(বাঁ দিক থেকে) প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতার প্রসঙ্গে আলোচনা ও নানা জল্পনা চলছিল। অপেক্ষায় ছিল সিপিএম। কংগ্রেসের ঘাঁটি মুর্শিদাবাদে আইন অমান্য কর্মসূচি উপলক্ষে বড় জমায়েতে শক্তি প্রদর্শন করে চাপের বার্তাও দিয়েছিল তারা। তার পরেই বাংলায় বামেদের সঙ্গেই কংগ্রেসের আসন-রফার দরজা খুলছে! সব ঠিক থাকলে আজ, বৃহস্পতিবারই বহরমপুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
সূত্রের খবর, বাংলায় বামেদের সঙ্গে আসন-রফার আলোচনা শুরু করা যেতে পারে বলে সঙ্কেত এসেছে এআইসিসি-র তরফে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একা লড়ার কথা ঘোষণা এবং কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের যাবতীয় বার্তা লাগাতার নস্যাৎ করার পরে বাম-কংগ্রেস কথা শুরুর আবহ তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্কেত পাওয়ার পরেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গে মুখোমুখি বসে প্রাথমিক কথাবার্তা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। বহরমপুরে আজ সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেই বৈঠকে যোগ দিতে বহরমপুরে গিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গেও আলোচনায় বসার কথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের। সেলিমের কথায়, ‘‘অধীরবাবু জেলায় আছেন। নিশ্চয়ই সাক্ষাৎ হবে। আসন, অশন-ব্যসন অনেক কিছু নিয়েই কথা হবে!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব শক্তিকে একজোট করতে চেয়ে আমরা কংগ্রেস, আইএসএফ-সহ সকলের সঙ্গে কথা বলব।’’
এই আলোচনা শুরুর আগে আইন অমান্য কর্মসূচিতে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনায় বামেদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন বহরমপুরের সাংসদ ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আইন অমান্য একটা পরিচিত রাজনৈতিক কর্মসূচি। কেউ থানা ভাঙচুর করতে যায়নি, এসপি দফতরে ঢুকে বিক্ষোভ করতে যায়নি। তার পরেও পুলিশ অতি-সক্রিয়তা দেখিয়েছে শাসক দলকে খুশি করতে। যেখানে সক্রিয় হওয়ার দরকার ছিল, সেই সন্দেশখালিতে সব খালি হয়ে যাচ্ছে!’’
মুর্শিদাবাদে বাম কৃষক, ক্ষেতমজুর ও শ্রমিক সংগঠনের আইন অমান্য কর্মসূচিতে মঙ্গলবার পুলিশ লাঠি ও কাঁদানে গ্যাস চালিয়েছিল বলে অভিযোগ। কাঁদানে গ্যাসে অসুস্থ হওয়ার পরে ডোমকলের এক বাম সমর্থক আনারুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর দেহের ময়না তদন্তে বাধা দেওয়া হচ্ছে, পরিবারও বেসুর গাইছে, এই সংক্রান্ত প্রশ্নেও অধীর বলেছেন, ‘‘পুলিশ ভয় দেখাচ্ছে নয়তো প্রলোভন দিচ্ছে। এটাই তো পুলিশের এখন কাজ!’’ আর সেলিম বলেছেন, ‘‘দিল্লিতে কৃষক প্রতিবাদ আটকাতে বিজেপির সরকার যা করছে, এখানে তৃণমূলের সরকারও তা-ই করেছে! দু’দলের পরামর্শদাতারা এক। আমাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সরস্বতী পুজোর আগের দিনও ছুটি ঘোষণা করায় জেলাশাসক, মহকুমা শাসকেরা কেউ দফতরে থাকলেন না আর পুলিশ লাঠি, গ্যাস নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল!’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের দাবি, ‘‘সন্দেশখালি থেকে নজর ঘোরাতে এটা ঘটানো হয়েছে।’’ মৃত আনিরুলের পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে সিপিএম।
লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে কংগ্রেস-সহ গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সঙ্গে আলোচনা ডিসেম্বরেই সারতে চেয়েছিল সিপিএম। কিন্তু তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে বার্তা বিনিময় ও টানাপড়েন চলতে থাকায় সেই আলোচনা আর হয়নি। অপেক্ষার কৌশল নেওয়ার পাশাপাশিই আইন অমান্যকে উপলক্ষ করে মুর্শিদাবাদে বড় জমায়েতের লক্ষ্য নিয়েছিল সিপিএম, সেখানেই হাজির ছিলেন স্বয়ং রাজ্য সম্পাদক সেলিম। এক যাত্রায় বিজেপি-তৃণমূলের পাশাপাশি কংগ্রেসকেও বার্তা দিতে এই কৌশল কাজে লাগিয়েছে সিপিএম। যাতে বোঝানো যায়, অন্তত মালদহ, মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় বাম-কংগ্রেস এক জায়গায় এলে দু’দলের পক্ষেই ফল মিলতে পারে এবং বিজেপি-তৃণমূলের চিন্তা বাড়তে পারে। মালদহ, মুর্শিদাবাদ জেলায় অন্তত একটি করে লোকসভা আসনে লড়াই করা সিপিএমের প্রাথমিক লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই কংগ্রেসের উপরে চাপ বাড়াচ্ছে তারা। প্রদেশ কংগ্রেসের নবগঠিত নির্বাচন কমিটির বৈঠক অবশ্য এখনও হয়নি।