—প্রতীকী চিত্র।
শহর সঙ্গে আছে। কিন্তু গ্রাম সে ভাবে নেই। সে ২০১৯-এর লোকসভা ভোট হোক বা ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন— ফলাফল দেখে তেমনই ধারণা করা যায়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এ বার তাই গ্রামীণ এলাকায় প্রচারে জোর দিয়ে বাজিমাত করার চেষ্টায় নেমেছেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ। তৃণমূল নেতৃত্বের যদিও দাবি, শহর হোক বা গ্রাম, বিজেপি কোথাও হালে পানি পাবে না।
গত লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে মাত্র ২,৪৩৯ ভোটে জয়ী হন বিজেপির সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। মোট সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে দুর্গাপুর পূর্ব থেকে ২৬,৫৯১, দুর্গাপুর পশ্চিম থেকে ৪৯,৫১১ এবং সংলগ্ন গলসি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রায় ১০ হাজারের লিড পেয়েছিল বিজেপি। ভাতার, বর্ধমান উত্তর, বর্ধমান দক্ষিণ ও মন্তেশ্বরের মতো কেন্দ্রগুলিতে বিপুল ভোটে পিছিয়ে ছিল বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনে দেখা যায়, দুর্গাপুর পশ্চিম (পুরোটাই শহুরে এলাকা) বাদে বাকি ছ’টি কেন্দ্রেই জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থীরা।
এ বার লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দিলীপের নাম ঘোষণার পরে এখনও পর্যন্ত তিনি মূলত বর্ধমানের দিক থেকে কর্মসূচি শুরু করেছেন। পরে দুর্গাপুরে আসেন। দেখা যাচ্ছে, দুর্গাপুর শহরের তুলনায় গ্রামীণ এলাকাতেই প্রচারে জোর দিচ্ছেন তিনি। এর পিছনে যে নির্দিষ্ট অঙ্ক রয়েছে, তা জানিয়েছেন দিলীপ নিজেই। কারণ, দুর্গাপুর থেকে প্রায় ৭৬ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েও মাত্র হাজার দুয়েক ভোটে জিতেছিলেন সুরেন্দ্র। দিলীপ বলেন, “আমার কাছে হিসাব পরিষ্কার আছে। অহলুওয়ালিয়া মাত্র ১৫ দিন সময় পেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্গাপুরের লোককে আমি ধন্যবাদ জানাব, তাঁরা গ্রামীণ এলাকার সেই শূন্যস্থান পূরণ করে তাঁকে জিতিয়েছিলেন। সে জন্য আমি ও দিক থেকে শুরু করেছি। এটা (দুর্গাপুর) তো আমাদের গড় আছেই।” তাঁর দাবি, তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে আরএসএসের প্রচারক হিসেবে দুর্গাপুরে কাজ করেছেন। এখানকার অলি-গলি সব জানেন। এখানে মানুষ তাঁর সঙ্গে আছেন।
তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, “বিজেপি প্রার্থী অলীক স্বপ্ন দেখছেন। কীর্তি আজাদের কর্মসূচিতে ভিড় দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, দুর্গাপুরের মানুষ কার সঙ্গে আছেন।” যদিও দিলীপ অভিযোগ করেন, গ্রামীণ এলাকার বহু জায়গায় গত পাঁচ বছর ধরে বিজেপিকে কোনও কর্মসূচি করতে দেওয়া হয়নি। তিনি যাবেন বলে মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দিলীপ বলেন, “ভাতার, মন্তেশ্বরের মতো জায়গায় মারপিট হচ্ছে। দেওয়াল লিখতে দিচ্ছে না। আমি ঢাক-ঢোল নিয়ে ওখানকার গ্রামে গ্রামে যাচ্ছি। মানুষ বেরিয়ে আসছেন রাস্তায়।”
পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “দুর্গাপুর বিজেপির গড় হলে ২০১৯-এর বিধানসভা ভোটে ওদের সঙ্গে আমাদের দলের ব্যবধান মাত্র ১১ হাজারে নেমে আসত না। দুর্গাপুরের মানুষ লোকসভা নির্বাচনে ভুল করেছিলেন। পরে বুঝেছেন। গ্রামীণ এলাকা বরাবর তৃণমূলের সঙ্গেই আছে। তাই দিলীপ ঘোষের বক্তব্যের কোনও সারবত্তা নেই।”