দিলীপ ঘোষ। —ফাইল ছবি।
এ বারের লোকসভা নির্বাচনে দলের আসন সংখ্যা গত বারের থেকে ৬টি কমে ১২টি হয়ে যাওয়া এবং অধিকাংশ ‘তারকা-প্রার্থীর’ ভরাডুবির পরেই ক্ষোভ ও আত্মসমালোচনার সুর শোনা যাচ্ছে বঙ্গ বিজেপির বহু নেতার মুখেই। এই সূত্রেই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বৃহস্পতিবার বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে ১,৩৭,৯৮১ ভোটে পরাজিত হওয়া নিয়ে ‘চক্রান্ত-তত্ত্ব’ সামনে আনলেন। সেই সঙ্গে একটি ‘পোস্ট’ করে উস্কে দিয়েছেন দলের আদি-নব্য কর্মীদের প্রসঙ্গও।
দিলীপ এ দিন দলের ‘আক্রান্ত’ নেতা-কর্মীদের জন্য মাহেশ্বরী ভবনের আশ্রয় শিবিরে যান। দলের সাবেক রাজ্য দফতর মুরলীধর সেন লেনে আক্রান্ত ও ঘরছাড়া কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতেও যান তিনি। সেখানেই মেদিনীপুর থেকে বর্ধমান-দুর্গাপুরে লড়তে পাঠানো নিয়ে দৃশ্যত ক্ষুব্ধ দিলীপ ‘চক্রান্ত-তত্ত্ব’ সামনে এনে বলেছেন, “রাজনীতিতে সবই সম্ভব।” সেই সঙ্গে এ-ও দাবি করেছেন, “প্রার্থিতালিকা তৈরির আগে আমাকে দল কিছু জিজ্ঞাসা করেনি। যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁরা এর কারণ ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। ওখানে (মেদিনীপুর) সংগঠন তৈরি ছিল। তার পরেও কেন সরানো হল, সেটা খতিয়ে দেখা উচিত।” মেদিনীপুর থেকে প্রার্থী হলে তিনি এক লক্ষ ভোটে জিততেন বলেও দাবি করেছেন দিলীপ। সেই সঙ্গে তাঁর সভাপতিত্বে দল ২০১৯-এ যে ১৮টি আসন পেয়েছিল, সেটা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ বলেছেন, “দলকে ভাবতে হবে কেন দলের সংগঠন বসে গেল? যে ভাবে দল এগোচ্ছিল তা কেন থেমে গেল?” নির্বাচনে সংগঠনের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কাউকে ‘নম্বর’ দিতে না চাইলেও দিলীপের বক্তব্য, “এটুকু জানি, আমি ‘ফেল’ করেছি।”
এমন মন্তব্যের আগে এ দিন সকালে এক্স হ্যান্ড্লে দিলীপ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর একটি উক্তি পোস্ট করে আদি-নব্য কর্মীদের ‘গুরুত্বের’ বিষয়েও ইঙ্গিত দিয়েছেন। ওই পোস্টে অটলবিহারীর উক্তি হিসেবে লেখা, ‘আমার একটা কথা মাথায় রেখো, দলের পুরনো এক জন কর্মীকেও ভাঙতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে নতুন কার্যকর্তাদের ১০ জন আলাদা হয়ে যাক। কারণ পুরনো কার্যকর্তারাই আমাদের বিজয়ের ‘গ্যারান্টি’। খুব দ্রুত নতুন কার্যকর্তাদের উপর ভরসা করা উচিত নয়।’ অটলের এই উক্তিকে ‘সময়োপযোগী’ বলেও দাবি করেছেন দিলীপ।
সাংগঠনিক প্রসঙ্গ উস্কে দিয়ে বিজেপির রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারও কিছু জায়গায় দলের ‘দুর্বলতার’ কথা মেনে নিয়েছেন। তার পরেই তিনি ২০১৯-এর জয়ী প্রার্থীদের আসন-বদল নিয়ে মুখ খুলেছেন। উদাহরণ টানেন দিলীপেরই। জগন্নাথ বলেছেন, “এক জন সাংসদকে তাঁর জায়গা থেকে বদল করে দেওয়ার ভাল ফল হয়নি। দিলীপ’দার নিজস্ব জায়গা ছিল। সেই জায়গা থেকে সরিয়ে একটা আনকোরা জায়গায় প্রার্থী হয়ে তিনি প্রচারে নামলেন। যতই তিনি রাজ্য সভাপতি থাকুন, রাজ্য সভাপতি হিসেবে ক’টা জায়গায় যাওয়া যায়।”
রাজ্যে বিজেপিকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার কারিগর দিলীপ ঘোষ, এমন ‘শংসাপত্র’ দিয়ে শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “তাঁকে কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের নেতারা মূল্যায়ন করতে পারেননি। তিনি আমাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন। কিন্তু তিনি এক জন বিচক্ষণ ব্যক্তি।” যদিও, দিলীপের কেন্দ্র-বদল প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্তের মন্তব্য, “কে কোথায় প্রার্থী হবেন, সেটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বা সংসদীয় দল ঠিক করে। এগুলো ঠিক করার আমরা কেউ না।”