিছনে এ রাজ্যের কারও একার কৃতিত্ব নেই।’’
লোকসভা ভোটের মুখে তাঁর গলায় কিঞ্চিত ভিন্ন সুর শুনে অনেকেই মনে করছেন, গেরুয়া শিবিরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে এখনও লাগাম পরেনি।
শান্তনু এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে, বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, ‘‘সিএএ কার্যকর করার জন্য অবশ্যই সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। পাশাপাশি, শান্তনু ঠাকুরের অবদানও ভোলা যাবে না। তাঁরও কৃতিত্ব রয়েছে। স্বপন যা বলেছেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। বনগাঁয় বিজেপির মধ্যে কোনও কোন্দল নেই। সকলেই বিজেপির হয়ে প্রচারে নেমে পড়েছেন।’’
বিজেপির অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, স্বপনের সঙ্গে শান্তনুর ইদানীং দূরত্ব বেড়েছে অনেকটাই। দু'জনকে একসঙ্গে দলীয় কর্মসূচিতে কার্যত দেখা যায় না। গত বছর দুর্গাপুজোর আগে-পরে স্বপন-সহ বিজেপির কয়েকজন বিধায়ক নেতা দলের উদ্বাস্তু সেলের ব্যানারে পৃথক কর্মসূচি পালন করেছেন শান্তনুকে বাদ দিয়ে। প্রার্থী ঘোষণার পরও স্বপন-সহ কয়েকজন নেতা বিধায়ককে এখনও শান্তনুর সঙ্গে প্রচারে দেখা মিলছে না। সূত্রের খবর, এ বিষয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও সম্প্রতি হস্তক্ষেপ করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল কোর কমিটির আহ্বায়ক তথা রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘আইন হওয়ার পর সিএএ কার্য়কর হতেই পাঁচ বছর সময় লাগল। তেমনই সিএএ প্রয়োগ হতে আরও ৫০ বছর সময় লাগবে। শান্তনু ঠাকুরের জমিদারি মনোভাবের কারণে কেবল বিজেপির বিধায়কেরা নন, বনগাঁ সাধারণ মানুষও তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।’’