ভাতারে প্রচারে দিলীপ ঘোষ। ছবি: সুদিন মণ্ডল।
প্রথম দু’দফায় তুলনামূলক কম ভোট পড়েছিল রাজ্যে। সেই কারণে ভোটারদের বাড়ি থেকে বার করে আনা ও বুথ আগলাতে ‘পঞ্চপাণ্ডবের’ উপর ভরসা রাখছেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। ভোট-লুট রুখতে পঞ্চপাণ্ডদের বিশেষ প্রশিক্ষণও দিচ্ছে ‘টিম দিলীপ’।
বিজেপি সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভায় ২০৩৮টি বুথ রয়েছে। দলীয় স্তরে বৈঠকের পরেই বিজেপি প্রার্থী বোঝেন, অন্তত ৩০% বুথে আক্ষরিক অর্থে কোনও কমিটি নেই। সপ্তাহ দুয়েক আগে রাজ্য বিজেপির পুরনো নেতারা ওই লোকসভার সাতটি বিধানসভা পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁদের রিপোর্ট বলছে দুই দুর্গাপুর, গলসি, ভাতার, মন্তেশ্বরের একাংশ ছাড়া দলের দেওয়াল লেখার মতো সংগঠন নেই। এর পরেই দুই চব্বিশ পরগণা, মেদিনীপুর-সহ আরও কয়েকটি জায়গা থেকে বিজেপি ও সঙ্ঘের কর্মীদের এনে ‘টিম’ গঠন করে বুথ সভাপতিদের সঙ্গে তাঁরা সরাসরি যোগাযোগ শুরু করেন। অনেক বুথ সভাপতিকে সরিয়ে নতুন বুথ সভাপতিকে তুলে নিয়ে আসা হয়।
বিজেপি সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি বুথকে ‘টিম দিলীপ’ তিনটি পর্যায়ে ভাগ করছে— ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। যে সব বুথে গত লোকসভা ও বিধানসভায় বিজেপি ভাল ফল করেছিল, সেই সব বুথকে ‘এ’, যে সব বুথে লোকসভায় জিতেছিল কিন্তু বিধানসভায় হেরেছিল সেগুলিকে ‘বি’, আর দু’টি ভোটেই হেরে যাওয়া বুথকে ‘সি’ পর্যায়ে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়াও যে সব বুথে বিজেপির ফল খুব খারাপ হয়েছে, সেখানে যতটা সম্ভব ভোট বাড়ানোয় জোর দিয়েছে বিজেপি। ভাতার-মন্তেশ্বরে সংখ্যালঘু যুবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিভিন্ন কর্মিসভায় দিলীপ বলছেন, “যে সব বুথ ‘এ’ পর্যায়ে রয়েছে, সেখানে অন্তত ১০% ভোট বাড়াতে হবে। ‘বি’ ও ‘সি’ পর্যায়ে থাকা বুথগুলিকে উন্নীত করার উপর বেশি জোর দিতে হবে।” এখানেই কাজ করবে পঞ্চপাণ্ডব।
সংগঠন সূত্রে জানা যায়, বাড়ি থেকে ভোটারদের বুথ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব থাকে বিজেপির পৃষ্ঠপ্রমুখদের উপরে। কিন্তু যেখানে বুথ সংগঠন নড়বড়ে, সেখানে পৃষ্ঠপ্রমুখ পাওয়া অসম্ভব। সেই কারণেই প্রতি বুথে পাঁছ জনকে নিয়ে গড়া হয়েছে ‘পঞ্চপাণ্ডব’ কমিটি। এঁদের হাতে স্মার্ট ফোন থাকবে, সমাজমাধ্যম ব্যবহারে পটু হবেন, ডাকাবুকোও হতে হবে। দিলীপের মনোনয়নে হাজির থাকা রাজ্য বিজেপির পুরনো এক নেতার কথায়, “কোনও অবস্থাতেই যাঁরা বুথ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন না, এমন কর্মীদের নিয়ে পঞ্চপাণ্ডব গড়া হচ্ছে। অন্তত এক জন মহিলাকে রাখার চেষ্টা চলছে।” বিজেপি সূত্রে জানা যায়, ভোটের দিন এই কমিটি বুথ সামলানো, প্রশাসন, কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। ভোটারদের বুথ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও তদ্বির করবেন।
বিজেপির দাবি, তৃণমূল যাতে ‘ভুয়ো’ ভোটারদের বুথে নিয়ে না যেতে পারে তা দেখতে ভোটার তালিকা স্ক্রুটিনি করা হবে। ‘মৃত’ এবং ‘স্থানান্তরিত’ ভোটারের নামে কেউকে দেখা গেলে প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে চ্যালেঞ্জ করা এবং বয়স্ক ভোটারদের ক্ষেত্রে বাড়িতে গিয়ে ভোটগ্রহণে নজর রাখতে হবে। ভোটারদের বুথমুখী করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়লে কী করণীয় তারও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে পঞ্চপাণ্ডবদের।