— প্রতীকী চিত্র।
জল মাপার পর্ব শেষ। জোটের আশা ছেড়ে লোকসভা ভোটের প্রচারে ঝড় তুলতে ঝাঁপিয়ে পড়ল বামেরা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর নিজের জেলা মুর্শিদাবাদে সিপিএমের পাখির চোখ মুর্শিদাবাদ আসনটি। কর্মীদের উজ্জীবিত করতে একই দিনে সেই লোকসভা কেন্দ্রে তিন ‘হেভিওয়েট’ বাম নেতা-নেত্রীকে দিয়ে সভা করছে বামেরা। জেলার বাম নেতৃত্ব মনে করছেন, তাতে এক দিকে যেমন এলাকার কর্মী, ভোটারদের কাছে সদর্থক বার্তা দেওয়া যাবে, তেমনই চাপে ফেলা যাবে কংগ্রেস নেতৃত্বকেও।
আনন্দবাজার অনলাইন আগেই লিখেছিল, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বঙ্গ সিপিএম নির্দিষ্ট কিছু আসনে ‘ফোকাস’ সীমাবদ্ধ রাখতে চায়। সিপিএমের যে যে আসনে নজর রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম মুর্শিদাবাদ। যে কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার থেকেই প্রচারের ঝড় তুলতে চায় বামেরা। বৃহস্পতিবারই এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ইসলামপুরে আসবেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। লোচনপুর শিশাপাড়া থেকে হাড়িভাঙা পর্যন্ত পদযাত্রা করবেন সেলিম। ইসলামপুর ১ ব্লকের এই এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছিল সিপিএম। সেই এলাকা দিয়ে সেলিমের পদযাত্রা কর্মীদের চাঙ্গা করবে বলে মনে করছেন জেলা নেতৃত্ব। একই দিনে ডোমকলে ডিওয়াইএফআইয়ের নেতা-কর্মীদের নিয়ে হবে নির্বাচনী কর্মশালা। ভোটের ময়দানে প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে যুবক-যুবতীরা কী ভাবে লড়াই করবেন, সেই ক্লাস নেবেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরী। এ ছাড়াও থাকবেন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহাও। সমাবেশের পর বাম যুবকর্মীদের মহামিছিল ডোমকলে। মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের হরিহরপাড়াতেও কর্মিসভা করবে সিপিএম। সেই সভায় বক্তব্য রাখবেন সেলিম। এর পর হরিহরপাড়াতেও মিছিল।
সূত্রের খবর, কংগ্রেসের কাছে মুর্শিদাবাদ আসনটি দাবি করেছিল সিপিএম। বামেরা এই আসনে প্রার্থী করতে চায় দলের পরিচিত কোনও মুখকে। মুর্শিদাবাদ আসনের বিনিময়ে কংগ্রেসকে অন্য দু’টি আসন ছাড়তে রাজি বামেরা। সেই সঙ্গে বহরমপুর আসনে অধীরকে নিঃশর্ত সমর্থনও। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, কংগ্রেস যে বাংলায় কার হাত ধরবে, তা স্পষ্ট হয়নি। প্রদেশ নেতৃত্বও যেমন আঁধারে, আলিমুদ্দিনেরও তেমন অপেক্ষা করতে করতে আশাভঙ্গ হওয়ার উপক্রম। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হবে না ধরে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে বামেরা। তাই সাম্প্রতিক অতীতে তুলনামূলক ভাল ফল করা মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রকে পাখির চোখ করে কর্মসূচির বন্যা বইয়ে দিতে চাইছে বামেরা।
বামেদের সভা প্রসঙ্গে জেলা কংগ্রেস সূত্রের দাবি, প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী বরাবরই বামেদের সঙ্গে জোটের ব্যাপারে আগ্রহী। কিন্তু কংগ্রেস হাইকমান্ড থেকে এখনও প্রদেশ নেতৃত্বের কাছে বামেদের সঙ্গে জোটবার্তা আসেনি। মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে বামেদের সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া খুব একটা ভাল ভাবে নিচ্ছে না কংগ্রেস শিবির। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে পাল্টা সভা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা কংগ্রেসও।
মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘যে কোনও রাজনৈতিক দলের ভোটের ময়দানে লড়ার অধিকার আছে। সিপিএম তাদের মতো করে প্রস্তুতি নেবে। এখনও তো জোট হয়নি। তাই এ সব প্রশ্ন আসছে কেন?’’ মুর্শিদাবাদ সিপিএমের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদে পঞ্চায়েত ভোট থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে লড়াই করেছে বামেরা। লোকসভা ভোট আসন্ন। তাই রাজনৈতিক প্রস্তুতি চলবে, এতে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেবেন রাজ্য নেতৃত্ব।’’